পোস্টস

উপন্যাস

দ্যা পেপার ম্যারেজ (৩)

২০ জুন ২০২৪

রাজিয়া সুলতানা জেনি

আগের পর্ব

 

 

সুমন এই হোটেলেরই এমপ্লয়ি। বয়স, আমার ধারণা টুয়েন্টি সিক্স সেভেন হবে। কোয়ালিফিকেশান কি, জানি না। তবে এখানে কি পোস্টে কাজ করে, সেটা জানি। দিবা যেদিন আমাকে হোটেলে নিয়ে যায়, সেদিনই ওর সাথে পরিচয়। ওর কাজ? আমার মত মেয়েদের সাথে পরিচয় আর কার হতে পারে?

ইয়েস। ওর কাজ অন্য সব রেড লাইট এরিয়ার পিম্পদের মতোই। ক্লায়েন্ট ডিল করা। তবে একটু সফিস্টেকেটেড ওয়েতে। যেহেতু ফাইফ স্টার হোটেল, তাই কাজটা একটু রিস্কি। ভুল লোককে অ্যাপ্রোচ করলে, ডিজাস্টার।

কেউ যদি সরাসরি জানায়, তাহলে তো সমস্যাই নেই। বাট না জানালে, আই মিন ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটেনা' টাইপ ক্যান্ডিডেটদের জন্যই রাখা হয় সুমন টাইপ ছেলেদের। এদের কাজ হচ্ছে, গেস, করা, এরপরে আলাপ করা অ্যান্ড দেন, সেট করে দেয়া।

ফর্মুলা হচ্ছে, এমায়িক এক চেহারা করে প্রথমে ক্লায়েন্টকে ‘আর কিছু লাগবে স্যার?' জাতীয় প্রশ্ন করে। ক্লায়েন্টের ঘটে বুদ্ধি থাকলে, নিজে থেকেই বুঝে যায়। ইউজুয়ালি নেহাত ফার্স্ট টাইমার ছাড়া, ক্লায়েন্টগুলো বুদ্ধিমানই হয়। এরপরে মুখে কিংবা ইশারায় ক্লায়েন্ট যখন জানান দেয়, সে ইন্টেরেস্টেড, তখন শুরু হয়ে যায় সুমনের পরের স্টেপ।

 

কাজটা কিভাবে করে, সেটা সিওর না। সম্ভবতঃ আমাদের ছবি দেখানো হয়। আমাদের সবারই বিভিন্ন পোজে তোলা ন্যুড ছবি ওর কাছে আছে। কখনো ছবি দেখিয়েই কাজ হয়ে যায়, মেয়ে চুজ করে ফেলে। আবার কখনো কখনো ক্লায়েন্ট তার রিকোয়ারমেন্ট জানায়। আবার কখনো ক্লায়েন্টের সাথে দু সেকেন্ড কথা বলে ক্লায়েন্টের মনের চাহিদা বুঝে ফেলতে হয়। এরপরের কাজটাই বেশী ট্রিকি। ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী সিলেক্ট করা, আমাদের ভেতর থেকে কে ক্লায়েন্টের ডিমান্ড মিট করছে। আর এই কাজটায় সুমন বেশ দক্ষ। প্রায় কখনোই ক্লায়েন্ট কমপ্লেইন করে না।

যাই হোক, বাজে ভাবে বললে, সুমন টাইপ ছেলেদের 'মেয়েদের দালাল' বলা হলেও এখানে কিংবা এধরনের হোটেলের মত পশ হোটেলে, এদেরকে ডাকা হয় 'লিয়াজোঁ অফিসার' বলে।

 

যতটুকু জেনেছি, সুমন এই লাইনে এসেছে বছর দুয়েক হল। এবং এরপর থেকে তরতর করে উপরে উঠছে। ওর সবচেয়ে বড় কোয়ালিটি হচ্ছে, ও চট করে ধরে ফেলে হোটেলে চেক ইন করাদের মধ্যে কে হতে পারে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট। এরপরের কাজেও ও অনেকটাই দক্ষ। ক্লায়েন্ট রাজী হলে পরের কাজটা অবশ্য সোজা এবং অনেকটা গৎবাঁধা। ক্লায়েন্টকে আমাদের ছবি দেখানোর কাজটা সুমনই করে।

পেশাটা বিচ্ছিরি হলেও সুমন মানুষ হিসেবে বেশ ভদ্র। এবং বিশ্বস্ত। অবশ্য ইউসুফ ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দেয়া নেক্সট টু ইম্পসিবল। সেকারণেই হোক আর ওর ইন্টিগ্রিটির হোক, ইউসুফ ভাই অনেকটাই চোখ বন্ধ করে ওকে বিশ্বাস করেন।

ওর আরো একটা গুণ হচ্ছে, আমাদের সাথে বেশ রেসপেক্ট নিয়ে কথা বলে। আমাদের কাজ যত বাজেই হোক, সম্বোধনের সময় আমাদের 'আপনি' করেই বলে। আমরাও 'সুমন ভাই' বলে ডাকি। যারা বয়সে বড়, তাঁরা কেউ কেউ অবশ্য সুমন বলে। তবে সম্পর্কটা রিয়েল প্রফেশনাল রিলেশানশীপ। ইভেন আমাদের টাইপ মেয়েদের দিকে যেমন লোলুপ দৃষ্টিতে ছেলেরা তাকায়, সেভাবেও ও তাকায় না। একসেপ্ট ওয়ান। আমি। আমার দিকে ওর তাকানোটা লোলুপ না, তবে প্রেমের। অন্যরকম দৃষ্টি। আমরা মেয়েরা এই দৃষ্টি বেশ ভালভাবেই চিনি। ‘আই লাইক ইউ’ দৃষ্টি।

সুমন আমার সম্পর্কে ঠিক কতটা জানে, জানি না। তবে আমি যে অ্যাডিক্ট, এটা না জানার কথা না। পড়াশোনা কোথায় করি, কি সাবজেক্ট, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এসব জানতে চাইলে, দিবার কাছে অনায়াসেই জানতে পারবে। এরই মধ্যে দিবার কাছে আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে কি না, সেব্যাপারে আমি সিওর না তবে, আমার গাট ফিলিং হচ্ছে, ও জানে। আমি যে লোনে জর্জরিত এই তথ্যটা ওর অজানা থাকার কথা  না।

যাই হোক, হোটেল স্টাফ, সেই সাথে আমাদের জন্যও এখানে অলিখিত একটা নিয়ম আছে। হোটেলের কোন স্টাফের সাথে যদি আমাদের কোন সম্পর্ক ধরা পড়ে, সাথে সাথে স্যাক। দুজনই। রিলেশানটা ইম্পর্ট্যান্ট না, কাউকে ফেভার করাটা ইম্পর্ট্যান্ট। কারো সাথে সম্পর্কের কারণে হোটেলের স্টাফ যদি কোণ মেয়েকে বেশী কাজ পাইয়ে দেয়, তাহলে বাকী মেয়েরা ডিপ্রাইভড হবে। আর তেমনটা হলে মেয়েরা এই হোটেল ছেড়ে অন্য হোটেলে পাড়ি জমাবে। এটা ইউসুফ ভাই অ্যালাও করতে রাজী না।

তাই, কোন মেয়েকে বেশি বেশি সুযোগ দেয়া, কিংবা কোন মেয়ের কাছে কোন ফেভার নেয়া, এখানে ভেরি রিস্কি। ব্যাপারটা বেশ শক্ত হাতেই হ্যান্ডেল করেন ইউসুফ ভাই। সম্ভবতঃ ইউসুফ ভাইয়ের চরও আছে। এরপরও ইউসুফ ভাইয়ের চোখ এড়িয়ে, কিভাবে যেন আমাকে বেশি বেশি কাজ পাইয়ে দিত সুমন। অবশ্য এটাও হতে পারে, আমাকে ক্লায়েন্টরা বেশি চায়। সত্যি কারণটা জানি না, তবে  আমার গাট ফিলিং বলে, আমি যে প্রায় প্রতিদিনই ক্লায়েন্ট পাই এর একটা কারণ সুমন।

কাজটা আমার প্রতি ‘আই লাইক ইউ’ থেকে করে, না বিনিময়ে কিছু চায়, জানি না। কারণ যা ই হোক, কখনো আমার কাছে কিছু চায়নি। আর এখানে যতদিন আছে, সম্ভবতঃ চাইবেও না। কারণ সুমন ভালমতোই জানে, চাইলে, সেটা হয়তো পাবে, বাট ইউসুফ ভাইয়ের কানে গেলে, শুধু চাকরী  নট না, সম্ভবতঃ এই দুনিয়া থেকেই নট।

সো, লজিক বলে, ও আমাকে ফেভার করে না। তারপরও, কেন যেন সন্দেহটা আমার ভেতরে কাজ করে। ও আজ হোক কাল হোক, ফেভারের রিটার্ন চাইবে। হয়তো এখান থেকে চাকরি ছাড়বার পরে চাইবে। হতে পারে আমি বেশি বেশি ভাবছি, আবার হতে পারে…।

এনিওয়ে, সুমনের ইন্ট্রো এখানেই শেষ। এবার আমার গল্পে ফিরি। দশলাখ লোন এখন বারো বা তেরোতে ঠেকেছে। যত ইনকাম করি, এর অনেকটাই যায় লোন শোধ করতে, আর বেশিটা যায় ড্রাগ কিনতে। ফলে লোন কমছে না। এই যখন অবস্থা তখন একদিন সুমনের ফোন আসল। এবং ফোনটা ক্লায়েন্টের জন্য করেনি। শুধু জানাল,

— দেখা করতে পারবেন? বাইরে?

এরকম ব্যক্তিগত কারণে ফোন এই প্রথম দিল সুমন। মনে মনে হেসেছিলাম। ওর অনুরোধটায় খুব একটা অবাক হইনি। বরং কেমন একটা যুদ্ধ জয়ের আনন্দ হয়েছিল। কেমন ‘আমি ঠিকই ধরেছিলাম’ টাইপ একটা অনুভূতি হল। এটাই রাইটিং অন দ্যা ওয়াল ছিল। এতো হেল্প করছে, একেবারে ফ্রিতে তো করছে না। যাইহোক, কি অফার করতে পারে সেটাও আমার কাছে অনেকটাই এক্সপেক্টেড।

যেহেতু মনে মনে আমি তৈরিই ছিলাম। প্রস্তাবটা দিলেই ‘হ্যাঁ' বলে দেব। এরপরে ওর দায়িত্ব, ইউসুফ ভাইয়ের চোখ এড়িয়ে ব্যাপারটা একজিকিউট করা। ঠিক করলাম, দারুণ একটা রাত উপহার দেব ওকে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্ল্যাটে যাওয়ার প্রস্তাবটা ও কি এখনই দেবে? না কফি হাউজ?

আমার যে অমত নেই, সেটা কি ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে হবে?  যদিও ওর প্রশ্নের উত্তরে ‘পারব' বলাটাই এনাফ, তারপরও ঠিক করলাম, ওকে ইঙ্গিতটা দিয়েই ফেলি। বললাম

— কফি হাউজে কেন? আমার পরিচিত একটা ফ্ল্যাট আছে। যদিও ক্লায়েন্টের বাট চাবি আছে আমার কাছে।

— ফ্ল্যাটে না। কফি হাউজে।

 

উত্তরটা শুনে মনে মনে হাসলাম। লজ্জা? না সাহস পাচ্ছে না? না ইউসুফ ভাইয়ের গোয়েন্দাদের ভয় পাচ্ছে? নাকি ভাবছে, ‘বাইরে দেখা করতে বলেছে’ এই বলে আমি ইউসুফ ভাইকে কমপ্লেইন করতে পারি? কমপ্লেইন যে করব না, সেটা কি স্পষ্ট করে জানাবো? আইডিয়াটা বাদ দিলাম। সামনাসামনি দেখা হোক। তখন প্ল্যান চক আউট করা যাবে।

কফি হাউজের ঠিকানা মুখে বলল। কিছুটা অবাক হলাম। ঢাকায় আমার হোস্টেল এবং ইউনিভার্সিটি, গুলশানের আশেপাশে। আর এসকর্টের কাজটা উত্তরার দিকে। কিন্তু সুমন যে ঠিকানাটা বলল, সেটা ধানমন্ডিতে। প্রথমটায় একটু অবাক লাগলেও, আইডিয়াটা রিজনেবল মনে হল। ইউসুফ ভাই যেন না জানতে পারে, তাই এই ভেনু চুজ করেছে সুমন। কারণটা আন্দাজ করলেও মুখে কিছু বললাম না। শুধু জানালাম, 'আসব'।

আমি ঠিক সময়েই পৌঁছে গেলাম। সুমন আগেই এসেছিল। দেখলাম এক কাপ কফি সামনে নিয়ে বসে আছে। বেশ টেনসড মনে হল। হওয়ারই কথা। ধরা পড়লে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে।

ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বসলাম ওর সামনে। ওর কথা ভেবেই বোরকা পড়ে এসেছিলাম। একেবারে টেবিলের সামনে এসে বোরকার পর্দা উঠালাম। স্মাইল দিলাম। ভেবেছিলাম রিটার্ন স্মাইল দেবে। কিছু খাবো কি না জানতে চাইবে। তেমন কিছুই ঘটল না। আমার দিকে তাকিয়ে বসত ইশারা করল শুধু। ওর চোখ বলছে, সামথিং সিরিয়াস হ্যাপেন্ড। এবার কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগল। খুব বিচ্ছিরি কোন অফার? পর্ন মুভিতে অ্যাক্টিং? ওটা করা যাবে না। ভেরি রিস্কি।

আমার ভীত মুখের দিকে তাকিয়ে এবার হাসল সুমন। কিছুটা আশ্বাসের হাসি। এরপরে অফারটা দিল। প্রথমটায় বুঝতে পারলাম না কাজটা কি? নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল প্রশ্নটা।

— মানে?

এবার সুমন বেশ শান্তভাবে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল

— পনেরো দিনের জন্য একজনের সাথে থাকতে হবে। পেমেন্ট ভেরি হাই। পার ডে ওয়ান লাখ। আর সেটাও অ্যাডভান্স। পুরো লোন একসাথে শোধ করে দিতে পারবেন।

মানে আমার অবস্থার পুরোটাই সুমন জানে। সেকারণেই কি এই অফার? জানি না।

তবে অফারের কারণ যা ই হোক না কেন, অফারটা দারুণ। আমার প্রথম রিয়াকশান হওয়া উচিৎ ছিল, এই চক্র থেকে বেরোবার এমন সুযোগ আমি আর কখনোই পাব না। কিন্তু তেমনটা হল না। মাথায় কেন যেন এই মুহূর্তে আমার অন্য কথাটাই ঘুরছে।

কথাটা প্রায় জিজ্ঞেসই করে ফেলে ছিলাম, ‘অন্য কাউকে না দিয়ে অফারটা আমাকে কেন দিচ্ছেন?’। করলাম না। পরে সুযোগ পেলে করা যাবে। ব্রেইন এখন একটাই কথা বলছে, 'এই সুযোগটা নিতেই হবে'।

তবে অফারটায় এতোটাই হতভম্ব হয়ে যাই যে থ্যাংকস না দিয়ে, অন্য কোন ক্লায়েন্টের অফার দিলে ইউজুয়ালি যে প্রশ্নটা করি, রোবটের মত সেই প্রশ্নটাই করলাম

— অন্য কোথাও থাকতে হবে?

মাথা নড করতে করতে উত্তর দিল সুমন

— সম্ভবতঃ।

 

প্রথমেই মাথায় যে চিন্তাটা আসল, তা হচ্ছে, পড়াশোনার কি হবে। লেখাপড়ার যা অবস্থা, এই সেমিস্টার হয়তো এমনিতেও পার করতে পারতাম না। আর এই কাজ নিলে, যদি দিন পনেরো বাইরে থাকতে হয়, তাহলে… সেমিস্টারটারের বারোটা বাজা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে কোর্সগুলো আবার নিতে হবে। সেসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আগে দরকার এই সুযোগটা কাজে লাগানো। হ্যাঁ বলতে যাব, এমন সময় সুমন আবার বলল

— ক্লায়েন্টটা আমার না। আমার এক বন্ধুর।

এবার কেন যেন ভয় পেয়ে গেলাম। এখানে, ইউসুফ ভাইয়ের আন্ডারে একটা ব্যাপার অন্ততঃ নিশ্চিত ছিল, ডিটেইল আগে থেকেই জানতে পারতাম। টর্চার করা পার্টি কি না, অন্য কিছু চায় কি না, সব আগে থেকেই আমরা জানতাম। কোনরকমে শুধু বললাম

— সমস্যা হবে না তো?

দুদিকে মাথা নেড়ে ‘না' সূচক ইঙ্গিত করে বলল

— জানি না।

কেমন একতা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে। ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলাম

— আপনার রিপোর্ট কি বলে? সেইফ?

এবার সুমন গম্ভীরমুখে নড করে 'হ্যাঁ' বোঝাল। আর মুখে বলল

— যে বন্ধুর ক্লায়েন্ট, সে জানিয়েছে ক্লায়েন্ট বেশ ভাল। প্রতি বছরই সাপ্লাই দিতে হয়। আগে যে কবার ও সাপ্লাই দিয়েছিল, কোনবারই কোন কমপ্লেইন হয়নি। যে মেয়েটাকে সাপ্লাই করত, ওকেই আবার দিত, বাট কিছুদিন আগে মেয়েটার বিয়ে  হয়ে যায়। আর বিয়ের পরে আর ওর ওখানে কাজ করে না।

— আপনার ফ্রেন্ডের কাছে আর কোন মেয়ে নেই?

— আছে, তবে ভদ্রলোকের যেমন চাই, তেমন মেয়ে নেই।

— কেমন চাই?

— উনার কিছু ডিমান্ড আছে। ভালো ফ্যামিলির, কালচার্ড।

— কেন?

— আসলে ভদ্রলোকের সাথে আমার সরাসরি কথা হয়নি। আপনি রাজী হলে কথা বলব।

 

বুঝলাম, ইট ক্যান বি এনিথিং। এখানেই, কোন হোটেলে রেখে এঞ্জয় করবে, নয়তো কোন রিসোর্টে। বাইরে যাওয়ার রিস্ক হচ্ছে, টর্চার করলে বাঁচাবার কেউ নেই। ইউসুফ ভাইয়ের ক্লায়েন্ট হলে টর্চারের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। বাট এটা বাইরের ক্লায়েন্ট। রিস্ক থাকছে। তবে ‘ভালো ফ্যামিলির, আর কালচার্ড মেয়ে' যখন চেয়েছে, আর আগেরবার কোন কমপ্লেইন যেহেতু হয়নি… রিস্কটা বোধহয় নেয়া যায়।

তাছাড়া, সুমনের কথা শুনে মনে হল, ওর লম্বা কোন প্ল্যান আছে। আমাকে নিয়ে। মনে মনে যখন এই সব ভাবছি তখন সুমন কথাটা বলল

— কাজটা পেতে হলে আপনাকে কিন্তু ড্রাগ ছাড়তে হবে।

কথাটা শুনে কেমন থমকে গেলাম। ব্যাপারটা আগে ভাবিনি। আমি ভেবেই নিয়েছি কাজটা পেয়ে গেছি। সুমনের কথাটা শোনার পরে উৎসাহে ভাটা পড়ল। আমি ভালমতোই জানি, ড্রাগ থেকে বেরোতে পারব না। কয়েকবার চেষ্টা করেছি। পারিনি। একবার সর্বোচ্চ একদিন থাকতে পেরেছিলাম। এরপরে শুরু হয়ে যায় সারা শরীরে যন্ত্রণা। অসহ্য কষ্ট। আমার চেহারা দেখেই বোধহয় বুঝে গিয়েছিল কি উত্তর দেব। ‘অসম্ভব' কথাটা বলতে যাব এমন সময় সুমন নিজে থেকেই বলল

— আমি একটা রিহ্যাবে কথা বলেছি। ওরা বলেছে দিন পনেরোর ভেতরে সম্ভব। দশ দিনের ভেতরেই ছুটে যায়। এরপরে ওরা পাঁচদিন ট্রায়ালে রাখে। দেন, ডিসচার্জ।

সুমনের কথাগুলোর মানে বুঝতে কিছুটা সময় লাগল আমার। যা বুঝলাম, এর মানে হচ্ছে, অ্যাডিকশান ছাড়া যে বেশ কষ্টকর, একা পারা যায় না, এই তথ্য সুমন জানে। রিহ্যাব যে এর একমাত্র সলিউশান, এটাও ওর অজানা না। আর তাই, এর মধ্যে ও ড্রাগ অ্যাডিক্টদের চিকিৎসা হয় এমন একটা রিহ্যাবের সাথে কথা বলে, ওখানে আমার পনের দিন থাকার অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছে। কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম

— রিহ্যাব?

— ইয়েস। কালকেই অ্যাডমিশান নিতে হবে। আমাদের হাতে সময় একেবারে নেই।

কেমন যেন একটা ভয় কাজ করল। এগুলো সেইফ তো? স্পেশালি মেয়েদের জন্য? সিনেমা টিনেমায় যেমন দেখায়, রাতের বেলা... কথাটা জিজ্ঞেস করতে যাব, এমন সময় সুমন নিজে থেকেই বলল

— এটা সরকারী না, প্রাইভেট। বেশ রেপুটেড। আমার পরিচিত কয়েকজন ওখান থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছে।

— টাকা লাগবে না?

মাথা নড করে বোঝাল লাগবে। প্রশ্নটা সাথে সাথেই মাথায় আসল। টাকাটা আসবে কোথা থেকে? আমার পেমেন্ট থেকে? সে দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু কাজটা যদি না পাই? নিজের অজান্তেই প্রশ্নটা ঠোঁটে এসে গেল

— টাকা তো নেই আমার কাছে।

— ওটা আপনার অ্যাডভান্স থেকে পে করা হবে।

বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম সুমনের দিকে। আমাকে হেল্প করার কারণটা খুঁজলাম। মনে হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি।

সুমন খুব বেশি সময় আমার চোখে চোখ রাখল না। আমার চোখে যে প্রশ্নটা ছিল, সেটা হচ্ছে, এতো মেয়ে থাকতে আমাকে কেন সুযোগটা দিচ্ছেন। সুমন চোখ সরিয়ে ফেলল। আমিও আর জিজ্ঞেস করলাম না। উত্তরটা বোধহয় জানি। মুখে শুধু বললাম

— যদি ডিলটা না পাই?

এবার হেসে ফেলল সুমন। আমার দিকে তাকাল। বলল

— কি আর হবে, বারো লাখের সাথে আরও পঞ্চাশ হাজার লোন যোগ হবে।

কথাটা হেসে বললেও কোথায় যেন একটা অভিযোগ ছিল। ‘কেন আপনারা এইসব চক্রে পড়েন?' টাইপ। একটা হতাশাও ছিল ওর গলায়। এর উত্তর আমার নিজেরও অজানা। বড় করে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস বেরোল। মুখে বললাম

— ওকে। আমি রাজী।

 

চলবে