পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

‘রৌজা’ গীতিকবিতা পর্ব (২৪)

২২ জুন ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

১১৬ 

একবার প্রাসাদ ছেড়ে 

         নেমে এসে দেখ-না 

                  সমৃদ্ধির মালিক! 

আর্তমানুষের মনঃকান্না 

         একবার অনুভব কর-না 

                  কী কারুণিক!। 

 

আকাশে বসবাসের ঘর 

         বুঝে পাবে না মানবেতর, 

রাস্তার পাশে যে জিন্দেগি 

         পুছ তারে জীবন কী 

                  বুঝ তো রাস্তা ঠিক।

একবার প্রাসাদ ছেড়ে 

         নেমে এসে দেখ-না 

                  সমৃদ্ধির মালিক॥ 

 

আসবে না কোনো কাজে 

         প্রতিষ্ঠা করলে যা 

                  তিলে তিলে গড়ে! 

বেরিয়ে পড় পথে হাঁ 

         দেখ কোথায় মানবতা 

                  খাচ্ছে পোকামাকড়ে!।

 

প্রাণের সেবায় পাবে যা 

         রাজমহলে পাবে না তা, 

জীব-জীবনের উপকারে 

         চাও-না একবার মরে 

                  মরণে কী স্বস্তিক।

একবার প্রাসাদ ছেড়ে 

         নেমে এসে দেখ-না 

                  সমৃদ্ধির মালিক॥ 

                  ২২ আশ্বিন, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত 

১১৭ 

আর ভালো লাগছে না বিধি 

         বিদঘুটে জীবন। 

আর দেখতে পারছি নে অবলী 

                  অবলাদের পীড়ন। 

ধর্ষণ—এক হতে একশ 

         বাঁচতে পারছে না শিশু-বৃদ্ধ!

হাজার ধর্ষিতার আর্তনাদে 

                  কাঁদছে শুধু মন। 

আর ভালো লাগছে না বিধি 

         বিদঘুটে জীবন॥ 

 

নিচের বিচারালয় আমি নাহয় 

         বানালাম নড়বড়! 

ওপরে তোমার দণ্ডবিধান বলে 

                  কেন অকার্যকর? 

ভয়ঙ্কর—শাস্তি এত ভয়াল 

         মানুষ কেন মানুষের কাল? 

আদি হতে এপর্যন্ত দেখছি 

                  লুঠেরাদের উত্তরণ।

আর ভালো লাগছে না বিধি 

         বিদঘুটে জীবন॥ 

                  ২৪ আশ্বিন, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত 

১১৮ 

যাত্রী আমি দূরের 

         পথহারা-না-পথহারা। 

জীবনসুষ্ঠু সুরের 

         সবহারা-না-সবহারা। 

জনমদুঃখ নিয়ে 

                  জন্মেছিলাম বলে 

পাইনি হয়তো ধারা—

         পথহারা-না-পথহারা॥ 

 

এটুকু এ জিন্দেগানি 

         ভুলুয়া-ই-ভুলুয়া বাঃ। 

মনে থাকলে মানী 

         সফলতা-ই-সফলতা। 

সরলতার মাঝে 

                  ব্যথা হয়তো আছে 

সত্যের পথে যারা—

         সবহারা-না-সবহারা॥ 

                  ১ কার্তিক, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত 

১১৯ 

আমার জীবনের গল্প 

         যা সাজালে ভালো—অতি অল্প। 

আমার অভিযোগ? না, নেই মোটেও 

                  ধন্য আমি ধন্য 

জিন-ফেরেশতা করনি কোনো, 

         মানুষ বলেই ধন্য বলি আমাকে॥

 

করতে পারতে বিশ্রী কীটপতঙ্গ 

         করনি আমার এত অসুন্দর অঙ্গ,

এই ধনে ধনী মানি সবার থেকে—

         মানুষ বলেই ধন্য বলি আমাকে॥

 

তার ওপরে সূক্ষ্ম 

         দিলে যারে এতটু মস্তিষ্ক। 

মনে হলে? মনের দুঃখ রয় না একটুও 

                  আরও দেখি হাত-পা 

চোখের আলো কী যে তা, 

         আমিই বুঝি এর দাম কতটুকু॥ 

 

কখনো পারি না—পারব না যে 

         ভুলে যাব তোমায় এতটা কষ্টে,

কৃতজ্ঞতার ধারা বহাও এ বুকে—

         মানুষ বলেই ধন্য বলি আমাকে॥

                  ২৯ কার্তিক, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত 

১২০ 

আল্লাহ তুমি বান্দারে 

         এত ভালোবাসলে 

এত তোমার বড় মন! 

         কত বিপদ-আপদ দিয়ে 

                  পরীক্ষা কর—করলে 

         দায়—তোমারে বুঝন॥ 

 

ওই যে তারা ডাকছে তোমে 

         কী নম্রতা দেখা যাচ্ছে নমে!

ভেতরে কার কী বক্রতা 

         তুমিই জানো তবে—

তবু দিচ্ছ নাকি খাওন। 

         আল্লাহ তুমি বান্দারে 

                  এত ভালোবাসলে 

         এত তোমার বড় মন॥ 

 

কারে কে কত ভালোবাসি 

         অন্তরের খবর 

তুমি জানো আমি জানি। 

         জগতে বলে বলুক-না 

                  তারা যদি জানত 

         তুমি হতে না অন্তর্যামী॥ 

 

করলে যারে মনের রাজা 

         ধনের রাজ্যে নাইবা প্রজা! 

এ মন তো দিতে পারতে 

         যারে-তারে—সবারে—

শোকর—বোঝালে যখন। 

         আল্লাহ তুমি বান্দারে 

                  এত ভালোবাসলে 

         এত তোমার বড় মন॥ 

                  ৩০ কার্তিক, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত