১২১
জীবনে একবিন্দু সুখ
উপলব্ধি করতে পারিনি!
তবু আমি সুখে আছি।
সুখ যদিওবা আমাকে
আপন বলেই মানেনি
কী, শান্তিও নেই কাছাকাছি?
তবু আমি সুখে আছি॥
‘সুখচে তবে শান্তি ভালো
জীবন হলো সাদাকালো,
এই আলো এই আঁধার
প্রহর কিছুটা আঁধার বেশি’
তবু আমি সুখে আছি॥
সুখের রাজ্য গড়ে যদি
ভোগী অশান্তির অসুখে!
ওই সুখের সুখ কোথা।
কুঁড়ের ঘরে যদি হয়
আরামের ঘুম নিশ্চিন্তে
বল, এরচে বড় সুখ কোনটা?
ওই সুখের সুখ কোথা॥
‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল
অর্থকড়ি সবকিছুর কূল,
অর্থ ছাড়া জীবন অচল
পুণ্য কামাইয়েও লাগে কড়ি’
তবু আমি সুখে আছি॥
১১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত
১২২
আমি এমনিতেই নিঃস্ব আছি
আরও নিঃস্ব কর ঈশ্বর আমায়।
কে কতটু হাসে বিদ্রূপের হাসি
তা শুধু একবার দেখতে চাই॥
খুশি যারা হবে আমার নিঃস্বতে
হায়, আমি যদি পারতাম দিতে,
এন কিছু তাদের স্মরণীয় করায়।
তা শুধু একবার দেখতে চাই॥
কী মরা মরলাম আপনালিতেই
আপনেরাই দেখি শত্রুবড় সবচে।
ভাই দেখি বন্ধু দেখি সব স্বার্থেই
স্বার্থশেষে কারে দেখি না কাছে॥
উপকার করলে অপকার জানি
বুঝতে চেয়েছিলাম কতটা আমি,
বুঝেছি—জলঢালা বালুচরে পুরাই।
আরও নিঃস্ব কর ঈশ্বর আমায়॥
১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত
১২৩
প্রভু,
যতক্ষণ রাখ দেহে প্রাণ
স্থির রেখো আমার কদম
সকল দুঃখকষ্টে অবিচল।
কভু
দুর্বল করো না মনের জোর
বিপদ-আপদ শত আসুক
আত্মবিশ্বাস রেখো অটল॥
তোমার ওপর যত আস্থা
কোনো
অবস্থাতেই ভেঙো না তা,
নত যদি কর মাথা—করো
তোমার চৌকাঠের তল—
আত্মবিশ্বাস রেখো অটল॥
আমার
এই—এতটু কামনা তবে
না না—পেতে মোটেই না
খাবারও ইচ্ছা না কাত্থেকে।
তোমার
কাছে একটু আবদার তবে
অতটু চাওয়ারও বাঞ্ছা নেই
এটুকু দিকর কর আমাকে॥
তুমি পরীক্ষা করবে—কর
কিন্তু
যতই কর-না দরদ বড়,
সততার দেয়াল ভাঙতে
করো না চাহাতে দুর্বল—
আত্মবিশ্বাস রেখো অটল॥
৯ পৌষ, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত
১২৪
ফেলে সংসারের মোহে
ভুলালে বন্দেগির রাহে
বল, কী দোষ বান্দার?
তবু দোষী মানি নিজেরে
খোদা মাফ করো হে
ক্ষমা কি আছে আমার?।
বায়ান্নটি বছর পার করালে প্রভু
তোমায় এমন করে একবারও
ডাকালে না কভু!
কী হতো জন্ম হতে
মনটা তোমার পদে
ঝুঁকে রাখলে আর—
বল, কী দোষ বান্দার?।
যেই রূপ দেখালে মানুষের
ঘুমের ঘোরেও মনে পড়ের
ভুললেও ভুলতে পারি না!
চিনালে চিনালে জগতের
যেসব ব্যবসা লেনদেনের
জানালে—কাজে আসবে না!।
এখন কি সময় আর জিন্দেগি খুঁজি
জ্ঞান দিলে তো দিলে গো আনি
শেষপ্রান্তে বুঝি!
করি তো করি কতটু
হয় তো হবে একটু
নাহয় তো বেকার—
বল, কী দোষ বান্দার?।
২৪ পৌষ, ১৪২৭—মানামা, আমিরাত
১২৫
‘স্বর্গ’ ‘স্বর্গ’ করে যারা মরছে আর মারছে
প্রভু তুমি বল, স্বর্গ কি তারা পেয়েছে?
‘ধর্ম’ ‘ধর্ম’ করে যত যারা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে
বল, তারা প্রকৃত ধার্মিক হতে পারছে?।
ভালো দেখালে কেউ বোঝা চাই ভালো?
কে জানে কার অন্তরে কত বিষকালো!
বাইরের রূপে সাধুসন্ন্যাসী দেখা যাচ্ছে
বল, তারে কি সাধুমানব বলা যাবে?।
‘ইসলাম’ ‘ইসলাম’ করে যত যারা ছুটছে
বল, কতটুকু ইসলামে তত তারা আছে?
‘কোরান’ ‘কোরান’ বলে উলটোপথে চলছে
তুমি বল, সে কোরান মোটেও বুঝছে?।
যতই-না দেখাবে দেখাও পরিষ্কার পথ
বিপদী ঘুরেফিরে দেখবে শুধুই আপদ!
‘বিপদ’ ‘বিপদ’ করে সুপথ যারা দেখাচ্ছে
বল, তারা আসলেই কি সুপথে আছে?।
যেই ধর্মকে করে দিলে তুমি পরিপূর্ণ কবে
লক্ষ নবিরাসুল ও মহম্মদের শুভাগমনে!
প্রতিষ্ঠিত করেই রাখলে কেয়ামত পর্যন্তে
আবার কোন জিহাদের ডঙ্কা নতুন ঢঙে?।
তোমার কথা যদি হয় তবে ‘না’ ‘না’
আকাশ-পেটুকেরা দুঃসাহস পায় কোথা!
ফেরকা ফেরকায় আর কত ফেরকা বাড়বে?
কেন ওদের ডানহাত ধরছ না তা হলে?।
কুচক্রীর চক্র চক্রহারে কেবল বাড়ালে
‘মার মার’ ‘কাট কাট’ কোথায় ইসলামে?
এভাবে ধর্মপ্রতিষ্ঠা কোথায় তুমি বললে?
দুষ্টের হাতে ধর্মের রশি ছেড়ে রাখলে!।
গাঁট্টিগাঁঠুরে বন্দি করলে ধর্মের সৌন্দর্য
যাযাবরের জিন্দেগিতে কীসের ধর্মৈশ্বর্য?
ধর্মের সৌন্দর্য বিনষ্টে যতসব নামছে
বল হে, চিল্লেটিল্লে এসব কোথা কোরানে?।
‘ধর্মে কিছুই অসুন্দর নেই’ তুমি বললে
তবে গাঁট্টিগুঁট্টি থালাবাসন কোমরে বেঁধে
এ ধর্মের শালীনতা শেখাল কে তাদেরকে?
ধর্ম তোমার তুমি কেন হাসছ পরিহাসে!।
জানি, বিপথ-গুমরাহি করছ যারে তুমি
পথ পাবে না সে সুপথেও আসি জানি!
এটাই ইসলাম থাকি-না যতই ইসলামে
শয়তান তো ধোঁকা দেবে ফেরেশতা সেজে!।
আরও জানি তোমার ভূরি ভূরি আদেশ
জানি না কে কতটু বুঝল সেই উপদেশ!
আমরা তো দেখছি আজ কেবলই বিদ্বেষ
দাবানলসম জ্বলছে হিংসায় দেশবিদেশ!।
কোথাও ধর্মবাদ কোথাও মানবতাবাদ
দোহাইয়ে দুইয়ে করছে শুধু নিজস্বার্থহাত!
নব্যধার্মিক নেমেছে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে
আখেরি দুনিয়া বুঝি এটাকেই বললে?।
শান্তির ছায়াতলে যারা আসতে চাচ্ছে
ভয়ের চোটে তারা ধর্মান্তরিত ভুলছে!
যেন সত্তর হাজার ডিগ্রি আগুন জ্বেলে
তুমি বসে আছ মানবজাহাঁ পুড়তে!।
এতই সহজ করলে কোরানের বাণী
বঙ্কিম বুঝল না তোমার সেই জবানি!
পথপায়িকে কেবল বিপথগামী বানাচ্ছে
বল, তাদের স্থান আছে কোন রৌরবে?।
যেই কথা শোনাতে বললে তা শোনাচ্ছি
যা তুমি ইশারা করলে তা আমি লিখছি!
অনেকে মানলে মানুক আমাকে দোষী
তোমার সৌন্দর্যে দেবে অসুন্দরে খামচি!।
আদেশ করবে তুমি যা ঘুমে ও জাগরণে
পালন করব আমি তা অক্ষরে অক্ষরেই।
তোমার সুন্দরের ধর্ম ও কর্মের রক্ষার্থে
কথাজিহাদের বাণী লিখে যাব আমৃত্যেু॥
১৮ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম