১২৬
হে রব,
তুমি তো জানো মনের খবর সব
আমি আছি কোন মনোরথ;
নিতে পারি তোমার শপথ
তা হলে আমার গলদ?।
হে রব,
আজীবন শুনে আসছি গল্পগপ
মন বলবান তো সব বলবৎ;
আমি হাঁটছি ধরে সেপথ
তা হলে আমার গলদ?।
হে শান্তিকামী,
আমি তো আগুন নিভাতে থামি
তবে আমার জিন্দেগি উত্তপ্ত মরুভূমি!
তবু হয়নি গামী-বিপথ—
তা হলে আমার গলদ?।
বন্ধু হে,
আর কত রাখবে বন্দি নিঃস্বকরে
এবার তবে খুলে দাও-না বন্ধন;
অভাবের দরদ ভুলি কিছুক্ষণ
অভাব দূরি হোক সারাক্ষণ॥
বন্ধু হে,
ফরিয়াদ মাত্র এতটু তোমার কাছে
নিজের জন্য করি না হা-হুতাশন;
হাঁ, তাদের জন্যেই প্রার্থন
অভাব দূরি হোক সারাক্ষণ॥
দ্বন্দ্ববাদের যে,
মনমানসিকতা মন্দ বলে
চার পাশ দোষে দোষী হবে তা হলে?
আর চাই নে তবে কৈফিয়ত—
তা হলে আমার গলদ॥
১৯ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১২৭
প্রভু!
বুঝে আসে না মোটেও
দুনিয়ার এ নিয়মনীতি কিছু,
যে তোমাকে করে না স্মরণ ভুলেও
তারে তুমি কর কত উঁচু!।
তবু!
বোঝার গভীরে নেমেও
পারি নে বুঝতে একটুকিছু,
যে তোমার মালা জপে ঘুমেও
তারে তুমি রাখ এত নিচু!।
না না,
এতেও কোনো অভিযোগ নেই
হাঁ হাঁ,
জানতে বড়ই ইচ্ছে করে,
তোমার রশি ধরে আছে পিছু—
তারে তুমি রাখ এত নিচু!।
মন?
মন আমার হলেও
মনের মালিক হলে মাত্র তুমি,
দুনিয়ার কাছে লুকাতে পারি সবটুকু
তোমার কাছে করব বোকামি!।
ধন?
ধন তোমার—তাতে ভুলেও
অধিকার খাটাতে পারি না আমি,
তুমি যারে খুশি তারে দিয়ে দাও
অসন্তুষ্টি না আমার—না আমি॥
এবার শুনি?
অসুবিধায় আমার মতো না যারা
আরও বেকায়দায়?
বাইরের সৌন্দর্য দেখি আমরা,
অন্তরে পিছে বলে আছে কিছু—
তারে তুমি রাখ এত নিচু॥
২০ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১২৮
ভাগ্যগুণে ভাগ্যদোষে
ঘটছে সকল কিছু!
এই কথাকে মাথায় নিয়ে
আছি ভাগ্যের পিছু।
হা করে সব বসে আছি
ভাগ্যে দেওয়া খাওয়া খাচ্ছি!
কাজকর্ম দরকার কীসের
যেমনে চলে চলুক নিচু।
ভাগ্যগুণে ভাগ্যদোষে
ঘটছে সকল কিছু॥
আরে আরে খাইছি হুঁচোট
অন্ধসেজে হাঁটতে পারি!
দোষ কেন এ আমার হবে
ভাগ্যে দিলো মাথায় বারি।
এটাও ভাগ্য ওটাও ভাগ্যি
দোষ কিছু না আমার আমি!
এই জাতি কি মানুষ হবে
ভাগ্যগানে থাকছি উঁচু।
এই কথাকে মাথায় নিয়ে
আছি ভাগ্যের পিছু॥
২১ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১২৯
কে তুমি আমাকে
জাগালে ঘুমের থেকে
পথিক পথ ভুলে?
এই বাংলার নদীর কূলে।
ছিলাম কী নিদ্রাসুখে
চিন্তার বোঝা বাড়ালে ডেকে
অধম আমি জন্মি ভূতলে
এই বাংলার নদীর কূলে॥
এখানে কত মহাজনেরা
সৃষ্টি করে হলে মহান স্রষ্টা
আমি যেতে পারি দীপ জ্বেলে?
এই বাংলার নদীর কূলে॥
কী ভূত চাপালে বুকে
সরালে আরও বসে চেপে
না, হটবে না সে পিছে
তবু মিনতি করি কী যে।
দূর দূর করে তাড়ালে
যায় কিছুটা দূরে সরে
আপদ দেখি আবার ঘাড়ে
তবু মিনতি করি কী যে॥
ওরে যা—সংসারের যা ক্ষতি
বিরক্ত আর কত হবে বধূটি
মধুটি জড়ালে কী বধূর আঁচলে!
এই বাংলার নদীর কূলে॥
২২ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১৩০
ধন্য মা ধন্য
জন্মেছি এজন্য
তোমার আঁচলে
বঙ্গভূমির কোলে।
পূর্ণ তা পূর্ণ
অপরূপরূপে সম্পূর্ণ
পেয়েছি আলোঝলমলে
বঙ্গভূমির কোলে॥
পুকুরডোবা জলজলজ
নদনদী ও বনবনজ
হাওয়াবাতাস যা বহালে
পুণ্য হাঁ পুণ্য
অনন্য এ ভূতলে
বঙ্গভূমির কোলে।
ধন্য মা ধন্য
জন্মেছি এজন্য
তোমার আঁচলে॥
এ কর্ণফুলী হতে
ও-কর্ণঝরা পর্যন্তে
দেখে দেখে অপূর্বতা
ভরবে না মন ভরবে না।
জনম ও জনমে
হাজারো জনমে
এলে ও গেলে কিবা
ভরবে না মন ভরবে না॥
শ্রেণিবিন্যাস গাছগাছালি
সুশীতল ছায়ানিরালি
শ্যামলিমা শ্যামলে
বর্ণ বাঃ বর্ণ
কী সুবর্ণ মাটি বিছালে
বঙ্গভূমির কোলে।
ধন্য মা ধন্য
জন্মেছি এজন্য
তোমার আঁচলে॥
২৩ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম