পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

শঙ্খবীণা (৪)

১ জুলাই ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

১৬ 

         শরৎ এসেছে 

         সাজিয়ে দিয়েছে 

রাঙিয়ে গিয়েছে নানান ফুলে এ ধরণি। 

         আকাশে ভেসেছে 

         শুভ্রতা হেসেছে 

ফুলে ফুলে গাঁথি চল প্রেমের মালাখানি॥ 

 

         ওগো এস-না

         পাশে বস-না

মনের কথা কই দুজনা, 

         এ সময় আর

         এ রাত পার

পাবে না পাবে না গো তুমি

         খুঁজলেও মশাল জ্বালি, 

ফুরাইয়ে যাবে যখন মধুর এ যামিনী॥ 

 

         কী মনোহরে 

         গিয়েছে ভরে 

তারায় তারায় আসমানের অই উঠান। 

         আমি কী করে 

         বোঝাব তোমারে

তুমি যদি বুঝ না কী চাই আমার প্রাণ॥ 

 

         আমি ব্যথাভরা

         ওগো অধরা

ডালিতে মরা আমার ফুলগুলি, 

         সাজালেও সাজে না 

         গোছালেও গুছে না 

তুমি ছাড়া জুড়ে না এ গীতালি 

         কী করি কী করি, 

তোমার মাঝে যে হারিয়েছে মনের কামিনী॥ 

                  ২ আশ্বিন, ১৪২৮—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

১৭ 

না আমি হিন্দু 

         আমি না মুসলমান 

                  না বৌদ্ধ ইহুদ খ্রিস্টান। 

মানুষের ঘরে জন্ম হয়েছে 

         মানুষেরে যাব ভালোবেসে 

আমার মধ্যে না হোক 

         মানুষ ব্যবধান—

                  না আমি হিন্দু 

আমি না মুসলমান 

         না বৌদ্ধ ইহুদ খ্রিস্টান॥ 

 

মানুষেরই পরিচয়ে 

         থাক আমার পরিচয় 

                  মানবতাই ধর্মের মূল আশয়। 

আমার বিষয় হোক তবে 

         আল্লাহ ঈশ্বর—এক সবে 

মসজিদ মন্দির গির্জা মঠের 

         একই তো শান—

                  না আমি হিন্দু 

আমি না মুসলমান 

         না বৌদ্ধ ইহুদ খ্রিস্টান॥ 

                  ৩ কার্তিক, ১৪২৮—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

১৮ 

প্রভু 

         কী প্রার্থনা করি তোমার দরবারে 

আমি তো জানি না কোনো প্রার্থনা করিবারে। 

         না জানি কোনো ভক্তি 

                  না জানি যাচ্ঞা একরত্তি 

আমি তো অজ্ঞবড় বন্দনা-বন্দেগির কারবারে॥ 

 

তবু 

         ভুলে ভুলে নাহয় করি এবাদত 

মনে করো এটাই বান্দার সঠিক মহব্বত। 

         দিলে দিয়ো প্রসন্নতা তবে 

                  মলিনতা না রেখে যাই ভবে 

আমার সমস্ত কিছুই ঠিক বলে নিয়ো ধরে॥ 

 

কভু 

         তোমে ডাকার মতো ডাকতে পারিনি 

খোঁজার মতো খুঁজলে মিলে—এমন খুঁজিনি 

         বুঝিনি—কে আমে চালাল আড়ালে 

                  স্মরণ তোমার ভুলাল পলেপলে 

জানি—ক্ষমা নেই আমার—ক্ষমা করো আমারে॥ 

                  ১১ কার্তিক, ১৪২৮—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

১৯ 

মহান হে আমার ইসলাম 

         তুমি শোকগাথা মহৎ এক নাম—

                  তোমাকে সালাম। 

তুমি এসেছ সকল মুসলিমের ঘরে 

         রক্তের বন্যায় সাঁতারে 

তোমার রক্ত ঝরার দরদে কাঁদলাম—

         মহান হে আমার ইসলাম 

                  তোমাকে সালাম॥ 

 

কুফা কন্দক ওহুদ বদর প্রান্তরে 

         কমবেশি হয়নি যুদ্ধ শান্তির তরে—

                  নবিরাসুলের রক্ত ঝরে! 

ওরে সত্যের ডাকে কেন তবে 

         মিথ্যেরা বিরোধিতা করবে 

সত্যের পথে এত কেন কাঁটা দেখলাম—

         তুমি শোকগাথা মহৎ এক নাম 

                  তোমাকে সালাম॥ 

                  ২২ কার্তিক, ১৪২৮—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

২০ 

আমি দেখেছি মানুষের মধ্যে মানুষ 

দেখেছি মানুষের মধ্যেই শয়তানের রূপ! 

         আমি মানুষ দেখে দেখে কখনো বেহুঁশ 

কখনো মানবতা দেখে কেঁদে ফেলি নিশ্চুপ॥ 

 

আমার অন্তর এতই দুর্বল—বলহারা 

দরদে রুখতে পারি না অশ্রুধারা 

         কিছু রূপ দেখলে মানুষের 

আকাশ থেকে পড়ি খুব—

আমি মানুষ দেখে দেখে কখনো বেহুঁশ॥ 

 

কী বলি—কী বলব—বলার তো ভাষা নেই আর 

ধোঁকাবাজের রাজ্য এতটাই ভালো হয়! 

         কারে বোঝাব সেই দুঃখের কথা আমার 

কে বুঝবে ধোঁকার মর্মার্থ—বেদনায় বিষময়॥ 

 

‘ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন’ 

পিঠে মারতে ছুরি ভাবে কয়জন

         স্বার্থের বেলায় বোঝা যায় 

আপনালির বেশভূষ—

আমি মানুষ দেখে দেখে কখনো বেহুঁশ॥ 

                  ২৯ চৈত্র, ১৪২৮—মানামা, আমিরাত