Posts

গল্প

ছোট গল্প...... "বৃষ্টি ভেজা রাত'

July 1, 2024

মোঃ বজলুর রশীদ

Original Author মোঃ বজলুর রশীদ

 

জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখার একটা আলাদা মজা আছে। জানালার বাইরের হালকা বাতাস গায়ে এসে লাগে ।শরীর শীতল হয়ে যায়।
সেই সময় হামিদ এসে বলল আর এক ঘন্টা পর ট্রেন ছাড়বে। বৃষ্টি কিছুটা কমেছে ।চলো ,এই সময় বেরিয়ে পড়ি ।

গ্রীষ্মের ছুটিতে ফুফাতো ভাই হামিদকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম মামাবাড়ি ।ছুটি শেষ, কাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাবে  ।

তাই আজ বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। মামা মামীকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম স্টেশনের দিকে।

স্টেশনে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই আবার বৃষ্টি শুরু হল। তাই আমরা তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠে বসে পড়লাম । বৃষ্টির কারণে আজ ট্রেনে বেশি লোকজন নেই ।

কিছুক্ষণ পর ট্রেন ছেড়ে দিল ।আমি আবার ট্রেনের জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখতে শুরু করলাম। বৃষ্টি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে?

ঘুম থেকে উঠে দেখি ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে গেছে। আমরা দুজন ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে এমনিতেই রাস্তায় কম গাড়ি থাকে।

আজ বৃষ্টির কারণে সেই কয়টাও দেখতে পাচ্ছি না । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৯.০০ টা । হামিদ বলল : ভাইয়া কোন গাড়ি তো দেখছি না ।

এখন আমরা কি করব?
তখনই পিছন থেকে একটা লোক এসে আমাকে ডাকলো। আমি চমকে উঠলাম !

আমার দিকে তাকিয়ে বলল: ভাইজান এত রাতে স্টেশনে কি করছেন?এই সময় স্টেশনে থাকা ঠিক না। শুনলাম কয়েকদিন থেকে নাকি স্টেশনে চোর -ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে।

আমার বাড়ির সামনে -আজকের রাতটা না হয় আমার বাড়িতেই থেকে যান।

আমি কোন কথা বললাম না ।শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম ।লোকটা আমাদের পিছনে পিছনে আসতে বলল।

আমি হামিদের হাত ধরে লোকটার পিছন পিছন হাঁটছি। লোকটাকে আমার খুব অদ্ভুত লাগছে এত গরমের মধ্যেও গায়ে চাদর জড়িয়ে রেখেছে।

তার হাতে একটা কালো ছাতা । কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা তার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছলাম।

বাড়িটা বেশ বড়সড়ো তবে অনেক পুরনো বলে মনে হচ্ছে। বাড়ির চারপাশ জঙ্গলের ভর্তি। আশেপাশে আর কোন বাড়ি নেই ।

একেবারে জনমানহীন এলাকা ।আমরা তিনজন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম। বাড়ির ভেতরের দেয়ালগুলোতে মাকড়সার জাল লেগে আছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন যাবত পরিষ্কার করা হয়নি।

আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই বাড়িতে আর কেউ থাকেনা?

লোকটি বলল আগে থাকতেন এখন কেউ থাকেনা মালিক বিদেশে গেছেন এখন এখানে প্রায় কেউ আসে না বললেই চলে।
আমাকে রেখেছে এই বাড়ির দেখাশোনা করার জন্য এরপর তিনি আর কোন কথা বললেন না।

আমাদের নিচতলার একটা ঘরে নিয়ে গেলেন । যাওয়ার সময় বললেন কিছু প্রয়োজন হলে তাকে ডাকতে। ঘরটা বেশ পরিপাটি আসবাবপত্র বলতে আছে একটা খাট আলমারি এবং একটা টেবিল।

ঘরের কোনায় একটা বাথরুম । আমরা হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম ।

ট্রেনে অনেকক্ষণ ঘুমানোর কারণে আমার আর ঘুম আসছে না । কিন্তু হামিদ গভীর ঘুমাচ্ছন্ন ।
হঠাৎ শুনতে পেলাম ঘরের বাইরে কে যেন ফিসফিস করে কথা বলছে।
সম্ভবত কেয়ারটেকার এর কন্ঠ ।

-ওস্তাদ ,ব্যাটারা বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। এত ব্যস্ত হোস না, আরো কিছুক্ষণ যাক তারপর ,ঘুমটা আর একটু গভীরতি দে ।

-জে আচ্ছা ওস্তাদ ।

- ওদের সঙ্গে কি কি আছে?
- দুইটা ব্যাগ আছে কিন্তু ব্যাগের ভেতর কি আছে তা জানিনা।
- আচ্ছা থাক ছুরিটা সাথে আছে?
- জে আছে?
- বেশি চেঁচামেচি করলে খতম করে দিবি কেউ শুনে ফেললে বিপদ ঠিক আছে।

- ঠিক আছে।

এসব কথা শুনে আমার প্রাণটা বেরিয়ে যাবার উপক্রম ।আমি তাড়াতাড়ি হামিদকে ডাকলাম।

- কি হয়েছে এত রাতে ডাকছো কেন?
-চুপ!
আস্তে কথা বল এখন তাড়াতাড়ি উঠে পড়।

- এত রাতে আমরা কোথায় যাব?
- সব পরে বলব এখন উঠ তাড়াতাড়ি।
হামিদ ধরমর করে উঠে পড়ল ।
তার মনে প্রচন্ড ভয় ।

পুরনো বাড়ি তাই জানালার গ্রিল নেই। আমি নিঃশব্দে জানালা খুললাম।
দুজন জানালা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলাম। বৃষ্টিতে রাস্তা সব জায়গায় কাদা জমে আছে ।

ভালো করে হাঁটা যাচ্ছে না । তবুও আমরা চেষ্টা করছি যত সম্ভব জোরে দৌড়ানোর।
দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ হামিদ কাদায় পড়ে গেল।

হয়তো পাটা মচকে গেছে। সামনে কয়েকটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আমরা দুজন কোন রকম একটা বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম।

ঘড়িতে তখন রাত ১.০০ টা। এত রাতে কেউ দরজা খুলবে বলে মনে হচ্ছে না । কিন্তু এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
আমি কয়েকবার কলিং বেল বাজালাম ।
দরজার ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো
কে ?
এত রাতে কে এসেছে?


 

Comments

    Please login to post comment. Login