Posts

বাংলা সাহিত্য

শঙ্খবীণা (৭)

July 4, 2024

আযাহা সুলতান

Original Author আযাহা সুলতান

৩১ 

আমি ভুলিনি—না, ভুলিনি

         আজও মনে পড়ে তোমাকে 

তুমি কেমনি—হাঁ, কেমনি

         সহজে ভুলে গেলে আমাকে! 

                  এতটু কি মনে নেই? 

অবশ্য না থাকার কথাও যে 

         হলে সুখের জিন্দেগি 

সবই ভুলা যায় সহজে—

         আমি ভুলিনি—না, ভুলিনি 

                  আজও মনে পড়ে তোমাকে॥ 

জানতে চাইনি—না, চাইনি

         বাতাসে এনে দেয় খবর তবু 

অনেক সুখে সুখী—তবু অসুখী

         একথা জেনে কে পাবে না দুক্ষু? 

                  তোমার নজরে আমি দোষী 

বিচারে দেখলে না দোষ কার বেশি 

         এটাই ভালো ভাগ্যলিপি 

মন্দইবা রইলাম তোমার কাছে—

         আমি ভুলিনি—না, ভুলিনি 

                  আজও মনে পড়ে তোমাকে॥ 

                  ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯—মানামা, আমিরাত 

৩২ 

আজ তুমি আছ কাল তুমি নেই 

         জীবনের লেনদেন ফুরায় এভাবে। 

বাঁচো তো বাঁচো বাঁচনের মতো 

         মরলেও মরো মরণের মতো, 

জীবনটা কতটু মনে রেখো তবে—

         আজ তুমি আছ কাল তুমি নেই॥ 

শূন্য হাতেই আসতে হয় ধরায় 

         শূন্যই তো যেতে হয় পুনরায়। 

মাঝখানে এই যে কাটে কিছু সময় 

         কাজ কি হয় কাজের মনে হয়? 

ভেবে দেখো একবার গভীরভাবে—

         আজ তুমি আছ কাল তুমি নেই॥ 

                  ৮ ফাল্গুন, ১৪২৯—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৩৩ 

সুস্থতার জিন্দেগি তুমি দিয়েছ প্রভু 

         শোকরিয়া আদায় করছি জীবনভর। 

অসুস্থতার মরণব্যাধি দিয়ো না কভু 

         মৃত্যুও কামনা করছি এমনই সুস্থতর॥ 

যত সমাদর নসিবে লিখলে তুমি 

         মনে হয় তার বেশি পেয়েছি আমি, 

ও-বোঝা হয়ে চাই না কারও অনাদর—

         মৃত্যুও কামনা করছি এমনই সুস্থতর॥ 

গাড়িবাড়ি আরামায়েশ নাইবা দিলে 

         যা সুখ ভোগ করছি ভুলার তো নয়। 

হাওয়াই-যানের গাড়িতে কত চড়ালে 

         দেশবিদেশ ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়॥ 

ভাগ্য আমার মন্দ কখনো বলব না 

         নাফরমান হলেও নাফরমানি করব না, 

না চেয়েও পেয়েছি যা এটাই বড় বর—

         শোকরিয়া আদায় করছি জীবনভর॥ 

                  ৭ চৈত্র, ১৪২৯—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম

৩৪ 

         অনেক করে চেয়েছি তোমারে 

বলি বলিও পারিনি বলতে আর। 

         তুমি বুঝেও ছিলে ভান করে 

আমি বুঝিনি একবারও ছলনা তোমার! 

         ইনিয়েবিনিয়ে কথা যারা বলে 

         আমি কী বুঝি মানুষ তারা ছলে, 

চাতুরীতে থাকে তাদের বিষম কারবার—

আমি বুঝিনি একবারও ছলনা তোমার॥ 

         কী যে অবহেলা করলে আমায় 

আমার মানুষরূপে জন্মটাই বৃথা ভাবি। 

         কবি কবি ভাবেরও পরিহাসটাই 

করতে এতটু সঙ্কোচ করলে না কাভি! 

         আমি তো তোমার জন্যে শিশমহল 

         বানাচ্ছিলাম অতি যতনে পলে পল, 

তুমি তাতে পাথর মেরে করলে চুরমার—

আমি বুঝিনি একবারও ছলনা তোমার॥ 

                  ২১ চৈত্র, ১৪২৯—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম

৩৫ 

চৌত্রিশ চুরাশি রোডে আমি এখনো আছি 
তুমি ছিলে নাকি ছত্রিশ ছাপ্পান্নতে শুনেছি? 
তবে কৃষ্ণানন্দের নীলপ্রাসাদে 
এখন আছ নাকি বেশ সুখেতে, 
কেন বেছে নিলে শুনি? পতিত এ জিন্দেগি—
চৌত্রিশ চুরাশি রোডে আমি এখনো আছি॥ 

এমন করার কথা বল—ভাবলে কী করে 
বল—কী সুখ পেলেই তবে এমন করে? 
সুখের থেকে শান্তি ভালো 
মনে রাখার দরকার ছিল, 
কী করে বলি বল আর বাসি—ভালোবাসি—
চৌত্রিশ চুরাশি রোডে আমি এখনো আছি॥ 

বল—আমাদের মধ্যে এমন কী হলো যে 
অন্ধকারে ঢাকাতে বাধ্য হলে নিজেকে? 
আমার ঠিকানা তুমিই জানো 
মাঝে একটু নাহয় অন্যকোনো, 
এটা ঠিক করলে না বলব মোটেও বেশি—
চৌত্রিশ চুরাশি রোডে আমি এখনো আছি॥ 

অন্তত এই—এতটুকুই তো জানাতে পারতে 
সামনে পা রাখার-কি-বাড়ানোর আগমুহূর্তে? 
আমার নাহয় অভিমান ছিল এত 
তুমি কেন পুড়লে আগুনে জীবন্ত, 
আমাকে দোষী করলে তাতে নেই দুঃখটি—
চৌত্রিশ চুরাশি রোডে আমি এখনো আছি॥ 

ভালো শুধু বেসেছিলাম তোমাকেই রাহি 
তোমাকে ভালোবেসে সব ছেড়ে ভিনগ্রহী! 
তোমার কসমে আবদ্ধ যেই মনটা 
ভাবতে পারে কি আর কোনো রাস্তা, 
তুমি তো বেছে নিতে পারলে অন্যজিন্দেগি—
চৌত্রিশ চুরাশি রোডে আমি এখনো আছি॥ 
                  ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম

Comments

    Please login to post comment. Login