🍂 দেশাত্মবোধ নাকি ভণ্ডামি?

ছোটবেলা থেকে দেখে দেখে বড় হয়েছি; প্রভাত ফেরী, মিছিল/মিটিং, দেয়ালিকা, পতাকা- নিশান, খালি পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে শত ফুলের তোড়া উৎসর্গ করতে, শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে....!!
খুব সম্ভবত আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, জীবনে একবার, কেবল একবারই শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর অবচেতন মনেই আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছিলো!

কেনো এই স্মৃতি স্তম্ভ (শহীদ মিনার) তৈরী হয়েছে?
কেউ যদি উত্তরে বলে- ভাষা শহীদের স্মরণে এই স্তম্ভ গুলো তৈরী করা হয়েছে। তাহলে আমি প্রতিত্তোরে বলবো... যখন আপনার আপনজনের মৃত্যু ঘটে তখন আপনি কি ঠিক একই ভাবে আপনজনদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভ তৈরী করেন? নাকি হৃদয়ের মনিকোঠায় তাদের স্মৃতি গুলোকে অম্লান করে রাখেন?

দ্বিতীয় প্রশ্ন জেগেছিল: ইট,রড, সিমেন্টে গড়া একটি স্তম্ভে কেনো মানুষ ফুল দিচ্ছে? 

কেউ যদি উত্তরে বলে- ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য এই ফুল দেয়া হয়। তাহলে আমি প্রতিত্তোরে বলবো- এ কেমন শ্রদ্ধা! এ কেমন ভক্তি! যেখানে আমরা ঠিক করে ভাষা শহীদের নামগুলো বলতে পারি না, বছরে একটি দিন ব্যতিত কোনোদিন তাদের কথা মনে করি না, অথচ একটি দিনে নিয়ম করে ফুল দিয়ে আমরা নিজেকে দেশপ্রেমিক দাবি করছি! 
এটা কি  নিছক একটি নিয়ম, নাকি প্রবণতা (Trend)? নাকি সত্যিকার অর্থেই ভাষা শহীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ?

মানুষ নানা রঙের আলপনা আঁকে শরীরে, তাতে লেখা বিভিন্ন ছন্দের দেশাত্মবোধক উক্তি, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটারে হরেক রকম পোষ্ট, সত্যিই কি এতটা দেশপ্রেশ আমরা বুকে ধারণ করি?

যদি কেউ উত্তরে বলে- হ্যাঁ, অবশ্যই আমি বাংলা ভাষা কে ভালোবাসি, আমি দেশকে ভালোবাসি। 
তাহলে আমি প্রতিত্তোরে বলবো- তবে কেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে, মেসেনজার ইন্সটাগ্রামের বার্তা কক্ষে একে অপরের সাথে কথপোকথনে আপনি ইংরেজি অক্ষরে বাংলিশ শব্দ লিখছেন?

ইংরেজী তে কথা বলতে পেরে  গর্বে আপনার বুক যতটা চওড়া হয়ে যায়, বাংলায় কথা বলার সময় কখনো কি এতটা গর্ব বোধ উপলব্ধি করেছেন নিজের ভিতর?

হে আমার বাঙ্গালী ভাই-বোনেরা বুকে হাত দিয়ে একটিবার বলুন তো..সত্যিই কি কোনোদিন আমাদের ভাষা শহীদদের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য একাকি বসে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কিংবা আপনার ঈশ্বরের কাছে দোয়া করেছিলেন? 

বুকে হাত দিয়ে বলুন তো কোনোদিন প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্য পুস্তক ব্যতিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদের ইতিহাস জানতে মন থেকে আগ্রহী ছিলেন? শপথ করে বলুত তো কোনোদিন সত্যিই বীর শহীদের স্মরণে, বীর শহীদের বীরত্ব গাঁথা গল্প শুনে আপনার গায়ের লোম শিউরে উঠেছিলো কিনা? কেউ শহীদ মিনারে, স্মৃতিসৌধে জুতো পায়ে উঠলে যতটা রাগ হয়, যতটা চেতনা আপনার হৃদয়ে জাগ্রত হয়; কোনোদিন কি রাস্তায় পরে থাকা মানুষের প্রতি অন্তর থেকে সহমর্মিতা জেগেছে? 
রাস্তায় মা-বোনদের উক্তত্তকারী ইভটিজারদের প্রতি কখনো এতটা রাগান্বিত হয়েছেন?

যদি তা না হয় কেনো দেশাত্মবোধের নামে এই মিছে কার্যপ্রণালী বলুন তো? কিসের পিছে দৌড়াচ্ছি আমরা? আমাদের এই মানুষ দেখানো সম্মানবোধ, কোটি টাকার ফুলের তোরা কোনোদিন কি পৌঁছাবে দেশ এবং ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের কাছে?

আসুন মন থেকে দেশকে ভালোবাসি, বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি, ভাষার জন্য দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। বাংলা ভাষাকে সুন্দর করে লিখি, সুন্দর করে ব্যবহার করি, সুন্দর করে বলতে শিখি। দেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। প্রবণতায় গা না ভাসিয়ে দেশের একজন সেবক হিসেবে কাজ করি।