পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

শঙ্খবীণা পর্ব (৮)

৫ জুলাই ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

৩৬ 

         যত দুঃখ যত কষ্ট 

এ এক জীবনেই দিলে তুমি 

                  তবু আনন্দ তবু খুশি 

দুঃখেই তো সব মহৎ কর্মী। 

         আকাশে যাকে দিলে স্থান 

হয়তো রাখলে না তার ভালো অবস্থান 

                  দুখীর সাথে তুমি আছ 

জেনে—দুঃখে বড় সন্তুষ্ট আমি॥ 

 

         নাও নাও সব কেড়ে নাও 

আর কিছু যা আছে বাকি 

                  জীবনের সবই গোলমেলে 

বাকিতে আর কেন রাখবে ফাঁকি। 

         আমার নিঃস্বতে তোমার আনন্দ 

তা হলে বলো না আমাকে আমি মন্দ 

                  এত দরদ সহ্য করে কেন 

দেবে তকমা—মানুষ আমি অধর্মী॥ 

                  ১৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৩৭ 

চলে যেতে বলছ—চলে যাব

থাকব না আর এই শহরে

এই শহর কেন তবে আর 

         চলে যাব এ পৃথিবীও ছেড়ে॥ 

 

কিন্তু বলছি হে শুনে রেখো 

আফসোস হবে পদেপদে দেখো

যে-সুখের লাগি তাড়িয়ে দিচ্ছ 

         সেসুখ তাড়না করবে তোমারে॥ 

 

পাশে আছি তো এখন বুঝছ না 

জেনেও জানছ না মনের কথা 

হারিয়ে যাব একদিন চিরতরে 

         তখন ইয়াদ করবে একথা॥ 

 

দেখবে যখনি দূরদিগন্তপানে 

আমার স্মৃতি শুধু কাঁদাবে মনে 

বলতে চেয়েও পারবে না বলতে—

         কী হারালাম এই ভরপুরে॥ 

                  ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৩৮ 

কবরস্থানের পাশে দাঁড়ালে 

         লাগে মনে বড় বেদনা 

এই কবরে কেমন করে 

         থাকব আমি জানি না! 

 

পৃথিবীটাই আমার ঘর 

         ছোট তবু তার ওপর

অন্ধকারের এতটু কবরে 

                  অনন্ত বাসের ঠিকানা—

এই কবরে কেমন করে 

         থাকব আমি জানি না॥ 

 

আশা ও ভালোবাসা দিলে 

         মনে লাগালে মায়া পৃথিবীর 

সংসারে জড়ালে কী যে 

         আপন করালে না এ কুটির! 

 

নিজেরে কী ভালোবাসালে 

         নিজের মধ্যে নিজেরে ডুবালে 

ভুলালে সব পাওয়ার আনন্দে 

                  এবার থাকতে দিলে না—

এই কবরে কেমন করে 

         থাকব আমি জানি না॥ 

                  ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৩৯ 

আমি কবি নই 

         তবু কবিতা লিখে যাচ্ছি 

আমি গায়ক নই 

         তবু গান গেয়ে চলছি! 

 

দেখেছি দেখেছি 

         মানুষের ভিড়ে মানুষ 

পেয়েছি পেয়েছি 

         ফিরে পেয়েছি হুঁশ 

আপনেরা কত বেগানা 

         স্বার্থের মাঝে সব বুঝছি—

আমি কবি নই 

         তবু কবিতা লিখে যাচ্ছি॥ 

 

রংবেরঙের এই শহরে 

         দেখেছি কী জাঁকজমক 

রাতের রাজা দি-প্রহরে 

         হয়েছে অর্থের প্রার্থক! 

 

কঠিন এই জিন্দেগি 

         বুঝেও বুঝছি না কিছু 

পাওয়ার আনন্দ কী 

         দেওয়ায় কেবলই পিছু 

জেনেও জানছি না 

         কীভাবে যে বেঁচে আছি—

আমি গায়ক নই 

         তবু গান গেয়ে চলছি॥ 

                  ১০ আষাঢ়, ১৪৩০—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৪০ 

জন্ম আমার ধন্য 

         আমি জন্মেছি এ বাংলায়, 

খালবিল ডুবডোবা মেঠোপথ 

         জড়িয়েছে কী মায়ায়। 

                  শিশিরভেজা ঘাস 

ধানখেত বাঁশঝাড় আম-জাম-কাঁঠালগাছ

         টিলটিলা খামারবাড়ি 

পাহাড়িরাস্তা সুশীতল বায়—

                  জন্ম আমার ধন্য 

আমি জন্মেছি এ বাংলায়॥ 

 

ভরে না মন ভরে না 

         দেখে দেখে রূপেরই সাজেক, 

রাঙামাটি নীলগিরি নীলাচল

         হিমছড়ি দারুচিনি দ্বীপেক। 

                  বটের মূলে হাট 

নদীর কূলে নৌকা-সারি-বাঁধা ঘাট

         খেয়াতরী পারাপার 

কী মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পারায়—

                  জন্ম আমার ধন্য 

আমি জন্মেছি এ বাংলায়॥ 

                  ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম