পোস্টস

কবিতা

আবার..

১১ জুলাই ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

১ 

আমাকে দেখে আর মুখ লুকাতে হবে না তোমার 

হুঁচোট আর কত খাবে তাড়াহুড়ো করে মুখ লুকোতে গিয়ে 

চলে যাব অচিরেই অবজ্ঞার এ শহর ছেড়ে দূরে—অনেক দূরে 

আমাকে মশাল জ্বেলেও খুঁজে কোনো দিন পাবে না আর 

তুমি সুখে থেকো—তোমার সুখের জন্যে আমার এ প্রস্থান 

সুখ যদিওবা দিতে পারিনি—দুঃখ বিন্দুপরিমাণ রেখে যাব না তবে 

তবে? আমার কবরে ভালোবাসার চুমে একটি গোলাপ না-ই দিলে 

শুনে—ঘৃণার আগুনটি নিভায়ো তবে দুফোঁটা চোখের পানি ফেলে 

এতটুকু অনুরোধ—তারপর নাহয় ভুলে যেয়ো চিরতরে আমাকে আবার 

তোমাকে দুঃখ দিতে কখনো আর আসব না এই পৃথিবীতে 

২ 

আমাকে খুঁজছ? খুঁজতে পারো—পাবে না আর জগৎ চষে

আমি হাসতে হাসতে ভেসে এসেছি সেদিন কান্নাবানের জলে 

অই নক্ষত্রের দেশে—চিরকুয়াশার আঁধার নগরে আমার বাস 

নিশিথে ফুটে যে-কুসুম তারই ঘ্রাণে হয়তো হয়তোবা 

অনুভূত হতে পারে আমার ঘ্রাণ একদিন সত্যিকারের হৃদয়ে 

ফুটফুটে জোছনার আবছায়াতে আমার ছায়া দেখবে না আর 

অই যে তোমার চলাচলের পথে—পদ্মদিঘির কালো নীরে 

রক্তকমল হয়ে ফুটছি আমি আবার—তোমার হাঁটাচলা চাহাতে 

হয়তো ঘাসফুল—চোরকাঁটা জড়ায়েছি তোমার লাল-পাড়-শাড়িতে 

টের পাবে না তুমি—ভুঁইফোঁড় দলে যাচ্ছ কিবা যাবে বারবার 

আমাকে দেখেও হয়তো চিনতে পারবে না আর 

এখানে—আমি ছায়াহীন বালিকার নিগূঢ় প্রেমে মজে 

দিনরাত খেলব—খেলছি লুকোচুরি বেদনার বাগানে 

সেখানে—দূরে—বহুদূরে—হয়তো আরও দূরে

চিরকুমারীদের দলে ছুটছি সমান্তরালের ময়দানে 

এ জীবনের না পাওয়ার বেদনা হয়তো সেদিনও রবে 

থাক-না তবে—আবার আমি তোমার কথা মনে করে 

হাসনাহেনা হয়ে ফুটতে পারি মোহনলালের কার্নিশে 

তার ঘ্রাণের টানে তুমি যখন পাগল হবে মৃগহরিণীর মতো 

তোমার অস্থিরতায় আমিও তখন অস্থির কস্তুরির সুগন্ধে 

৪                 

আমাকে অনুভব করতে পারো—পারবে না হয়তো 

আমি তোমার হাসির ঝলকে মুক্তা হয়ে ঝরতে ঝরতে 

সুখাকুল সুখে সমুদ্রতল গভীরতলে ডুবে যাচ্ছি কিবা যাব 

কিবা আবার ভেসে ওঠছি—ওঠব তোমার নাম ধরে 

সৃষ্টির সমস্ত রঙে মিশে গিয়ে আবার আমি রাঙাতে আসছি 

আসব—আসব না সাজাতে আর বিষাদের রংহীন সংসার 

আমার কথা নাইবা মনে রাখলে তুমি—নাইবা রাখলে স্মরণ

আমি তোমার কথা মনে করে আসছি—আসব আবার 

ভুলে যাব সেদিন বিরহজ্বালার সেসব—অইসব নীলদংশন 

দেখব বিস্ময়ে নিশ্চয়তার অভূতপূর্ব আদর আর আদর 

৫ 

আমাকে দেখতে পাবে—হয়তো অন্যরূপে 

তোমার শুভ্রজীবন রাঙানো হবে যখন চিরচিত্রণে 

কানিজের সৎপুত্র মালিজের সাথে কিবা ভ্রাতুষ্পুত্রে 

অথবা সোয়াতির আগপুত্র সুখেন্দ্রের সঙ্গে দুনিয়া এককরে 

প্রার্থনারত ভ্রমর এক আত্মহারা দেখো—দেখবে পুষ্পনিকুঞ্জে 

যাত্রা শুভ হোক—ভেনিস শহরের কিবা সিলন-সেরেনদ্বীপের

অথবা হিমাচল থেকে নীলাচল নীলগিরি নীলাদ্রি জাফলঙের

মধুঝরা সেই মধুচন্দ্রিমার অই প্রমোদনগরের ঘাটে ঘাটে 

তোমার স্বর্গসুখের ভবে—আনন্দ-ঘন-মুহূর্তের একান্ত কুঠরিতে 

ভূত হয়ে দাঁড়াব না—দাঁড়াবে না কখন আমার ছায়া ভয়ঙ্করে 

আমাকে হয়তো দেখতে পাবে তুমি আবার—পাবে না—

বৈরৎ বেইজিং বার্লিন বুখারেস্ট বেগাওয়ান বার্ন মানামা মস্কো 

মস্কাট ওয়াশিংটন সিউল সিডনি প্যারিস লন্ডন টোকিও রোমে 

এ বেতবনে বাঁশঝাড়ে হিজলতলায়—ডুমুরের ঝুঁকে পড়া ভাসাডালে 

‘ডাক’‘ডাক’ ডাকছে দেখবে ডাহুক এক প্রিয়তমে প্রিয়তমায়

কিবা খঞ্জন এক পুচ্ছ নাচাচ্ছে মহেন্দ্রদেবের ডেউয়াগাছটিতে

হয়তো জলপিপি এক ওড়ছে দেখবে তোমার মাথার ওপরে

কিবা ঘুঘু শালিক দোয়েল এক খুঁটছে দানা জগেন্দ্র উঠোনে

‘দূর’‘দূর’ করে দূরে তাড়াচ্ছ তুমি তারে বারবার বারেবারে 

বারবার আমি আসছি ধেয়ে—আসছি তোমার মূঢ়দৃষ্টে আবার 

১২/৮/২০১৬—মানামা, আমিরাত