পোস্টস

বিশ্ব সাহিত্য

পথচারী - রে ব্রাডবেরি

১৪ জুলাই ২০২৪

হাসিনুল ইসলাম

মূল লেখক রে ব্রাডবেরি

অনুবাদক হাসিনুল আসলাম

রে ব্রাডবেরি (১৯২০-২০১২)   

রে ব্রাডবেরি তাঁর উপন্যাস ফারেনহাইট ৪৫১ ও দ্য মার্শিয়ান ক্রনিকলস এর জন্য বেশি পরিচিত। কথিত আছে, তিনি প্রথমোক্ত উপন্যাসটি মাত্র এক সপ্তাহে লিখে শেষ করেছিলেন এবং সেটি ডিস্টোপিয় ধারার সাহিত্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে টিকে আছে। তিনি আধুনিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকে সাহিত্যের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য অবদান রেখেছেন বলে মনে করা হয়। ২০০৭ সালে তাঁর নাম পুলিটজার পুরস্কারের বিশেষ সম্মাননায় স্থান পায়। বর্তমান গল্পটিও ভবিষ্যতের যান্ত্রিক পৃথিবীর দুঃস্বপ্নের এক অনুপম কাহিনি। ডিস্টোপিয় ধারায় যতসম্ভব তিনিই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সফল গল্প লিখেছেন।

 

পথচারী

-    রে ব্রাডবেরি

নভেম্বরের রাত আটটায় কুয়াশা ঢাকা শহরের নীরবতায় ডুব দেওয়া, কংক্রীটে মোড়া ফুটপাথে পা রাখার সুযোগ নেওয়া, ঘাসে ঢাকা পথে পা মেলে পথ খুঁজে ফেরা, বা প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রেখে নির্বাক ঘোরাঘুরি করা, এই সবই ছিল লিওনার্ড মিড সাহেবের সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তিনি হয়ত চৌরাস্তার কোনো এক কোণায় দাঁড়িয়ে চারদিকে চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে, উপরে ঝুলে থাকা চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে থেকে রসিয়ে সময় নিয়ে ভাববেন তিনি কোন রাস্তায় যেতে চান। তবে কোন রাস্তায় যাবেন, তাতে কিছুই যায় আসে না। ২০৫৩ সালের বিশ্বে তিনি সেখানে একাকী, শেষমেষ তিনি একটা রাস্তা বেছে নিয়ে হাঁটতে থাকেন। তার মুখের সামনে তখন সিগারেটের ধোঁয়ার মতো তুষার কণার জাল তৈরি হতে থাকবে।

কখনো কখনো তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতে থাকেন, তখন কেবল মাঝরাত হলে বাড়ি ফেরেন। ফেরার পথে আঁধারে ডুবে থাকা কুটির আর বাড়ির কালো কালো জানালাগুলো দেখেন, সেই সময় মনে হয় না যে তিনি কবরস্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানের মাঝ দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন। জানালাগুলো থেকে হঠাৎ হঠাৎ জোনাকি পোকার চিমটি চিমটি আলোর মতো আলো ঠিকরে এসে তার চোখে ধরা পড়ে। কখনো বা কোনো ছায়াশরীর পর্দার আড়ালে নড়ে ওঠে। সৌধের মতো কোনো দালানের জানালা দিয়ে হঠাৎ কখনো ফিসফাস আওয়াজ ভেসে আসে।

লিওনার্ড সাহেব একটু থামবেন, মাথা খাড়া করে শোনার চেষ্টা করবেন, তাকিয়ে দেখবেন, তারপর আবার হাঁটা শুরু করবেন। তার পায়ের চলায় কোনো আওয়াজ হবে না। বহু আগেই তিনি এক চালাকি করেছেন। পায়ে কেডস ব্যবহার শুরু করেছেন কারণ তিনি শক্ত কিছু পায়ে দিলে কুকুরেরাও ঘেউ ঘেউ করতে করতে তার সাথে সারি ধরে পথ চলা শুরু করত। আবার আলো জ্বলে উঠত, লোকজন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখত যে নভেম্বরের শীতে রাতের বেলায় একাকী এক মানুষ হাঁটছে।

নির্দিষ্ট এই দিনের কথা বলা যাক। তিনি পশ্চিমের পথে গোপন সমুদ্রের পানে পথ চলা শুরু করলেন। বাতাসে গুটি গুটি রোয়া ধরা কুয়াশা। নাক যেন কেটে যাচ্ছিল। আর বুকের ভেতর ফুসফুসে যেন ক্রিসমাস গাছে টাঙানো আগুন জ্বলজ্বল করছিল। সেই গাছের উষ্ণতাহীন বাতিগুলো যেন মাঝে মাঝেই জ্বলছিল আর নিভছিল। তিনি খুব তৃপ্তির সাথে পায়ের তলায় পড়ে থাকা শুকনো পাতায় জুতোর ঘসঘসানির আওয়াজ উপভোগ করছিলেন। মাঝে মাঝে একটা পাতা তুলে নিয়ে পাতাটার শিরা-উপশিরা পরখ করছিলেন আর মুখে প্রায় অনুচ্চারিত শিস দিচ্ছিলেন। পাতার ঘ্রাণটাও তখন মন্দ লাগছিল না।

প্রতিটা বাড়ি পার হওয়ার সময় তিনি ফিসফিস করে বলছিলেন, ‘হেলো, কেমন আছেন ভেতরে? আজ চ্যানেল ৪, চ্যানেল ৭, চ্যানেল ৯ এ কি চলছে? কাউবয়েরা কোথায় যাচ্ছে? ইউনাইটেড স্টেটস ক্যাভালরিকে আমি কি সামনে কোনো উদ্ধার কাজে দেখতে পাব?’

সব পথই নীরবতার চাদরে ঢাকা, রাস্তাগুলো অনেক লম্বা, জনশূন্য। কেবল তার ছায়াটা যেন মাঝ আকাশে ওড়া বাজপাখির মতো নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। তিনি যদি চোখ বুঝে শীতে জমতে জমতে একটু কল্পনা করতেন, তাহলেই তিনি দেখতেন তিনি বাতাসহীন শীতার্ত আরিজেনা মরুভূমির ঠিক মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছেন। চারপাশে কয়েক শত মাইলের মধ্যে কোনো বাড়িঘর নেই, চারিদিকে কেবল শুকনো নদীর খোলা বুক আর কোম্পানির চলাচলের জন্য রাস্তা।

‘এখন কি চলছে?’ তিনি হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বাড়িগুলোর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। ‘রাত সাড়ে আটটা? এক ডজন পাঁচমিশালি খুনের সময় কি হলো এবার? নাকি কুইজ? না গীতিনাট্য? নাকি মঞ্চ থেকে ভাঁড়ের পড়ে যাওয়া দেখানো হচ্ছে?’

চাঁদের সাদা আলোয় জ্বলজ্বল করা বাড়িটা থেকে কি হাসির গুঞ্জরণ শোনা গেল? তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হলেন, কিন্তু আর কিছু ঘটলো না দেখে আবার পথচলা শুরু করলেন। এক সময় তিনি এবড়ো-থেবড়ো এক রাস্তায় এসে পড়লেন। সেখানে ফুল আর ঘাসের চাদরে সিমেন্ট হারিয়ে গেছে। দিনে-রাতে দশ বছরের এই পথ চলায় তিনি দ্বিতীয় কোনো মানুষকে হাঁটতে দেখেননি। না, একজনও না। 

এক সময় তিনি দুই রাস্তার মোড়ে এসে পৌঁছলেন। দিনের বেলায় এখানে গাড়ির আওয়াজ গমগম করে, পেট্রল স্টেশনগুলো তখন খোলা থাকে, কে কার আগে যেতে পারবে তার জন্য সারি ধরে সবাই উত্তেজিত হয়ে থাকে, মনে হয় যেন বিশাল সব পোকামাকড় মুচমুচ হুড়মুড় করে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রত্যেকে যে কত ধরনের বায়ু ত্যাগ করে তখন। ওহ্, সে কি দুর্গন্ধের ব্যাপার! হাহ্ হা! কিন্তু এখন সেই মহাসড়কও খরার সময়ের ঝর্ণার মতো পড়ে আছে, সেখানে শুধু পাথর, খোলা বুক আর সেখানে চাঁদের আলো।

তিনি এতক্ষণে বাড়িতে ঢোকার জন্য বাড়ির পাশের ঘুরপথে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর কয়েকটা বাড়ি পার হলেই তার বাড়ি। ঠিক এসময় হঠাৎ করেই একাকী ঘুরে বেড়ানো গাড়িটা থেকে চোখ ঝলসানো পুরু সাদা আলোর হলকা এসে পড়লো। তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে পড়লেন। রাতের বেলায় ওড়া মথের মতো না অবশ্য। আসলে আলোর ঝলকানিতে তার চোখে ধাঁধা লেগে গেছে। এরপর তিনিই আলোর দিকে এগিয়ে গেলেন।

ধাতব কন্ঠে নির্দেশ এলো: ‘চুপ করে দাঁড়ান। যেখানে আছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন! নড়বেন না!’ এমন নির্দেশ শুনে লোকটা দাঁড়িয়ে পড়ল।

‘হাত উপরে তুলুন!’

‘কিন্তু...’ সে বলল।

‘হাত উপরে! নাহলে গুলি করব!’

পুলিশ তো অবশ্যই, কিন্তু এ তো অবাক করার মতো ব্যাপার, অত্যাশ্চর্য ঘটনা। ৩০ লাখ মানুষের এই শহরে তো এখন পুলিশের কেবল একটি গাড়ি অবশিষ্ট আছে, তাই তো জানতাম, নাকি ভুল বলছি? এক বছর হলো, ২০৫২ সালের নির্বাচনের পর তিনটা গাড়ি থেকে সংখ্যা কমিয়ে একটাতে আনা হয়েছে। অপরাধ কমে যাচ্ছিল। এখন আর পুলিশের দরকার নেই। কেবল এই একমাত্র গাড়িটি জনশূন্য রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।

‘আপনার নাম?’ ধাতব কন্ঠে হিসহিসিয়ে গাড়িটা জিজ্ঞেস করল। তার চোখে পড়া আলোর ধাঁধায় সে বুঝতে পারল না গাড়ির ভেতরে কারা আছে।

‘লিওনার্ড মিড।’ 

‘কথা বলুন!’ সেই কণ্ঠ উচ্চারণ করল।

‘লিওনার্ড মিড!’

‘ব্যবসা নাকি অন্য পেশা?’

‘আমাকে লেখক বলতে পারেন।’

‘মানে, কোনো পেশা নেই,’ পুলিশ কার থেকে কণ্ঠ ভেসে এলো, যেন গাড়িটা নিজে নিজেই কথা বলছে। গাড়ি থেকে আসা আলোটা স্থির হয়ে থাকল, সেই আলোর সামনে লোকটা যেন জাদুঘরের দর্শনীয় বস্তুর মতো দাঁড়িয়ে থাকল, যেনবা তার বুকের ভেতর দিয়ে একটা পেরেক আটকে রাখা আছে।

‘তা আপনি বলতে পারেন,’ মি. মিড বললেন। কয়েক বছরের মধ্যে কোনো লেখালেখিই তো করেন নি তিনি। বই কিংবা পত্রিকা তো আর বিক্রি হয় না। কবর সদৃশ বাড়িগুলোর ভেতরে রাতের বেলায় কি হচ্ছে তা তিনি কল্পনায় দেখতে থাকেন। সৌধগুলোতে বাহারি আলো জ্বলে, সেই আলোয় মানুষগুলোর মুখ চকচক করে। সেখানে মানুষগুলো মৃতের মতো সোফায় বসে থাকে, সামনের স্ক্রিন থেকে ভেসে আসা রঙিন আলো তাদেরকে স্পর্শ করতে পারে না। 

‘তাহলে, কোনো পেশা নেই,’ যান্ত্রিক কণ্ঠ আবার জানান দিল। এবার অনেকটা হিসহিস করে প্রশ্ন করল, ‘আপনি বাইরে এখানে কি করছেন?’

‘হাঁটছি,’ লিওনার্ড মিড জানাল।

‘হাঁটছেন!’

‘শুধুই হাঁটছি,’ লোকটা সাদামাটাভাবে বলল, তবে তার মুখ ঠান্ডায় জমে আসছিল।

‘হাঁটছেন, কেবল হাঁটছেন, হাঁটছেন?’

‘জ্বি স্যার।’

‘হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন? কি কাজে?’

‘বাতাস খাওয়ার জন্য হাঁটছি। চোখ মেলে দেখার জন্য হাঁটছি।’

‘আপনার ঠিকানা!’

‘১১, দক্ষিণ সেন্ট জেমস স্ট্রিট।’

‘সেখানে আপনার বাড়িতে বাতাস আছে, আপনার এয়ার কন্ডিশনার আছে, তাই না, মি. মিড?’

‘হ্যাঁ।’

‘আর আপনার বাড়িতে দৃশ্য দেখার জন্য ভিউয়িং স্ক্রিন আছে, তাই না?’

‘না।’

‘নাই?’ নীরবতা যেন মচমচ করে আওয়াজ দিয়ে অভিযোগ তুলে ধরল।

‘আপনি কি বিবাহিত, মি. মিড?’

‘না।’

‘বিবাহিত নন,’ আলোর স্তম্ভের পেছনে থাকা পুলিশের কণ্ঠ শোনা গেল। চাঁদ অনেক উঁচুতে, আকাশ জুড়ে থাকা তারাগুলো পরিস্কার চোখে পড়ছে, আর এসবের মাঝে দুপাশের বাড়িগুলো বিবর্ণ ও নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

‘আমাকে কেউই চায়নি,’ লিওনার্ড মিড জানাল। তার ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা।

‘আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করা না হলে কথা বলবেন না!’

লিওনার্ড মিড সেই শীতের রাতে পরবর্তী প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল।

‘শুধু হাঁটছিলেন, মি. মিড?’

‘জ্বি।’

‘কিন্তু কি জন্য হাঁটছিলেন তা ব্যাখ্যা করেন নি।’

‘আমি তো ব্যাখ্যা করেছি। বাতাস খাওয়ার জন্য এবং চোখ মেলে দেখার জন্য, এবং শুধু হাঁটার জন্য।’

‘আপনি কি প্রায়ই এমন করেন?’

‘কয়েক বছর ধরে প্রতি রাতেই করি।’

রাস্তার মাঝখানে পুলিশের গাড়িটা হুমহুম শব্দে রেডিওর আওয়াজ শোনাচ্ছিল, আর সেখানেই যেন চার হাত-পা মেলে বসে ছিল।

‘আচ্ছা, মি. মিড,’ গাড়ি থেকে আওয়াজ এলো।

‘আর কিছু কি জানার আছে?’ সে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল।

‘হ্যাঁ,’ কণ্ঠটা জানান দিল। ‘এবার।’ দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ হলো যেন, ফট করে কোনো শব্দ হলো নাকি। পুলিশ কারের পেছনের দরজাটা পুরো খুলে গেল।

‘গাড়িতে ঢুকুন।’

‘আরে আরে, একটু থামুন, আমি তো কিছু করিনি।’

‘গাড়িতে ঢুকুন।’

‘আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

‘মি. মিড।’

হঠাৎ মাতাল হওয়া মানুষের মতো সে হেঁটে চলল। গাড়ির সামনের জানালা পার হওয়ার সময় সে ভেতরে তাকাল। সে যেমনটা ভেবেছিল, সামনের আসনে কেউ নেই, গাড়িতে আসলে কেউই নেই।

‘ভেতরে ঢুকুন।’

লোকটা গাড়ির খোলা দরজায় হাত রেখে পেছনের আসনের দিকে আড়চোখে তাকাল। সেটি আসলে একটি ছোট প্রকোষ্ঠ, গরাদওয়ালা ছোট একটি জেলখানা। সেখান থেকে রিভেট করা স্টিলের গন্ধ আসছিল। অ্যান্টিসেপটিক স্প্রের গন্ধও পাওয়া গেল। জায়গাটা খুব বেশি পরিস্কার, কঠোর ও ধাতব। সেখানে কোমল কিছুই নেই।

‘আপনার যদি স্ত্রী থাকত, তাহলে তিনি হয়ত আপনার জন্য কোনো অ্যালিবাই দিতে পারতেন,’ নিরুত্তাপ কণ্ঠটি জানান দিল। ‘কিন্তু ....’

‘আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’

গাড়িটাকে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত মনে হলো। নাকি ঘড়ঘড় কটকট শব্দে কোথাও কোনো তথ্য পাঠাল? ইলেকট্রিক চোখওয়ালা কোনো কার্ড রিডারে যেন কোনো পাঞ্চ কার্ড ধরা হলো। ‘গন্তব্যস্থল: প্রত্যাবর্তী প্রবণতার উপর গবেষণার জন্য স্থাপিত মনোরোগবিদ্যা কেন্দ্র।’

লোকটা গাড়িতে ঢুকে বসল। হালকা থপ আওয়াজ করে গাড়ির দরজাটা বন্ধ হল। রাতের রাস্তায় পুলিশের গাড়িটা সামনে হালকা আলো মেলে ধরে চলা শুরু করল।

অল্প কিছু সময় পরেই তারা একটা রাস্তায় এলো যেখানে একটা বাড়িতেই কেবল আলো জ্বলছিল। তখন পুরো শহরটাই অন্ধকারে ডুবে আছে। একমাত্র সেই বাড়িটার সব জানালা ঠিকরে হলুদ আলো রাস্তায় এসে পড়ছে। জ্বলজ্বলে আলো। শীতের রাতে অন্ধকার শহরে চৌকো চৌকো উষ্ণ হলদে আলোর আভা প্রতিটা জানালা বেয়ে বাইরে গলে পড়ছে।

‘ঐ যে, ওটা আমার বাড়ি,’ লিওনার্ড মিড বাড়িটা দেখাল।

কেউ তার কথার উত্তর দিল না।

শুকনো নদীতে তৈরি রাস্তা দিয়ে গাড়িটা এগিয়ে চলল, ফাঁকা রাস্তার পথচারীশূন্য ফুটপাথ পেছনে পড়ে থাকল। নভেম্বরের সেই তীব্র শীতের রাতে আর কোনো শব্দ শোনা গেল না, কোনো চলাফেরাও চোখে পড়ল না।

 

[বাংলায় অনূদিত গল্পটি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী-র পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে সামান্য সম্পাদনা করা হয়েছে।]