পোস্টস

গল্প

প্রত্যাবর্তন (ছোট গল্প )

২৬ আগস্ট ২০২৪

মোঃ বজলুর রশীদ

মূল লেখক মোঃ বজলুর রশীদ


তারিফের জীবনে স্কুলের দিনগুলো ছিল অসম্ভব সুন্দর ও স্মৃতিময় । সেই  দিনগুলোর মধ্যে তন্নী নামের একটি মেয়ের নাম তার অবচেতন মনে লুকায়িত ছিল। তন্নী ছিল তার সহপাঠী  তারা একই শ্রেণীতে পড়তো  । তন্নীর হাসি, চোখের চাহনি, তার চলাফেরা ,লাজুকতা সবকিছুতেই তারিফ যেন ডুবে যেত। তারিফ কখনো স্কুল মিস করত না । 

শুক্র ও শনি এই গ্রহ দুটি ছিল তার কাছে খুবই অপছন্দের, কারণ শুক্র ও শনি নামে বাংলা ক্যালেন্ডারে দুইটি দিনের নাম রয়েছে, এই দুইটি দিন সাধারণত স্কুল বন্ধ থাকে । স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তন্বী নামের মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয় না তার । 

তারিফের প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার একটাই কারণ ছিল, তন্নীকে দেখা। তারিফ তন্নীকে পছন্দ করলেও কখনোই সাহস করে তাকে বলার মতো শক্তি পায়নি।  যার কারণে
তার ভালোবাসার কথা কখনোই প্রকাশ পায়নি। 

তারিফ স্কুল ও কলেজের পর্ব শেষ করে  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে সে শিক্ষকতা পেশায় জড়িয়ে পড়ে । তারপর বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করে রাফা নামের একটি মেয়েকে । 

রাফা নামের মেয়েটিকে পছন্দ করার একটি কারণ আছে , কারণটি হলো রাফা নামের মেয়েটির সঙ্গে তন্বী নামের মেয়েটির অসম্ভব মিল রয়েছে। তারিফের অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা তন্নি নামের মেয়েটিকে সে রাফার মধ্যে খুঁজে পেয়েছে । 

বিয়ের অনেকদিন পর কোন এক রহস্যময় কারণে তারিফের মন খারাপ , মন খারাপের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে রাফা তরকারিতে লবণ বেশি দিয়ে ফেলেছে, এই জন্য রাফার রান্না করা তরকারি সে খেতে পারেনি। তখন তারিফ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাফাকে বলল"এতদিন ধরে রান্না করেও রান্না শিখতে পারলি না! বলে দরজা ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল তারিফ। 

বাইরে এসে তারিফ দেখল, আকাশে অদ্ভুত রঙের মেঘ জমেছে। মেঘগুলো যেন ধাতব, আর সেই মেঘের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে আলোর ঝলকানি। তারিফ কিছুটা অবাক হয়ে সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করে এক রহস্যময় আলো তার দিকে আসতে শুরু করল। চোখ ধাঁধিয়ে গেল তার। সে কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই সেই আলো তাকে ঘিরে ফেলল। 

চোখ খুলতেই তারিফ দেখল, সে কোনো অচেনা স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে শুধু ধাতব প্রাচীর, আর একটি গোলাকৃতি ঘর। ঘরের মধ্যে ভাসছে এক গোলাকার যন্ত্র, যা মানুষের মতো কথা বলতে শুরু করল, "স্বাগতম, তারিফ। তুমি আমাদের গ্রহে আসার জন্য স্বাগতম।" 

তারিফ বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেল, "গ্রহ? আমি তো এই মাত্রই ঘর থেকে বেরোলাম!" 

যন্ত্রটি বলল, এটি আমাদের পরীক্ষাগার,তোমার মতো মানুষের রাগ ও ক্ষোভ নামক আবেগ নিয়ে আমরা পরীক্ষা চালাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই, তুমি কিভাবে এই রাগ ও ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারো।" 

তারিফ ভাবতে লাগল, "এটা কি কোনো স্বপ্ন? নাকি আমি সত্যি অন্য কোনো গ্রহে  এসে পড়েছি?"  এটা কি সেই শুক্র ও শনি গ্রহ যেটা নিয়ে আমি শৈশবকালে চিন্তিত ছিলাম। 

যন্ত্রটি তাকে মনে করিয়ে দিল, "তোমার রাগের কারণেই তুমি এখানে এসেছ। আমরা দেখব, তুমি কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করো । 

এরপর যন্ত্রটি তারিফকে এক বিশাল স্ক্রিনের সামনে নিয়ে গেল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল তার বউ রাফা , একা বসে রয়েছে ডাইনিং টেবিলে, তারিফকে খুঁজছে। তার চোখে পানি, আর মুখ দুঃখে ভরা। 

তারিফের বুকটা ধক করে উঠল। "আমি কি এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে গেছি?ভাবল সে। 

ঠিক তখনই সেই যন্ত্র বলল, "তোমার মনে যদি সত্যিই রাফার প্রতি ভালোবাসা থাকে, তাহলে তুমি ফিরে যেতে পারবে।" 

তারিফ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার মন অসম্ভব খারাপ। রাফাকে মনে হয়  এভাবে  কষ্ট দেয়া আর তুই তুই করে সম্মোধন করা ঠিক হয়নি । 

তার জন্য মায়া হতে লাগলো । আমাকে ফিরতে হবে ,পৃথিবী নামক গ্রহে তন্নী অথবা রাফার জন্য । 

যন্ত্রটি এক আলোড়নের মাধ্যমে তাকে তার পুরোনো অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। যখন তারিফ চোখ খুলল, সে নিজেকে আবার সেই রাস্তায় খুঁজে পেল, যেখানে সে রাগের মাথায় বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু এবার তার মন শান্ত, আর সে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়াল। 

দরজায় নক করতেই রাফা দরজা খুললো,উদাসীন মনে রাফা তারিফের দিকে তাকিয়ে আছে । তারিফ, রাফার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো অদ্ভুত এক ভালবাসার প্রতিচ্ছবি।  তারপর ডাইনিং টেবিলে তাকিয়ে দেখল তার পছন্দ করা সব খাবার  । 

রাফা তার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসল, "চল, আজ একসাথে বসে খাই ......