পোস্টস

কবিতা

অবশিষ্ট জীবন

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

: হ্যালো...

: হাঁ...কে? 

: চিনতে পারছ বনশ্রী? 

: না...কে? 

: এখনো পারলে না বুঝি? 

: না...কে? 

কোত্থেকে বলছেন প্লিজ...

 

: আমার কণ্ঠস্বর এতই কি পরিবর্তনশীল? 

মনে হচ্ছে? ধাপে ধাপে ধাবিত কৈলাসপর্বতে 

পরিণত ভূতের কণ্ঠস্বরে? 

ভালোই হলো চিনতে পারোনি তবে 

এত দিনে বুঝেছি দুনিয়া গোল 

বুঝেছি—কৃষ্ণগহ্বর কেন এতটা গভীর 

বুঝেছি—নক্ষত্র আর নক্ষত্রে বাধে কেন সংঘর্ষ 

জানো তো? 

কেন, কী দোষে পুড়েছিল লঙ্কাপুরী 

চাও? 

চিতোরমহলে আবার আত্মাহুতি হোক পদ্মাবতীর! 

 

ঈশ্বরের অভিশাপে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়নি পৃথিবীর 

তারচেয়ে অনেকবেশি ধ্বংস হয়েছে সৃষ্টির কারণে ও আচরণে 

কালের চক্রে ইতিহাস হারাতে পারে 

হারাতে পারে না জনশ্রুতি 

হারাল কীভাবে বাগ্মিতার বাক্যশ্রী? 

শিকলটানার ‘ঝনঝন’ শব্দ ভেসে আসছে কোত্থেকে? 

কানের ছিদ্র ছেদন করি পৌঁচ্ছে হৃদয়গভীরে 

গারদে বন্দির মতো কার যেন গোঙানি শোনা যাচ্ছে? 

তুষের আগুন দাবানল হতে পারে...

নীরব কেন তবে? 

ইচ্ছে কি হয়? 

আবার যুদ্ধ বাধুক কুরুক্ষেত্রের মতোই—

ধ্বংস হোক ট্রয়ের মতো এ নগরী? 

 

: না না—আর অঘটন চাই না 

তোমার ছায়া শুভ হতে পারে 

তবে...

: তবে? 

: অনুরোধ করি...

সুখ কারও কারও কপালে সয় না বড়বেশি 

সুখের কোনো শেষ নেই আমাদেরও 

সুখ বেশি ছিল বলে সুখের প্রলাপে পাগল হয়েছে মঞ্জুশ্রী! 

দুঃখের অবসান আর চাই নে আমরা 

দুঃখ আছে—থাকুক আমাদের ঘিরি 

সবকিছু আবার ধন্য হবে মানি 

তোমার আগমনী 

এ আমার নিবেদন 

আমরা বুঝেসুজে করে দিলাম মঞ্জুর স্বাক্ষর—

পাগলাগারদে উত্তম...

 

: কী বলতে চাও তুমি? 

কীসের এত অহংকার তোমাদের শুনি? 

কথার এত ঘোরপ্যাঁচ কেন? 

পরিষ্কার বল দেখি—শুনতে পাচ্ছ কি? 

রাখ তোমার আকাশপাতাল ঘুরোঘুরি 

এখন আমি কিছু বলছি, শোন—

কার দিকে এক আঙুল ওঠাতে গেলে নিজের দিকে তিন আঙুল তাক করে 

সেটা আগে দেখো—দেখতে পাও কি না 

কারও সঙ্গে কথায় কথায় ঠাট্টা করা নাহয় আমার আদত 

কিন্তু কারও সম্ভ্রম বন্ধক রেখে জুয়ার টেবিলে বাজি রাখা আমার আদত না 

এমন কী অপরাধে অপরাধী আমি বল? 

শোন, ক্রোধের আগুনে জ্বালানো যায় পৃথিবী 

শুধু নিষ্ঠুর হতে পারে না কেউ—পারি না আমি 

 

দেখতে চাও কি? 

দোহাই দিয়ো না...

আমি শান্ত ছিলাম—শান্ত আছি 

বোলতার চাকে ঢিল ছোড়া তোমাদের পুরোনো আদত গেল না 

ভালোবেসে অপরাধ করে না কেউ 

আমাকে সব দোষে দোষী করো দুঃখ নেই 

দুঃখ শুধু একটা—

শুক্লপক্ষের আকাশে বারবার কৃষ্ণপক্ষের হানা! 

এটা মেনে নেওয়া যায় না 

কার কত থাকতে পারে সহ্যের ক্ষমতা! 

বল? 

 

মঞ্জুর গায়ে যেন না লাগে আর একটি টোকা 

মনে রেখো—ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে দেরি লাগে না 

হাতেপায়ে ধরো না 

ভুলা যায় কিছু দুক্ষু—ভুলা যায় না কিন্তু চরম অপমান ও আঘাতের ব্যথা 

তুলে নিচ্ছি আমার সমস্ত বারণবাধা—নিষেধাজ্ঞা 

ভয় নেই—ভয়ঙ্কর প্রলয়দ পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হবে না 

কথা ভঙ্গ করা তোমাদের স্বভাব 

আমরা মানুষ খারাপ হলেও আমাদের বংশ ভালো 

আমরা রক্ষা করতে পারি ওয়াদা 

 

মঞ্জু যেখানে খুশি—মেনে নিল নীলপ্রাসাদের কারা! 

এখানে আমার পাণ্ডুলিপির দাঁড়ি—শেষরেখাটানা 

চলে যাব না শুধু এ নগর থেকেই—এ শহরেও আর পড়বে না আমার পা 

বিষেভরা রাজ্যে বসবাস অসম্ভব—করা যায় না 

কারও পথচলা চলে—চলুক-না গন্তব্যহারা 

কারও কিছু যায়-আসে না 

ভুলে গেলে নাইবা অনেক কথা—মনে রেখো তবে এটা—

যতই দেখবে রঙের বাজারে করছে কে আনন্দে গলাগলি 

ততই দেখো—দেখবে দুঃখের কুয়াশায় ঢাকা তার জীবননগরী 

 

: আমি কিছু বলি? 

সূর্যও একসময় বিলাবে না আলো—থাকবে না কখনো তেজস্বী 

রাতের আকাশে জ্বলছে তারা—দিনে হারিয়ে যায় হারানোপথে 

চাঁদেরও একদিন অন্ধকার আসে—আসবে অমাবশ্যা চিরতরে 

কারও থাকে না—থাকবে না অবশিষ্ট জীবন 

যমদূতেরও একদিন মৃত্যু হবে 

জীবন-যৌবন সবকিছু হারাতে হয় নিয়মের ধারাক্রমে 

নিয়তির লিখন খণ্ডাবে কে? বদলানো দুষ্কর—সম্ভব নয় একেবারে 

তবু এখানে—

কেউ মিলনে মরে—মরছে—কেউ বিরহে কাতরাচ্ছে 

না পাওয়ার বেদনে কেউ সৌন্দর্য ফুটে তুলছে 

পাওয়ার আনন্দে কেউ কুৎসিত হচ্ছে 

অনেক কিছু ঘটতে দেখেছি জীবনের অপরাহ্ণে আর সায়াহ্নে 

শান্তি ও সান্ত্বনার প্রলেপে বহুত দেখেছি লেপতে দরদের মালিশ 

 

: স্বার্থেভরা সংসারের এ বাজারে বহু বেচাকেনা আমিও দেখেছি 

দেখে যাব হয়তো আরও বাকি জীবনে—

ধোঁকায় পেতে পেতে কেউ অমানুষ 

কেউ নিজের সামান্যটুকু দিতে দিতে খুশাল মানুষ 

দুজনই তো রূপে মানুষ 

বাকি জীবনে মানুষ রূপটা চাই না—চাইব না 

ভালো থেকো তোমরা 

২০/৭/২০১৯—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম