পোস্টস

চিন্তা

ছোট মনের মানুষের গল্প: "ছোটলোকের বড় ঘর"

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

মূল লেখক লেখক নিজেই

 

একটা ছোট্ট গ্রামে বাস করত রমিজ। রমিজ ছিল গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, কিন্তু তার মনটা ছিল ছোট। নিজেকে সে গ্রামের সেরা মানুষ মনে করত, অন্যকে সবসময় তুচ্ছ করত। মানুষের সুখ-দুঃখের কোনো মূল্য তার কাছে ছিল না। নিজের টাকার জোরে সে সবকিছু জয় করতে চেয়েছিল, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা জয় করতে পারেনি।

গ্রামের অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলত। কারণ, রমিজ মানুষের ছোটখাটো ভুলগুলোকে বড় করে দেখাত, নিন্দা করত, এবং সবসময় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। তার চোখে অন্যরা সবসময় ত্রুটিপূর্ণ, আর সে ছিল নিখুঁত। গ্রামের মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি থেকে শুরু করে কাঁচা বাজারের দোকানদার—কেউই রমিজের সমালোচনা থেকে রেহাই পেত না।

একদিন গ্রামের কাঁচা বাজারে হাশেম নামের এক সাধারণ কৃষক আসল। তার হাতভর্তি তাজা সবজি। হাশেমের চেহারা ছিল শান্ত, বিনয়ী, এবং সে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়াত। গ্রামের মানুষ তাকে খুব সম্মান করত। হাশেমের কাছে টাকা-পয়সা ছিল না, কিন্তু ছিল সবার ভালোবাসা।

রমিজ হাশেমকে দেখে মনে মনে ক্ষুব্ধ হলো। ‘এই গরীব কৃষক এত সম্মান পায়, অথচ আমার মতো ধনী মানুষকে কেউ তেমন গুরুত্ব দেয় না!’ রমিজ ভাবতে লাগল, ‘আমার এত টাকা, এত ক্ষমতা—কিন্তু মানুষ আমাকে কেন এড়িয়ে চলে?’

সেদিন থেকেই রমিজ সিদ্ধান্ত নিল, হাশেমকে নীচে নামাতে হবে। সে নানা কৌশলে হাশেমকে অপমান করতে লাগল। বাজারে গিয়ে লোকজনের সামনে হাশেমের সবজিকে খারাপ বলত, দাম নিয়ে ঝগড়া করত, এবং সবসময় হাশেমের সামান্য ভুলগুলোকে বড় করে তুলত।

একদিন রমিজের মনে হলো, এইভাবে হাশেমকে ছোট করা যাচ্ছে না। তাই সে অন্য এক কৌশল অবলম্বন করল। সে গ্রামের বাজারের সবাইকে ডেকে বলল, "শুনুন, আমি গ্রামের সবাইকে আমার বড় বাড়িতে নিমন্ত্রণ করছি। একটি জমকালো ভোজের আয়োজন করেছি। হাশেমের মতো সাধারণ কৃষকদের জায়গা নেই সেখানে।"

সবাই রমিজের এই কথায় বিস্মিত হলো। রমিজ ভাবল, তার বড় ঘরে বড় আয়োজন দেখে সবাই তাকে সেরা মানুষ হিসেবে মেনে নেবে। কিন্তু সেই রাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।

ভোজের দিন সবাই রমিজের বড় বাড়িতে হাজির হলো। খাবার টেবিলটা সুসজ্জিত ছিল, তবে যেন কিছু একটা কম। সবাই মনে মনে ভাবছিল, রমিজের এত ধন-সম্পদ, কিন্তু এখানে কোনো আনন্দ নেই। রমিজ সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল এবং গর্বভরে বলল, "দেখো, আমি কেমন বড় আয়োজন করেছি। হাশেমের মতো গরিবেরা কি কখনও এভাবে পারবে?"

কিন্তু সেই মুহূর্তে, বাজারের একজন লোক হঠাৎ বলে উঠল, "হাশেম হয়তো ধনী নয়, কিন্তু তার ঘরে ভালোবাসা আছে, শ্রদ্ধা আছে। আমরা তার পাশে দাঁড়িয়ে আনন্দ পাই, কিন্তু তোমার ঘরে শুধু ঠান্ডা দেওয়াল আর বড় টেবিল!"

সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। রমিজ অবাক হয়ে গেল। তার এত আয়োজন, এত ধন-সম্পদ, সবকিছু ব্যর্থ হলো। কারণ তার ঘরে ছিল না ভালোবাসা, ছিল না সম্মান। ছোট মনের মানুষের বড় ঘরও যে ছোট হয়, তা রমিজ সেদিন বুঝতে পারল। সে বুঝল, সম্মান আর ভালোবাসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

সেদিন থেকেই রমিজ নিজেকে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিল। সে ধীরে ধীরে মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করল। হাশেমের মতো বিনয়ী মানুষদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করল, আর নিজের ছোট মানসিকতা দূর করার চেষ্টা চালিয়ে গেল।

এভাবেই রমিজ ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করল। তার বড় ঘর ধীরে ধীরে মানুষের হাসি, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় পূর্ণ হয়ে উঠল।


---

মূল বার্তা: ছোট মনের মানুষ যত বড় ঘরই বানাক না কেন, মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা অর্জন করতে হলে মনটাকেই আগে বড় করতে হয়।