পোস্টস

গল্প

অন্ধকারের শেষ সীমানা

১৩ নভেম্বর ২০২৪

আলিফ রহমান বিজয়

উম্মে সালমা ছিলেন একান্ত ধর্মপরায়ণ নারী। প্রতি ফজরে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে দোয়া করতেন—“হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে সঠিক পথে চালাও।” স্বামী আলেম মানুষ, সমাজে সম্মানিত। তারাই ছিলেন সা'দের জন্য অনুপ্রেরণা। তবে বয়সের সাথে, সা'দের মনোযোগ কমে আসছিল পড়াশোনায়, আর বাড়ছিল অচেনা পথে ঝোঁক। 

সা'দ সুন্দর চেহারার এক তরুণ, চোখেমুখে স্মার্টনেস। বাইরের চাকচিক্য ও কুপ্রভাব তাকে ধীরে ধীরে বিপথে নিয়ে যাচ্ছিল। পড়াশোনা ও মাদ্রাসার বাইরে যে নিষিদ্ধ পৃথিবী ছিল, সে দিকেই তার আকর্ষণ বেড়ে যাচ্ছিল। মায়ের চোখের সামনে দিন দিন ছেলেকে হারিয়ে যেতে দেখে উম্মে সালমার অন্তর যেন জ্বলে উঠছিল উদ্বেগে। তিনি ছেলেকে ভালোর পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন—মাঝে মাঝে কঠোরও হতেন। কিন্তু একান্ত মমতাময়ী হৃদয়ে এই কঠোরতার পেছনে লুকিয়ে ছিল শুধুই ভালোবাসা। 

সেদিনও উম্মে সালমা রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। বার বার চোখ তুলে দেখছিলেন দরজার দিকে। সা'দ সকালে মাদ্রাসা যাওয়ার সময় ঝগড়া করে গেছে, কিন্তু মা বুঝতে পারছিলেন তার রাগ স্থায়ী নয়। তাই ভেবেছিলেন, ছেলের প্রিয় খাবার রান্না করে তাকে একটু খুশি করবেন। এদিকে সা'দকে নিয়ে তার মনে ভয়ের একটা কালো মেঘ ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রতিদিন ঘর থেকে টাকা হারাচ্ছে, আর মায়ের সন্দেহ—এটার পেছনেও রয়েছে সা'দ। এই সন্দেহ আর মায়ের বাধা যেন সা'দের মধ্যে এক ধরনের জিদ তৈরি করেছিল। 

সকাল এগারোটায় সা'দ হঠাৎ করে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে আসে। আজ তার চোখেমুখে শান্তির লেশমাত্র নেই, বরং এক গভীর বিদ্বেষের ছাপ। সে দরজা ঠেলে ঢুকে রান্নাঘরে যায়, দেখে মা কুমড়ো কাটছেন। মায়ের দিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। উম্মে সালমা ফিরে তাকান—চোখে মমতা। তাকে দেখে একটু হাসেনও। সন্তান তো সন্তানই—কী রাগ, কী অভিমান, মায়ের কাছে সব ছোট। 

কিন্তু সা'দ আজ ভিন্ন মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে। মা এগিয়ে আসেন তাকে একটু আদর করতে, কথা বলতে। কিন্তু হঠাৎ করেই সা'দ মায়ের মুখ চেপে ধরে। মায়ের শ্বাস আটকে আসছে, কিন্তু ছেলের মুখে যে বর্বর রূপ সে তা কল্পনাতেও আনতে পারেননি। ছেলের জন্য এতো দিনের স্নেহ-মমতার জবাব এভাবে পাবেন, তা কখনো ভাবেননি উম্মে সালমা। তিনি হাত-পা ছুঁড়ে ছেলের কাছে করুণা চেয়েছেন, চোখে জল এনেছেন। কিন্তু আজ সা'দের চোখের মায়াও যেন কঠিন শিলায় পরিণত হয়েছে। 

মায়ের নিথর দেহটা ফ্রিজে রাখার পর, সে কিছু আসবাবপত্র ভাঙে, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে। তারপর ফেসবুকে পোস্ট করে জানায়—“আমার মাকে আজ ডাকাতি করতে এসে খুন করে গেছে।”