আজ মহান বিজয় দিবস। সারা দেশজুড়ে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। কাকলি আজ সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়েছে। সাভার স্মৃতিসৌধে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা র্যালি নিয়ে পুষ্প মাল্য অর্পণ করছে স্মৃতিসৌধে। লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই বিজয়। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ স্মরণীয় দিন।
কাকলির দুই ছেলে-মেয়ে নিশান ও লিমা। নিশানের বয়স ১১, আর লিমার ৯ বছর। প্রতিদিন তারা সকাল সাতটার মধ্যে উঠে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কিন্তু আজকে স্কুল বন্ধ, তাই তারা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। তাদের মা কাকলি তাদেরকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য তাগাদা দিচ্ছিল। তখন ঘুমের ঘোরেই তারা বলে উঠলো, আজকে তো স্কুল বন্ধ, মা? আমাদেরকে আরেকটু ঘুমাতে দাও।
কাকলি বলল, "তাড়াতাড়ি উঠো, স্মৃতিসৌধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে হবে।"
নিশান বলল, "মুক্তিযোদ্ধা উনারা আবার কে, মা?"
কাকলি বলল, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি, বাক স্বাধীনতা পেয়েছি।
ওদের ঋণ আমরা কোনদিন শোধ করতে পারব না ।
লিমা বলল, আরেকটু ঘুমাতে দাও, মা?
কাকলি একটু হাসল, তারপর বলল, "আজ তো বিজয় দিবস, মা। এই দিনে আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে, যার কারণে আমরা মুক্তভাবে বাস করতে পারছি আমাদের জন্মভূমিতে।
লিমা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের স্বাধীনতা খুব কষ্টে অর্জিত হয়েছে, তাই না?
কাকলি মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। মুক্তিযুদ্ধে অনেক মানুষ তাদের প্রাণ দিয়েছে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারি। তাদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, যারা দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন।
হটাৎ গ্রাম থেকে আসা বৃদ্ধ রহমত চাচা, যিনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, নিশান ও লিমার কাছে এসে বললেন, তোমরা ঠিকই বলছো। আমরা যখন যুদ্ধ করছিলাম, তখন আমাদের একটাই স্বপ্ন ছিল,জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করা।
আমি অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের হারিয়েছি, কিন্তু আজ যখন দেখছি তোমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছো, কথা বলতে পারছো, বৈষম্য শিকার হচ্ছো না, তখন মনে হয় সব কষ্ট সার্থক হয়েছে।
নিশান ও লিমা রহমত চাচার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক গল্প শুনলো। রহমত চাচা মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই সব গল্প তাদের দুইজনকে শোনালো। তারা দুজন একে একে জানতে পারল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান এবং তাদের কষ্টের কথা।
লিমা ও রিতা কিছু ফুল নিয়ে ছুটল স্মৃতিসৌধের দিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে। সেখানে তারা একত্রিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করল। তারপর পতাকা উত্তোলন এবং শপথ নিল দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং শহীদদের স্বপ্ন পূরণের জন্য।
নিশান ও লিমা বুঝতে পারলো, আজকের দিনটি শুধু বিজয় দিবস নয়, এটি শ্রদ্ধা জানানো এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার জন্য একটি দিন। আগামী প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল্যবোধ বোঝানোর দিন। শহীদদের প্রতি তাদের ঋণ শোধ করতে এবং দেশের জন্য ভালো কাজ করার দিন।
লিমা ও রিতা শেষে বুঝতে পারলো, কত কষ্ট করে এই দেশটি স্বাধীন করতে হয়েছে। তারপর তারা রহমত চাচার কাছ থেকে শোনা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্পগুলি তাদের সহপাঠীদের মাঝে বলতে লাগলো ।