Next Chapter Previous Chapter

চন্দ্রভুক :মুখবন্ধ

May 16, 2024

মুনীরা কায়ছান


 ম্যাজিক-রিয়েলিজমের প্রতি অদ্ভুত মোহ তৈরি হয়েছে আজকাল।  মার্কেজের একটা কথা ভুলবো না কখনোই- " যদি লিখি হাতি আকাশে উড়ছে তখন মানুষ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু যদি বলি ৪২৫ টা হাতি আকাশে উড়ছে তাহলে সেটা মানুষ বিশ্বাস না করলেও অবাক হতে পারে। আর বিশ্বাসের ইচ্ছেও জাগতে পারে।" 
রাজা প্রতাপাদিত্যকে নিয়ে বেশকিছু উপন্যাস লেখা হয়েছে।  আমার উপন্যাসে সময়ের হিসেবে তাকে আনতেই হয়েছে। রাজা প্রতাপকে জানতে গিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে আসলে।  উপন্যাসের বেশকিছু ঘটনার অনুষঙ্গ সত্য। যেমন তার জন্মের সময় দেয়া ভবিষ্যদবাণী। তবে প্রতাপ আসলে শাসক হিসেবে কেমন সেটা আমি আমার মত করে তুলেছি। কিছু সত্যের ছায়া আর কিছু কল্পনা। তবে নিরেট সত্য নেই কিছুই। প্রতাপ কোন গোষ্ঠীর কাছে নন্দিত আবার কোন গোষ্ঠির কাছে হয়ত বা নিন্দিত। প্রতাপ নিজেকে মহারাজা ভাবতেন-ভাবাতেন তার চারপাশের মানুষকে। আর তার শাসনামলে বাংলার গৌরব করার মত কিছু ব্যাপার অনস্বীকার্যভাবেই ছিল-যেমন বাংলার তৎকালীন নৌবাহিনী।  এই ব্যাপারটুকু পুরোটাই সত্যি। তার মৃত্যু নিয়ে যে অমীমাংসিত রহস্য সেটা আমার লেখার জন্যে শাপে বর ছিল হয়ত। আমি রঙ চড়াতে পেরেছি নিজের ইচ্ছেয়। 
  ইতিহাস গ্রন্থ নয় এটা। বরং কিছু ইতিহাসকে ঠিক রেখে নিজের গল্পের প্রয়োজনে আমি এগিয়েছি। সুতরাং ইতিহাসবোদ্ধারা যখন ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে  সমালোচনার তীর আমার দিকে ছুঁড়বেন নির্দয় হাতে- আমাকে হয়ত আত্মসমর্পণ করতে হবে নিরুপায় হয়েই ।  বইটি পুরোপুরি কাল্পনিক - বাস্তব কোন ইতিহাস উপজীব্য করে লেখা উপন্যাস  না। এর বেশি নিজেকে বাঁচানোর জন্যে আর কিছু বলার নেই। 
জগবন্ধুর হাতে নিষ্প্রাণ মূর্তি প্রাণ পায় যেন। সময়টা চারশত বছর আগে যখন বাংলায় বারভূঁইয়াদের দাপট চলছে আর বাংলার জনপদ লড়ছে পর্তুগিজ জলদস্যুদের সাথে। কার্ভালহো নামে একজন জলদস্যু সত্যিই ছিল -যেমন পেদ্রো নামে রাজা প্রতাপের নৌসেনাধ্যক্ষ ছিল। তবে শেহেরবাঈ কেবল কাল্পনিক চরিত্র।
 উপন্যাসের দ্বিতীয় ভাগে ইন্দ্র নামের একজন ভাস্করকে পাওয়া যায়। মন দিয়ে মূর্তি গড়লে তাতে প্রাণসঞ্চার হয় এই অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস তার মধ্যে হতাশার জন্ম দেয়। কারণ তেমন একটা মূর্তিও আজ অবধি সে গড়তে পারেনি। জিতেন্দ্রিয় খুঁজে পায় পুরনো এক মূর্তি যার আদলে গড়া হবে নতুন একটা অবয়ব। তার বিশ্বাস ইন্দ্র তার হাত দিয়েই এই অসাধ্য সাধন করবে। 
 নিঝুম আর নাতাশার ইচ্ছেগুলো পাথর নয় বরং  রক্তমাংসের মানব ইন্দ্রকে বারবার আহত করতে চায় কিন্তু পাথরের মত অনুভূতিহীন হৃদয়ে আঘাত পেয়ে বোবা অনুভূতিগুলো দ্বিগুণ আঘাত নিয়ে ফিরে যায় তাদের কাছে। 
 চারশত বছর আগের শেষ না হওয়া গল্পটা ভয়ানক এক উপসংহার নিয়ে আসে এই মানুষগুলোর জীবনে। 
উপন্যাসের নাম যখন  হন্যে হয়ে খুঁজছিলাম, আমার প্রিয় অনুজ বন্ধু আমাকে উদ্ধার করেছে সবসময়ের মত। ভীষণ গুণী চিত্রকর  এবং মজার মানুষ  আসির মোসাদ্দেক সাকিবের জন্যে ভালবাসা থাকবে। প্রিয় কবি সুনীলের কবিতার শব্দ আমার উপন্যাসের নামে জুড়ে যাবার অনুভূতিটা ঠিক লিখে বোঝাবার নয়। 
কাহিনির প্রয়োজনে উপন্যাসে কিছু ইতিহাস বা ধর্ম সম্পর্কিত ব্যাপার চলে এসেছে। কোন সম্প্রদায়কে আহত করা কোনভাবেই লেখকের অভিপ্রায় নয়। তা নিতান্তই অনভিপ্রেত।  শুভ পাঠ্যম! 
মুনীরা কায়ছান।
মিস্ট্রি থ্রিলার চন্দ্রভুক হাতে পাবার লিংক -
 https://www.rokomari.com/book/220431/chandrovuk
বুকমার্ক এ অর্ডার লিংক -
https://bookmark.com.bd/products/monmoth