Posts

উপন্যাস

ভুল পথের যাত্রী

February 10, 2025

Naoroz Bipul

Original Author নওরোজ হোসেন

29
View

প্রথম পরিচ্ছেদ

বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল জুওয়াইরিয়া। ওর সামনেই রাস্তায় দীর্ঘ যানজট। সামনে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো একটা গাড়ি। গাড়িটার দিকে জুওয়াইরিয়ার দৃষ্টি গেলো। জানালা খোলা। খোলা জানালায় একটা পরিচিত মুখ।

অফিস পরবর্তী সময়ে ঢাকার এক চিরচেনা বিকেল। ট্রাফিক জ্যামের গ্যাঁড়াকলে আটকে আছে মুমিত। রাজধানীর যানজট তার কাছে নতুন কিছু নয়, তবে আজ যেন সবকিছুই কিছুটা বেশি ধীর। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। ক্লান্ত দৃষ্টিতে যানজটের অবসান হওয়ার অপেক্ষা করছে। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে ইমেইল চেক করছেন। হঠাৎ করেই গাড়ির পাশের ফুটপাত থেকে একটি পরিচিত কণ্ঠস্বর মুমিতের মনোযোগ কেড়ে নিলো।

‘মুমিত ভাই!’

মুমিত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। দেখতে পেলো একজোড়া উজ্জ্বল চোখ। প্রথমে চিনতে একটু সময় লাগলেও পরক্ষণেই মুমিত বুঝতে পারলো, ওটা জুওয়াইরিয়া! ওর আগের অফিসের সহকর্মী। প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। জুওয়াইরিয়ার মুখে এক প্রশান্ত হাসি। 

মুমিত অবাক হয়ে বললো, ‘জুওয়াইরিয়া! তুমি?’

জুওয়াইরিয়া আরেকটু এগিয়ে মুমিতের গাড়ির পাশে এসে দাঁড়ালো। ওর পরনে সাধারণ কামিজ-ওড়না-সালোয়ার। পরিপাটি। চোখে ক্লান্তির ছাপ, তবে মিষ্টি হাসিটা যেন একই আছে।

মিষ্টি হেসে জুওয়াইরিয়া বলল, ‘ভাবতেই পারিনি এভাবে তোমার সঙ্গে দেখা হবে!’

‘আমিও ভাবিনি। এতদিন কোথায় ছিলে?’

‘পুরনো অফিসেই আছি। তবে তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো! বিদেশি কোম্পানির বড় অফিসার!’

মুমিত হাসল। বলল, ‘তুমি জানলে কীভাবে?’

‘সোশ্যাল মিডিয়া বলেও তো কিছু আছে, তাই না?’

মুমিত আবারো হাসলো। গাড়ির দরজা খুললো। বলল, ‘উঠে এসো।’

গাড়িতে উঠতে প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলো জুওয়াইরিয়া। এক সময়ের সহকর্মী ছিল মুমিত। ফলে, কোনো রকম দুঃশ্চিন্তা করলো না জুওয়াইরিয়া। গাড়িতে উঠে এসে মুমিতের পাশের সিটে বসলো। দরজা আটকিয়ে দিলো। মুমিতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। বলল, ‘তুমি তো এখনো বিয়ে করোনি, তাই না?’

মুমিত এবার কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। বলল, ‘না, এখনো করিনি। কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি- বিয়ে-টিয়ে নিয়ে এখনো কিছু ভাবা হয়নি।’

জুওয়াইরিয়ার চোখে কৌতূহল। বলল, ‘বাহ্, মনের মতো কেউ মেলেনি নাকি?’

মুমিত হেসে এড়িয়ে গেলো প্রশ্নটা। বলল, ‘তুমি কেমন আছো, তোমার পরিবার?’

জুওয়াইরিয়া ছোট্ট করে উত্তর দিলো, ‘ঠিকঠাক আছি। তোমার সাথে অনেক কথা বলার আছে মুমিত ভাই। চলো, এই জ্যাম থেকে বের হয়ে কোথাও বসে কথা বলি।’

মুমিত একমত হলো। ড্রাইভারকে বললে, জ্যাম থেকে গাড়ি এগিয়ে নিলো ড্রাইভার। কাছের একটা রেস্টরন্টে গিয়ে উঠলো তারা।

রেস্টরন্টের ভেতরটা তুলনামূলক নিরিবিলি। টেবিলে বসে অর্ডার দেয়ার পর শুরু হলো আলাপ।

‘তুমি জানো মুমিত ভাই, আমি এখনো আগের অফিসেই আছি। চাকরির পাশাপাশি ছোট দুই ভাইকে মানুষ করার দায়িত্ব আমার।’ বলল জুওয়াইরিয়া, ‘অনেক চাপ। চেষ্টা করছি সবকিছু সামলে নিতে।’

মুমিত মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। জুওয়াইরিয়ার জীবন সংগ্রামের কথা শুনে তার মনে অদ্ভুত এক প্রশান্তি এলো। এই মেয়ে বরাবরই সাহসী।

‘তুমি কিন্তু বদলাওনি।’ বলল মুমিত, ‘তুমি এখনো সেই পরিশ্রমী আর আত্মনির্ভরশীল রয়ে গেছো।’

জুওয়াইরিয়ার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। বলল, ‘তুমি তো বদলে গেছো মুমিত ভাই। আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী আর... আরও বেশি সুদর্শন।’

মুমিত এবারো কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। বলল, ‘তুমি যেমন বলো। আমি তো এখনো আগের মতোই। হয়তো সময়ের সঙ্গে কাজ আর অভিজ্ঞতা আমাকে বদলে দিয়েছে।’ 

তারা দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলল। পুরনো স্মৃতিচারণ, কাজের গল্প, জীবনযাপনের গল্প। জুওয়াইরিয়া বুঝতে পারছিল, মুমিতের প্রতি তার অনুভূতিগুলো এখনো অমলিন। আর মুমিত? তার ভেতরেও কি জুওয়াইরিয়াকে নিয়ে কোথাও একটা সুপ্ত অনুভূতির সঞ্চার হলো? জুওয়াইরিয়া তা বুঝতে পারলো না।

রেস্টরন্ট থেকে বের হওয়ার সময় জুওয়াইরিয়া বলল, ‘আবার দেখা হবে তো?’

মুমিত হেসে বলল, ‘অবশ্যই হবে। অনেক সময় আছে আমাদের হাতে।’

মুমিত এখনো বিয়ে করেনি সেটা ভেবে, মনে মনে জুওয়াইরিয়া কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠলো। মেয়েরা তো এমন একটা ছেলেকেই কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা করে।

Comments

    Please login to post comment. Login