১ম ভাগ
......................
আজকের দিনটা শুরু হলো খুব অদ্ভুতভাবে।
আমি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি। চোখের সামনে এক ভদ্রলোক মাথায় হাত দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। তার নাম মতিন সাহেব। তিনি প্রচণ্ড বিরক্ত। কারণ তার মাথার মাঝখান থেকে একগাছি চুল অদ্ভুতভাবে উধাও হয়ে গেছে।
আমাকে দেখে তিনি বললেন,রিয়াজ ভাই, আমি তো রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে দেখি, মাথার মাঝখানটা ফাঁকা!
এ কী সর্বনাশ!আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আপনি কি রাতে কোনো ভূতের সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন?
মতিন সাহেব চোখ বড় বড় করলেন। ভূত কেন আমার চুল নেবে?
আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ভূতেরা কখনো কখনো টাকাওয়ালাদের দলে ভিড়ে যায়। তাদের একটা গোপন সংঘ আছে, নাম টাকাবাজ গোষ্ঠী।
মতিন সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন। কী বলছেন রিয়াজ ভাই!
আমি মাথা নাড়লাম। আপনার চুল গেছে, এটুকু সত্য। এখন খুঁজে বের করতে হবে, কে নিয়েছে?
২য় ভাগ
...............
আমার ধারণা ছিল, চুল চুরি শুধু সিনেমায় হয়। কিন্তু রাস্তা ঘাটে এখন যা হচ্ছে, তাতে সবকিছুই সম্ভব।
আমি মতিন সাহেবকে নিয়ে তার বাড়িতে গেলাম। তিনি খুবই আতঙ্কিত, বারবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, এভাবে চলতে পারে না! সমাজে কীভাবে মুখ দেখাবো?
মতিন সাহেবের স্ত্রী রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, সমাজকে যদি এত ভয় হয়, তাহলে আগে বিয়ের সময় এত কিপ্টেমি না দেখিয়ে ভালো একটা উইগ কিনতে পারতে!
আমি তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বুদ্ধিমতী মহিলা।
আপনি কাল রাতে কী করছিলেন? আমি জানতে চাইলাম।
আমি? আমি ঘুমিয়ে ছিলাম! আমার ধারণা ও হয়তো স্বপ্ন দেখে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়ে ফেলেছে!
মতিন সাহেব প্রতিবাদ করলেন, আমার কী দোষ? আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম!
আমি বললাম, ভালো কথা। তাহলে এই বাড়িতে আর কে ছিল?
আমাদের কাজের মেয়ে জরিনা ছিল।
আমি জরিনাকে ডাকলাম। সে লাজুক মুখে দাঁড়াল।
আমি বললাম, জরিনা, তুমি কিছু দেখেছিলে?
সে মাথা নাড়ল। না তো ভাইয়া, তবে...
তবে কী?"
কাল রাতে একটা বিড়াল জানালা দিয়ে ঢুকছিল। আমি ঠেলা দিয়ে বের করে দিয়েছি।
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, বিড়াল কি টাক পছন্দ করে?
৩য় ভাগ
...............
আমি মতিন সাহেবকে বললাম, চলেন, ছাদে যাই। রহস্যটা ওখানেই আছে!
তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ছাদে আবার কী আছে?
আমি রহস্যময় গলায় বললাম, গেলেই বুঝবেন!
আমরা ছাদে উঠলাম। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম। এক কোণে বিড়ালের ছোট্ট একটা থাকার জায়গা। তার পাশে একটা অদ্ভুত দৃশ্য!
একটা ছোট্ট বিড়ালছানা শুয়ে আছে, আর তার পাশে...
একগাছি চুল!
মতিন সাহেব চিৎকার দিয়ে বললেন, এই তো আমার চুল! বিড়ালটা নিয়ে গেছে!
আমি বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাই, এ কী কাণ্ড করেছেন?
বিড়ালটা আমাদের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল, যেন বলছে চুপ থাকো, মানুষ। আমি নতুন পরচুলা বানাচ্ছি!
মতিন সাহেব বিড়ালের দিকে তেড়ে গেলেন, তুই আমার মাথার চুল নিলি কেন!
আমি থামালাম। ওকে কিছু বলবেন না। মনে রাখবেন, চোরও একসময় শিল্পী হয়ে যায়।
চতুর্থ ভাগ
...............
সন্ধ্যায় মতিন সাহেব নতুন একটা ক্যাপ কিনলেন। আমাকে বললেন, রিয়াজ ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ। অন্তত বুঝতে পারলাম, চুল চুরি হতে পারে।
আমি হাসলাম। চুল শুধু মাথা থেকে চুরি হয় না, অনেক সময় মন থেকেও চুরি হয়ে যায়। তবে তাতে বিচলিত হওয়া উচিত না।
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ঠিক বলেছেন।
আমি ক্যাপের দিকে তাকিয়ে বললাম, ক্যাপ পরার দরকার নেই। টাক মাথাও একধরনের সম্মান। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত মানুষ টাক ছিলেন।
তিনি হেসে বললেন, তা ঠিক! তবে আমার টাক হলো একটি বিড়ালের কারণে!
আমি মৃদু হাসলাম। সন্ধ্যার বাতাসে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে আমার ছায়াটা কিছুটা লম্বা দেখাচ্ছে।
আমি বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাই, পরচুলা বানানো হলে আমাকে জানাবেন। কয়েকটা বন্ধু আছে, যাদের দরকার হতে পারে!
বিড়ালটা কিছু বলল না। তবে তার চোখ দেখে মনে হলো, সে আমাকে বুঝতে পেরেছে।