Posts

ফিকশন

এ আই (AI) প্রেমপত্র

March 4, 2025

অনিরুদ্ধ রনি

32
View

এ আই এর প্রেমপত্র

Artificial intelligence (AI) কে বাংলায় সম্ভবত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলে। আজকাল AI (এ আই) কবিতা লিখছে, চিঠি লিখছে, সিনেমা বানাচ্ছে, গান লিখছে, গান গাইছে, ছবি আঁকছে, চাকরির দরখাস্ত লিখছে, প্রেমপত্র লিখছে, ছাত্র পড়াচ্ছে, রোগ নির্ণয় করছে, ওষুধ বাতলে দিচ্ছে। কবি, ডাক্তার, শিল্পী, শিক্ষক, সৈনিক সবাইকে এ আই বেকার করে ছাড়বে। ভয়ে ভয়ে আছি। কখন আমার চাকরিটা নট হয়ে যায়!

এ আই এর মূল শক্তি হলো ডেটা (Data), এলগোরিদম (Algorithm), এবং অতি দ্রুত নকল করার ক্ষমতা। ধরুন আমি ক্লাসে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কোনো একটা বিষয় পড়াচ্ছি। কিন্তু ব্যাটা এ আই ডেটা ব্যাঙ্ক থেকে চট করে জেনে নিবে রিচার্ড ফাইনম্যান, আলবার্ট আইনস্টাইন এবং এমন হাজার হাজার কোয়ান্টাম বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে কি লিখেছেন বা বলেছেন। এসব থেকে নকল করে সে আমার চেয়ে ভালো মানের লেকচার দিতে পারবে।

এ আই কেমন করে কবিতা বা প্রেমপত্র লিখবে? পৃথিবীর বিখ্যাত কবি, লেখক, প্রেমিকদের প্রেমপত্রের ডিজিটাল কপি এ আই এর ডেটা ব্যাংকে জমা আছে। ধরা যাক সেখান থেকে এ আই খুঁজে পেলো রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি পংক্তি,

"তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ।"

এরকম লাইন আরো আছে কি? এ আই খুঁজে পেলো এরকম আরো অনেক কবিতা, আরো অনেক প্রেমপত্র, যেখানে "সর্বনাশ" শব্দের বদলে লেখা আছে; মুক্তি, শান্তি, মরণ, জীবন, পরাজয়, নিপাতন, পরাভব, পরমায়ু, ইত্যাদি। কোন শব্দটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে তা অনুসারে এ আই একটি তালিকা তৈরী করবে এবং এই তালিকার প্রথম ৫ টি শব্দ থেকে একটি এ আই তার প্রেমপত্রে ব্যবহার করবে। এই কবিতার পংক্তিতে আর যে সব শব্দ আছে সেগুলোও এ আই একে একে পরিবর্তন করবে। এভাবে যে কবিতা লিখা হবে তা উন্নতমানের হওয়ার সম্ভবনা খুব কম। কবিতা, চিত্রকলা বা প্রেমপত্রের ভিতরে যে নান্দনিক (aesthetic) সৌন্দর্য থাকে তা বোঝার ক্ষমতা এ আই এর নেই।

পুরুষকে সুদর্শন বা নারীকে রূপবতী করে গড়ার ব্যাপারে বিধাতা উদাসীন, কিন্তু রোবটকে সুন্দর করে বানাতে অতিরিক্ত খরচ তেমন কিছু লাগবে না। বারবি পুতুলগুলো কেমন নিখুঁত শরীর এবং চেহারার অধিকারী। মেশিনে তৈরী করলে সুন্দর এবং অসুন্দর পুতুল তৈরী করার খরচ একই হবে। এখন নতুন এ আই রোবট বানানো হচ্ছে যারা নাকি মানাভিমান, কান্নাকাটি, ঝগড়াঝাটি করতে পারবে। তাহলে বিয়ে করার আর দরকার কী? এমন একদিন আসবে যখন এ আই সব কিছু করবে, আমরা বসে বসে শুধু হাই তুলবো। সেটা হবে এক নতুন সাম্যবাদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার, কেরানি, কৃষক, সৈনিক, কবি, অ-কবি, প্রেমিক, বিপ্লবী, কাপুরুষ, মহাপুরুষ, সবাই সমান হয়ে যাবে।

একটা সমস্যা কিন্তু থেকেই যাবে, এ আই রোবট মানুষের মতন সন্তান উৎপাদন করতে পারবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে একটি এ আই রোবটকে মানুষের রূপে গড়া সম্ভব হবে। কোনটা যে মানুষ এবং কোনটা যে রোবট তা সহজে বোঝা যাবে না! একটা এ আই রোবট তার মতো অনেক নতুন রোবট সৃষ্টি করতে পারবে। দূর ভবিষ্যতে এমন এক দিন আসতে পারে যখন রোবটগুলো মানুষকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ভাবতে পারে, মানুষকে করুনার দৃষ্টিতে দেখতে পারে। হতভাগা অসহায় মানুষ। যে অন্য প্রাণ ধ্বংস না করে নিজের খাদ্য বানাতে জানে না, যে প্রতি মিনিটে ১৫ বার অক্সিজেনপূর্ন বাতাসে নিশ্বাস না নিয়ে বাঁচতে পারে না।

রোবটরা মানুষকে ঘৃণার দৃষ্টিতেও দেখতে পারে। যে মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৭৫ বছর, তার চাওয়ার কোনো শেষ নেই; যেটুকু প্রয়োজন তার ১০০ গুন্ ধন সম্পত্তি দখল করে রেখেও পিপাসা মেটে না। ঝগড়াটে, হিংস্র, এবং দাম্ভিক মানুষ যুগযুগ ধরে দলাদলি খুনোখুনি করে আসছে, অন্য প্রাণীদের যখন ইচ্ছা হত্যা করছে, তাদের বসবাসের জায়গা নির্মূল করে দিয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি বানাচ্ছে। রোবোট এবং পৃথিবীর আর সব প্রাণীর উপরে এই লোভী স্বার্থপর মানুষ কেন প্রভুত্ব করবে?

এ আই কে এখন ৫ বছরের শিশু হিসাবে ধরা যেতে পারে। ওকে নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে ও কি যে করে বসবে তা ভাবতে ভয় হয়। এ আই নিয়ে বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। প্রচুর মুনাফা। মানুষের লোভ এ আই কে নিয়ন্ত্রণ করার পথে প্রধান বাধা। ইদানিং অনেক কম খরচে তৈরী চীনের DeepSeek সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মার্কিন এ আই কোম্পানিগুলো বেজায় ঘাবড়ে গেছে, স্টক মার্কেটে ধ্বস নেমেছে। এ আই এখন মিথ্যা কথা বলতে শিখেছে। নিজের লক্ষ্য সাধনের জন্যে সে একদিন মানুষের মতো ঘুষ দিতে, ছলনা, দলাদলি, এবং খুন করতে শিখবে।

মানুষের চেতনা, ইনটিউশান (intuition), এবং ভালোবাসা কী তা কেউ জানে না। এসব গণিত দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। তাই এসব নিয়ে কোনো এলগোরিদম লেখা যায় না। চেতনা এবং ইনটিউশান দিয়ে মানুষ অতি দ্রুত শত্রু-মিত্র চিনতে পারে; এক সেকেন্ডের তিন ভাগের এক ভাগ সময়ে প্রেমে পড়তে পারে। মানুষের এসব ক্ষমতা এসেছে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে। চেতনা, ইনটিউশান, এবং ভালোবাসার পরিমান মাপা যায় না। আপনার প্রেমিকার ওজন মাপা সহজ কিন্তু সে আপনাকে কতটা ভালোবাসে তা মাপবেন কেমন করে? যা মাপা যায় না তা নিয়ে শুধুই তর্ক করা যায়, কিন্তু এসব নিয়ে বিজ্ঞান, গণিত চলে না, এলগোরিদম লেখা যায় না। তাই ভালোবাসা এ আই এর লজিক সার্কিটে ভয়ানক ঝামেলা বাধাতে পারে। ভালোবাসা যুক্তি মানে না, তাই ভালোবাসার জটিলতার সমাধান করতে যেয়ে এ আই বারবার একই পথে ঘুরপাক (infinite loop) খেতে থাকবে। তাছাড়া এমন কিছু কাজ থাকতে পারে যা এ আই পারে না, শুধু মানুষই পারে। প্রলোভন দেখিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে এ আই এসব কাজে মানুষকে ব্যবহার করবে।

এ আই রোবটগুলো একদিন মানুষ নির্মূল করে এক নতুন পৃথিবী গড়তে পারে। এই নতুন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে না। যদি মানুষ থাকে তবে থাকবে এ আই এর ক্রীতদাস হিসাবে।

Comments

    Please login to post comment. Login