📖 উপন্যাস: তাকদীর ও হালাল ভালোবাসার সংঘর্ষ (চ্যাপ্টার ১ - পার্ট ১-২)

তাকদীর ও হালাল ভালোবাসার প

🌙 উপন্যাস: তাকদীর ও হালাল ভালোবাসার সংঘর্ষ

✍️ লেখক: Morsalin Ahmad

📖 চ্যাপ্টার ১: অদেখা দোয়ার আলো

---

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

> “তুমি যাকে চুপিচুপি আল্লাহর কাছে চেয়ে এসেছিলে,
সেই তো একদিন সামনে এসে দাঁড়াবে…
ঠিক তখন, যখন তোমার ঈমানও প্রস্তুত থাকবে।”

---

🧕 পার্ট ১: এক দোয়ার চিঠি 💌

---

১️⃣ সকাল যেন অশ্রুতে ধুয়ে ফেলা শান্তি…

সকালটা অদ্ভুত নীরব। শহরতলির এক কোণে ছোট্ট পাকা বাড়ির বারান্দায় বসে আছে আইমানা হাফিজা।
তার গায়ে একরঙা সাদা চাদর, চোখে ঘুমের রেখা — কিন্তু মনে যেন জেগে আছে এক গভীর স্রোত।
পাখির ডাক, মসজিদের পাশ থেকে ভেসে আসা ফজরের তিলাওয়াত — সব মিলিয়ে এক অলিখিত দোয়ার অনুভূতি।

আইমানার মা বলতেন:

> “তুমি আমার জীবনের সেই দোয়া,
যার উত্তরটা আমি পেয়েছি অনেক কষ্টের পর।”

কিন্তু সে জানে না তার বাবা কে।
শুধু জানে — তার বাবা ছিলেন একজন শহীদ, এক হাফেজ, এক মুজাহিদ… হাফিজ মারওয়ান।
আজ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস তার — “তাকদীর ও দ্বীন” কোর্স।
কিন্তু ক্লাসের আগে সে যাবে তার “না-দেখা” বাবার কবর জিয়ারত করতে।

---

২️⃣ কবরের কাছে লেখা এক দোয়ার চিঠি…

সাদা মার্বেলে খোদাই করা লেখা:

> "হাফিজ মারওয়ান - শাহাদাতপ্রাপ্ত"

আইমানা ধীরে হাঁটছে। হাতে এক খাম — নামহীন, তবে চোখের পানিতে ভেজা এক দোয়ার চিঠি।
চিঠির ভাষা যেন আকাশেই পৌঁছায়:

> “আব্বু, আপনি চলে গেছেন — অথচ রেখে গেছেন এক শূন্যতা।
আমি জানি না, আপনাকে দেখে কী রকম হতো আমার ঈমান…
তবে আমি আপনাকে খুঁজে পাই প্রতিটি আয়াতে।
প্রতিটি নামাজে যখন বলি —
رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنكَ زَوْجًا صَالِحًا
তখন ভাবি, আপনি তো এমনই এক ব্যক্তি ছিলেন।
আমি চাই — এমন একজন আসুক…
যার ভালোবাসা হবে হালাল,
আর পথ হবে জান্নাতের দিকে।”

চোখে অশ্রু। বাতাসে যেন কোনো অদৃশ্য সাড়া…

---

৩️⃣ দেখা হয় যাদের সাথে, না বলে…

ঠিক তখনই — পেছনে একজোড়া পায়ের শব্দ।
চোখ তুলে দেখে — একজন তরুণ। সাদা পাঞ্জাবি, হাতে কুরআন, চোখে প্রশান্তির দীপ্তি।

সে শুধু বললো:

> “আল্লাহ আপনার চিঠির উত্তর দেবেন, ইনশাআল্লাহ।
কারণ যে দোয়া কান্নার ভিতর লেখা হয়,
সেটা ফেরত যায় না।”

কে সে? কীভাবে জানলো?
তরুণটি ধীরে সরে গেল… রেখে গেল এক অনুভবের কাঁপুনি।

---

৪️⃣ নাম পরিচয়হীন, কিন্তু হৃদয় যেন চিনে ফেলে…

ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শুরু — “তাকদীর ও দায়িত্ব”।
হঠাৎ শিক্ষক জানালেন:

> “আজ আমাদের অতিথি বক্তা আসছেন —
তাহমীদ হুসাইন, একজন কুরআন স্কলার ও হিফজ চ্যাম্পিয়ন।”

আইমানা চমকে ওঠে!
সেই তরুণ — কবরের পাশে যাকে দেখা গিয়েছিল — সে-ই আজ মঞ্চে দাঁড়িয়ে…
নাম: তাহমীদ হুসাইন।

---

৫️⃣ প্রেম যদি হয় হালাল দোয়ার ফল…

ক্লাস শেষে আইমানা চুপচাপ বেরিয়ে আসে।
সে ভাবে…

> “আল্লাহর দিকে ডাকা কোনো ভালোবাসা কি গুনাহ হতে পারে?
নাকি হালাল প্রেম — আসলে সেই,
যেটা তাকদীরের সাথে মিলেমিশে আল্লাহর পথে চলে যায়?”

চিঠির উত্তর কি মিলতে শুরু করেছে?
নাকি এটি কেবল শুরু…

---

🧕 পার্ট ২: হৃদয়ের হিজরতের শুরু 🕋

---

🕋 কোটেশন:

> “যে প্রেম আল্লাহর দরজায় সেজদা দেয়,
সেই প্রেমই আসলে একমাত্র হালাল ভালোবাসা।”

---

৬️⃣ তাহমীদ হুসাইন: মঞ্চে আলো, কিন্তু ভিতরে আঁধার…

তাহমীদ হুসাইন — ২২ বছর বয়স, ঢাকা শহরের পুরান এলাকা থেকে উঠে আসা।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছে, এরপর নেমেছে হারামের আঁধারে —
মিউজিক, গার্লফ্রেন্ড, রাত্রির অন্ধকার।

কিন্তু একদিন এক বৃদ্ধ হাফেজ কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন:

> “তুই যদি একবার এই কুরআনের ভেতর ডুবে দেখতি তাহমীদ,
তাহলে তোর সব হারানো দিন ফিরে আসতো… আল্লাহর রাস্তায়।”

সেই রাতেই তাহমীদ পুরনো হার্ডড্রাইভ ভেঙে ফেলে দেয়…
নতুন হিজরতের সূচনা…

---

৭️⃣ হিজরতের ফল কি শুধুই কষ্ট?

বন্ধুরা দূরে সরে গেছে, সমাজ সন্দেহ করে…
তাহমীদ তবুও বলে:

> “হিজরত যদি হয় হৃদয়ের,
তাহলে তাতে কষ্ট থাকলেও শান্তি থাকে।” 🕊️

---

৮️⃣ আইমানার মায়ের চোখে অদৃশ্য বিপদ…

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে আইমানা চুপচাপ।
মা শামিলা খাতুন বুঝতে পারেন, কিছু একটা ঘটেছে।

মেয়ে শুধু বলে:

> “মা, কাউকে না চিনেও চেনা চেনা লাগে… এটা কি হারাম?”

মা সেদিন রাতে তাহাজ্জুদের সেজদায় কাঁদলেন…

> “হে আল্লাহ, আমি আমার মেয়েকে তোমার পথে তুলে দিতে চেয়েছিলাম…
তুমি যদি তাকে কাউকে দাও, তবে সেই যেন হয়
তোমার রাস্তায় হেঁটে আসা এক দোয়ার উত্তর।”

---

৯️⃣ পরের দিন ক্লাসরুমে মুখোমুখি তাকদীর…

তাহমীদ ক্লাস নিচ্ছেন:

> “ভালোবাসা যদি তাকদীরের অংশ হয়, তবে তা কখনও গুনাহের রূপে আসে না।
বরং তা হয় এমন, যা দু'জন মানুষকে একসাথে জান্নাতের পথে টেনে নিয়ে যায়।”

আইমানা জিজ্ঞেস করে:

> “আপনি কি কাউকে খুঁজছেন — যাকে একদিন হারিয়ে ফেলেছিলেন?”

তাহমীদ বলে:

> “হ্যাঁ। আমি একদিন আমার ‘আমি’কে হারিয়েছিলাম।
এখন খুঁজছি… সেই কাউকে,
যাকে আল্লাহ আমার তাকদীরে রেখেছেন।
হয়তো সে এখনো দোয়া করে চলছে…”

---

🔟 নামহীন এক চিঠি — আবার…

সেদিন রাতে আইমানা আবার লিখলো এক চিঠি।
নাম নেই, ঠিকানা নেই — শুধু দোয়া:

> “হে সেই অচেনা…
তুমি যদি হও দোয়ার ফল, তবে আমি অপেক্ষা করতে রাজি আছি।
কিন্তু যদি তুমি এসে আমার তাকদীরে শত্রু হয়ে দাঁড়াও —
তবে আমি আমার ঈমান নিয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো।
কারণ, প্রেমে পরাজয় চলতে পারে…
কিন্তু ঈমানে নয়।” ❤️‍🔥

চিঠিটা সে রেখে আসে আবার সেই কবরের পাশে।
আকাশ নিশ্চুপ নয় —
হয়তো কোথাও একটা তাকদীর লেখা হচ্ছে নতুন করে…

---

🔚 পরিশিষ্ট:

> একটি চিঠি… একটি সেজদা…
আর একটি প্রেম — যার গন্তব্য হালাল ভালোবাসার জান্নাতি পথ।
এ যেন এক গল্প নয়… তাকদীরের সংঘর্ষে আল্লাহর দরবারে প্রেমের সেজদা।

---

🔮 পরবর্তী পর্বের টিজার:

📖 পার্ট ৩: তাকদীরের প্রতীক্ষা ও হালাল প্রেমের পরীক্ষায়

> যাদের ভালোবাসা আল্লাহর দরজায় সেজদা দেয়,
তাদের জন্য কেবল অনুভব নয় —
অপেক্ষা, ইস্তিখারা, আর ইমানের অগ্নিপরীক্ষা অপেক্ষা করে।
পারবে কি আইমানা ও তাহমীদ সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে?
নাকি তাকদীর এক নতুন মোড় এনে দেবে?

🔗পরবর্তী পর্ব পার্ট ৩: এর লিংক:-

👉https://fictionfactory.org/posts/11989

আরও পড়ুন: লেখকের আরেকটি উপন্যাস “তাকদিরের ছায়ায় তুমি" 

👉://fictionfactory.org/posts/11768

এবং “হারানো গোধূলির সন্ধানে”

👉://fictionfactory.org/posts/11686

পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে মতামত জানাতে ভুলবেন না।