স্বাধীন ইচ্ছা
১৮ মে ২০২৪
সুহৃদ সরকার
আমি একটা বিলাসী, আরামপ্রিয় বিড়াল। আমার মানুষ দুটো আমাকে আদর যত্নের কোনো কমতি রাখে না। কিন্তু আমি কেবল খাওয়া আর ঘুমিয়েই দিন কাটাই না। আমি ভাবি, বিশ্লেষণ করি। আর মানুষের যত আজব কাণ্ডকারখানা, তাতে আমার মাথার চুল (যদি থাকত!) দাঁড়িয়ে যায়।
আজকে আমার চিন্তার বিষয় – মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা। ওরা বলে, ওদের যা খুশি তাই করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু আমার বিড়ালের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ব্যাপারটা কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হয়।
আমার মানুষ দুটোকেই দেখুন না! একজন সকাল থেকে রাত অব্দি কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে অফিস যায়, আবার ফিরে এসে একই কাজ। আমি ভাবি, এই কি ওর স্বাধীন ইচ্ছা? নাকি ওর মধ্যে একটা অদৃশ্য দড়ি, যেটা ওকে টেনে নিয়ে যায় কম্পিউটারের কাছে?
আবার আরেকজন সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকে। যেন বইয়ের ভেতরেই ওর জগৎ। এটা কি ওর ইচ্ছা? নাকি ওর মগজে বই পড়ার একটা প্রোগ্রাম চলছে, যেটার নিয়ন্ত্রণ ওর নিজের হাতে নেই?
আমি যখন ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াই, মায়া ভরে ডাকি, কিংবা একটু খেলা করার জন্য লেজ দোলাই, তখন ওরা আমাকে আদর করে। কিন্তু এটা কি ওদের স্বাধীন ইচ্ছা? নাকি ওদের মধ্যে বিড়াল-আদর করা একটা সফটওয়্যার ইন্সটল করা আছে, যেটা নির্দিষ্ট সময়ে ওদেরকে সে কাজ করতে বাধ্য করে?
আবার দেখি, ওরা খাবারের সময় হলে খায়, ঘুমের সময় হলে ঘুমায়। এটা কি ওদের ইচ্ছা? নাকি ওদের শরীরের একটা অটোমেটিক সিস্টেম, যেটা ওদেরকে এই সব কাজ করতে বাধ্য করে?
আমি ভাবি, হয়তো মানুষের কোনো স্বাধীন ইচ্ছা নেই। হয়তো ওরা সবাই একটা নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মতো চলে। হয়তো ওদের সব কাজই আগে থেকে ঠিক করা।
আর আমরা বিড়াল? আমাদের কি স্বাধীন ইচ্ছা আছে? আমি তো যখন যা খুশি তাই করি। ঘুমাতে ইচ্ছে হলে ঘুমাই, খেতে ইচ্ছে হলে খাই, খেলতে ইচ্ছে হলে খেলি।
তবে আবার ভাবি, এই যে আমার যখন যা ইচ্ছে তাই করার ক্ষমতা, এটাও কি একটা প্রোগ্রামিং?
আমার মাথায় প্রশ্নের পর প্রশ্ন। এসব দার্শনিক চিন্তা আমার পছন্দ না। আমি এখন ঘুমাতে যাব। কারণ, ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে!