সহযাত্রীনী | থ্রিলার ফিকশন | দ্বিতীয় পর্ব
২৪ জুন ২০২৪
Naoroz Bipul
স্তম্ভিত হয়ে গেছে হাসীব। মেয়েটাকে গাড়িতে উঠিয়ে কোন বিপদের আশঙ্কা করছিল, আর কোন বিপদ এসে পতিত হলো ওর উপর। হাত-পাসহ পুরো শরীর যেন ঠাণ্ডা হয়ে জমে বরফ হয়ে আসতে চাইছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ধাতস্থ হয়ে নিলো হাসীব। আবার এসে গাড়ির দরজা খুললো। হ্যাঁ, আগের বার সে ঠিকই দেখেছে। কিন্তু মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট কিন্তু আরও কয়েক সেকেন্ড বেশি সময়- এতো কম সময়ের মধ্যে কে কোথায় থেকে আসলো? মেয়েটাকে গুলি করে আবার চলেও গেলো! গুলির কোনো শব্দও তো শুনতে পায়নি হাসীব। তাহলে কীভাবে সম্ভব? কেউ কি হাসীবের গাড়ির পেছনে পেছনে ওকে ফলো করে আসছিল? হয়তো সেটাই হবে। হাইওয়েতে ওকে কে বা কারা ফলো করছিল তা সে কেন লক্ষ্য করবে? সে কী এমন গুরুত্বপূর্ণ লোক যে ওকে কেউ ফলো করবে?
কেউ বা কারা আসলে হাসীবকে নয়, ফলো করছিল এই মেয়েটাকে। প্রথমেই মেয়েটার নাম ধাম পরিচয় জেনে না নিয়ে খেজুরে আলাপ শুরু করেছিল হাসীব। সেটাই ওর বড় ভুল। সে কী করে জানবে মেয়েটার পেছনে কেউ আছে? কোন সম্মন্ধির পুত মেয়েটাকে মারার আর জায়গা পেলো না- ঠিক করে হাসীবের গাড়িটাকেই বেছে নেয়া লাগে। মেয়েটা যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল- তখন কাজটা সেরে গেলে ব্যাটার কী ক্ষতি হতো? অন্তত হাসীব এই বিপদে পড়তো না।
কী করবে এখন হাসীব- কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ওর। হাইওয়ে পুলিশ টহল দিতে দিতে এদিকে এসে পড়লে তো বিপদের উপর বিপদ হয়ে যাবে। গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে হাসীব কী করছে, তা জানতে পুলিশ ওর কাছে আসবেই আসবে। পুলিশ আসার আগেই কিছু একটা উপায় বের করতেই হবে। কী সেই উপায়- মেয়েটার ডেডবডি হাইওয়ের পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে যাওয়া যায়। তা করতে গেলে তো অন্যান্য যানবাহনে থাকা কারো না কারো চোখ এদিকে পড়বেই।
উপায় বের করা নিয়ে চিন্তা করতে করতেই- মরার উপর খাড়ার ঘা পড়ার মতো অবস্থা হয়ে গেলো। একটা গাড়িকে গতি কমিয়ে নিয়ে আসতে দেখলো হাসীব। গাড়িটা গতি কমিয়ে নিয়ে এসে ওর গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পুলিশের জীপ। ড্রাইভারের পাশের সীট থেকে নেমে আসলো একজন লেডি অফিসার। কাছে আসার আগেই নিজ গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিলো হাসীব। লেডি অফিসারের পিছু পিছু আরও কয়েকজন পুলিশ জীপ থেকে নেমে আসলো।
লেডি অফিসার এসে হাসীবের সামনে দাঁড়ালো। ওর আপাদমস্তক দেখলো। ওর গাড়ির দিকে তাকালো। সিটে হেলান দিয়ে গাড়িতে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখলো। ঘুমাচ্ছে বলে মনে হলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে হাসীব। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলে আবার কোন ঝামেলায় পড়তে হয়- সেই জন্যই কিছু বলল না সে। লেডি অফিসারের বুকের বা পাশে লাগানো ব্যাজের দিকে তাকালো। লেখা আছে এক শব্দের নাম- নুমা।
গাড়ি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে হাসীবের দিকে তাকালো নুমা। বলল, ‘কী করছেন এখানে গাড়ি থামিয়ে?’
‘কিছু না ম্যাম।’ জবাবে বলল হাসীব, ‘প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে দাঁড়িয়েছিলাম।’
গাড়িতে মেয়েটাকে ইঙ্গিত করে নুমা বলল, ‘উনি আপনার স্ত্রী?’
‘না ম্যাম।’
‘গার্লফ্রেন্ড?’
‘গার্লফ্রেন্ডও না ম্যাম।’
‘তাহলে?’
‘এ্যাকচুয়েলি ম্যাম, আমি মেয়েটাকে চিনিনা।’
‘স্ত্রী না, গার্লফ্রেন্ড না, তাকে আপনি চিনেনও না- তাহলে সে আপনার গাড়িতে কী করছে?’ বলল নুমা, ‘অন্য কোনো ব্যাপার স্যাপার আছে নাকি?’
জবাবে কিছু বলতে পারলো না হাসীব। অন্য একজন পুলিশ ততক্ষণে গাড়ির কাছে চলে গেছে। সে নুমার উদ্দেশ্যে বলল, ‘স্যার, এইটা একটা ডেডবডি!’
‘ডেডবডি! কী বলছো সাদিক?’
গাড়ির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো নুমা। ততক্ষণে সাদিক গাড়ির দরজা খুলেছে। পুরো দৃশ্য খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো সে। বুকের ঠিক মাঝখানে ছিদ্রটা দেখে নুমা প্রাথমিকভাবে ধারণা করলো- পরপর কয়েকটা গুলি করা হয়েছে। গুলি করা হয়েছে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে মেয়েটা। ওর পায়ের কাছে একটা পিস্তল পড়ে থাকতে দেখলো নুমা। এএসআই সাদিককে গ্লোবস দিতে বলল সে। জীপের দিকে দৌড় দিলো সাদিক। ফিরে আসলো গ্লোবস নিয়ে। নুমাকে দিলো।
গ্লোবস পরে পিস্তলটা হাতে নিলো নুমা। ইউএস নাইনএমএম এমনাইন-পিয়েট্রা বেরেটা-সিক্স ফাইভ ফোর নাইন জিরো মডেলের পিস্তল। একেবারে ব্র্যাণ্ড নিউ। কিন্তু সিরিয়াল নম্বরটা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। লাইসেন্স করা পিস্তল বলেই হলো নুমার। সিরিয়াল নম্বর নষ্ট করে দেয়ার উদ্দেশ্য হলো- কার নামে পিস্তলটা লাইসেন্স করা হয়েছে, সেটা বুঝতে না দেয়া। পিস্তলটা হাতে নিয়ে হাসীবের সামনে আসলো নুমা। বলল, ‘বউ পুষতে পারবেন না তাহলে বিয়ে কেন করেছিলেন বলন তো? সমস্যা থাকলে ছেড়ে দিতে পারতেন, বউকে মেরে ফেললেন কেন?’
‘ম্যাম আপনার ভুল হচ্ছে! এই মেয়েটা আমার বউ না!’ বলল হাসীব, ‘আমার কাছে সে লিফট চেয়েছিল, তাকে আমি চিনিনা!’
হাতের পিস্তলটা হাসীবকে দেখালো নুমা। বলল, ‘এইটার লাইসেন্স আছে আপনার?’
‘থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ, পিস্তলটা আমার না।’
‘বেশ ঝামেলা করছেন তো আপনি!’ ধমক দিয়ে বলল নুমা, ‘বউ আপনার না, পিস্তল আপনার না- এখন কি বলবেন যে গাড়িটাও আপনার না?’
‘তা বলবো না ম্যাম, গাড়িটা আমারই।’
‘আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স আর গাড়ির অন্যান্য ডকুমেন্টস দেখান।’
পকেট থেকে ওয়ালেট বের করলো হাসীব। ওয়ালেট থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করলো। নুমার হাতে দিলো। অন্যান্য সব ডকুমেন্টস গাড়িতে আছে। সেগুলো নিয়ে এসে নুমাকে দিলো। সব ডকুমেন্টস ঠিকঠাক দেখতে পেলো নুমা। ফিরিয়ে দিলো। বলল, ‘সাদিক…’
‘স্যার…’
‘এই ভদ্রলোকের গাড়ি ড্রাইভ করে থানায় নিয়ে চলো। আর হাসীব সাহেব, আপনি গাড়িতে উঠুন।’
জীপের দিকে পা বাড়ালো নুমা। ওর পিছু পিছু প্রায় দৌড় দিলো হাসীব। বলল, ‘ম্যাম প্লিজ, একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমার কথা বিস্তারিত শুনবেন তো…’
চট করে দাঁড়িয়ে পড়লো নুমা। হাসীব ভারসাম্য হারিয়ে নুমার গায়ের উপর প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো। শেষ মুহুর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করলো সে।
‘স্ত্রীকে হত্যার দায়ে আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে হাসীব সাহেব।’ বলল নুমা, ‘আপনার আর যা যা বলার আছে, সব থানায় গিয়ে বলবেন।’
আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না হাসীব। নুমার ইঙ্গিত পেয়ে দুজন কনস্টেবল আসলো। ওকে দুই পাশ থেকে ধরলো। টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে জীপের পেছনে তুললো। (তৃতীয় পর্বে চলমান)