Posts

ফিকশন

সহযাত্রীনী

June 24, 2024

Naoroz Bipul

Original Author নওরোজ বিপুল

বাম হাত তুলে থামতে ইশারা করছে মেয়েটা। কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলো হাসীব। নির্জন হাইওয়ে। বিপরীত লেন দিয়ে ভারী ভারী যানবাহন ছুটে চলে যাচ্ছে। হাসীবকেও ওভারটেক করে দূরপাল্লার গাড়ীগুলো ছুটে চলে যাচ্ছে। রাস্তায় কোনো পথচারী নাই। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে। এমন সময় নির্জন হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে মেয়েটা কেন হাত মারছে সেটাই বুঝে উঠতে পারলো না হাসীব। মেয়েটা ছিনতাইকারী কিংবা কোনো ডাকাত গ্যাঙের কেউ কি না কে জানে! মেয়েটাকে আল্ট্রামডার্ণ ধরনের কিছু মনে হলো না। পরনে সাধারণ সালোয়ার কামিজ। কাঁধে ঝুলানো একটা হ্যান্ডব্যাগ। লম্বা চুলের দুটো বেনি পেছন থেকে এসে বুকের উপর পড়ে রয়েছে। মেয়েটাকে হাত মারতে দেখে অন্যসব ভাবনা চিন্তা ছেড়ে গাড়ির গতি কমিয়ে নিয়ে আসলো হাসীব। একেবারে মেয়েটার সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো। হাত বাড়িয়ে বিপরীত পাশের জানালার গ্লাস নামালো। জানালায় মুখ রেখে মিষ্টি এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে তুললো মেয়েটা। কথাবার্তা শুরুর আগেই এমন মিষ্টি হাসি- কী মতলব আছে মেয়েটার মনে কে জানে! সে বলল, ‘আর ইউ গোয়িং টু ঢাকা?’ গাড়ির পেছনের সিটে, নিজের পাশের জানালা দিয়ে বাহিরে আর সামনের দিকে একবার করে তাকালো হাসীব। মেয়েটার দিকে ফিরলো। বলল, ‘গাড়ির ভেতরে বাহিরে আশেপাশে শুধু আমিই তো আছি। আমাকে কি আপনার বিদেশী মনে হচ্ছে?’ ‘না তো!’ আশ্চর্য্য হয়ে বলল মেয়েটা, ‘এমন কথা কেন বলছেন?’ ‘সিম্পল একটা কথা ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করার কী দরকার?’ বলল হাসীব, ‘বাংলায় বললে আমি কি বুঝতাম না?’ এবার আবার স্বশব্দে হাসলো মেয়েটা। বলল, ‘ওহ্ স্যরি স্যরি, আমি একটা কর্পোরেট অফিসে জব করি তো, ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে কথা বলতে হয়। অভ্যাস হয়ে গেছে।’ ‘ঠিক আছে। এবার বলেন হাত মারলেন কেন?’ ‘হাত মারলাম মানে কি?’ ‘আমাকে থামতে ইশারা করলেন কেন?’ ‘লিফট নিতে।’ বলল মেয়েটা, ‘ভুলভাল একটা লোকাল বাসে উঠে পড়েছিলাম। ওরা আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। বিপদে পড়ে লিফট নিতে অনেককে ইশারা দিয়েছি। দাঁড়িয়েছেন শুধু আপনি।’ ‘সুন্দরী কেউ লিফট চাইলে তো দিতেই হয়।’ বলল হাসীব। গাড়ির দরজা খুলে দিলো। বলল, ‘তাছাড়া, সুন্দরী কোনো নারীকে পাশের সীটে নিয়ে গাড়ি চালানোতে আলাদা একটা ফিলিংস পাওয়া যায়। উঠে পড়ুন।’ আবার একবার হাসীবকে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো মেয়েটা। গাড়িতে উঠে বসলো। সীটবেল্ট বেঁধে নিলো। কিছুটা বাঁকা দৃষ্টিতে হাসীবের দিকে তাকালো। বলল, ‘সুদর্শন কোনো যুবক যদি সুন্দরী বলে, তাহলে সব নারীই খুশী হয়। আমিও হয়েছি!’ ‘সত্যিই খুব খুশি হয়েছেন?’ ‘অবশ্যই।’ নিজের মোবাইল ফোন বের করলো হাসীব। ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করলো। বলল, ‘আপনার খুশিতে তাহলে একটা সেলফি হয়ে যাক- যদি আপনি অনুমতি দেন।’ ‘দিলাম। সেলফি নেন।’ হাসীবের কাছাকাছি কিছুটা অন্তরঙ্গ হয়ে আসলো মেয়েটা। ছবি তোলার ভঙ্গিমায় মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো। একটা সেলফি নেয়ার কথা বললেও, মোবাইল ফোন এদিক সেদিক ঘুরিয়ে সরিয়ে কয়েকটা সেলফি তুললো হাসীব। মেয়েটা বলল, ‘হয়েছে? এবার যাওয়া যাক।’ মোবাইল ফোন রেখে দিলো হাসীব। গাড়ি চালাতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে গাড়ির গতি বাড়ালো। হাইওয়েতে কম গতিতে গাড়ি চালানোর কোনো সুযোগ নাই। গাড়ি চালানোর পাশপাশি রিয়ার ভিউ মিররে পাশে বসা মেয়েটাকে প্রায় প্রায় দেখছে হাসীব। নাম পরিচয় কিছু না জেনেই মেয়েটাকে লিফট দিতে রাজি হয়ে গেছে সে। কাজটা করা ওর একেবারেই উচিৎ হয়নি। এতে ওর অনেক বিপদ হতে পারে। হতে পারে মেয়েটার ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারী টিম হাইওয়ের সামনে কোথাও অপেক্ষা করছে। মেয়েটার কোনো ধরনের সংকেত পেয়ে হয়তো তার টিম হাসীবের গাড়ি আটকাবে। তেমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আগেই মেয়েটার নাম পরিচয় ঠিকানাসহ সবকিছু জেনে উচিৎ হাসীবের। সে বলল, ‘আপনি কর্পোরেট অফিসে জব করেন?’ জবাবে মেয়েটা খুবই সংক্ষেপে বলল, ‘হ্যাঁ।’ ‘আপনাকে দেখে কিন্তু তা মনে হচ্ছে না।’ ‘কী দেখে মনে হচ্ছে না?’ ‘কর্পোরেট অফিসে জব করতে হলে অনেক আল্ট্রামডার্ণ হতে হয়।’ বলল হাসীব, ‘কিন্তু আপনার গেটআপ, মেকআপ, লুক, স্টাইল- কোনো কিছুতেই আপনাকে মডার্ণই মনে হয় না।’ ‘ওহ্ সেই ব্যাপার, অফিস টাইমে আল্ট্রামডার্ণ হয়েই অফিস করি।’ বলল মেয়েটা, ‘ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম, তাই খুব সিম্পল।’ ‘কোন অফিসে জব করেন আপনি?’ ‘অফিসের নাম জেনে কী করবেন, আমি মডার্ণ নাকি আল্ট্রামডার্ণ তা দেখতে যাবেন?’ এবার স্বশব্দে হেসে উঠলো হাসীব। বলল, ‘সময় সুযোগ করে নিতে পারলে তো অবশ্যই যাবো।’ ‘তাহলে তো অফিসের নাম বলা যাবে না।’ ‘কেন?’ ‘অফিস টাইমে আমার অফিসে কোনো পার্সোনেলের পার্সোনাল গেস্ট এ্যালাইড না।’ চোখ তুলে একবার রিয়ারভিউ মিররে তাকালো হাসীব। দেখতে পেলো মেয়েটা মিররের ভেতর দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সামনে তাকালো হাসীব। গাড়ির গতি কমিয়ে নিয়ে আসলো। এক সময় দাঁড়িয়ে পড়লো। কিছুটা আশ্চর্য্য হলো মেয়েটা। জিজ্ঞেস করলো, ‘আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম কেন?’ সীট বেল্ট খুললো হাসীব। বলল, ‘প্রচন্ড নিম্নচাপ!’ মুখে একটা হাত চেপে পুরো শরীর কাঁপিয়ে খলখল করে হেঁসে উঠলো মেয়েটা। বলল, ‘এই খোলা রাস্তায়?’ ‘কোনো উপায় নাই।’ বলল হাসীব। গাড়ির দরজা খুললো। গাড়ির চাবিটা নিলো। নেমে যেতে বলল, ‘আর বেশি দেরি করলে আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে যাবে।’ উঁচু হাইওয়ের ঢাল ধরে নিচে নেমে গেলো হাসীব। একটা বারের জন্য সে লক্ষ্যও করলো না- কালো রঙের একটা প্রাইভেট কার এসে ঠিক ওর গাড়ির পেছনে দাঁড়ালো। প্রাকৃতিক কার্য সম্পন্ন করতে, সাড়ে তিন থেকে সর্বোচ্চ পৌনে চার মিনিটের মতো সময় নিলো হাসীব। ঢাল বেয়ে আবার উপরে উঠে আসলো। গাড়ির সামনে দিয়ে গাড়ির বিপরীত দিকে যাচ্ছিলো সে। কী যে একটা খটকা লাগলো ওর। দাঁড়িয়ে দুই পা পিছিয়ে আসলো। মেয়েটার দিকের জানালার গ্লাস নামানো। সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। দরজা খুললো হাসীব। সাথে সাথেই আবারও ধাম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে- প্রায় ছিঁটকে সরে আসলো পেছন দিকে। মেয়েটার বুকের ঠিক মাঝ বরাবর একটা ছিদ্র। ছিদ্রটা দিয়ে গলগল করে বের হয়ে আসছে তাজা রক্ত। (দ্বিতীয় পর্বে চলমান)।

Chapters

Comments

    Please login to post comment. Login