সহযাত্রীনী | থ্রিলার ফিকশন | শেষ পর্ব

June 24, 2024

Naoroz Bipul

নিজ অফিসে কাজ করছে হাসীব। তাকিয়ে আছে কম্পিউটারের ডিসপ্লের দিকে। কেন যেন ওর মনে হচ্ছে, কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে সে হঠাৎ হঠাৎ নিম্নি সূবর্ণার চেহারা দেখতে পাচ্ছে। সে কাজই বন্ধ করে দিলো। নিজের চেম্বার থেকে বের হলো। ঈশানের চেম্বারে আসলো।
নিজের কাজে ব্যস্ত ঈশান। হাসীব এসে ওর কাজে বাধা সৃষ্টি করলো। বলল, ‘বন্ধু, খুব বিরক্ত করছে।’
ভ্রু-কুঁচকে বন্ধুর দিকে তাকালো ঈশান। বলল, ‘কে বিরক্ত করছে?’
‘তোর কাজিন।’
হাসীব কোন কাজিনের কথা বলছে তা ঠিকই বুঝতে পারলো ঈশান। সে বলল, ‘মানে কি, আমার কাজিন তোকে কীভাবে বিরক্ত করছে?’
‘আমার কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে হঠাৎ হঠাৎ তোর কাজিনের মুখটা দেখতে পাচ্ছি!’
‘এই শালা মরেছে! আমাকেও মারবে!’ বলল ঈশান। ধমক দিলো হাসীবকে। বলল, ‘তোকে বলেছিলাম না, আমার কাজিন তোর মতো লুইচ্চা না। নিজের দিক থেকে তুই ঠিক থাকিস! শেষ পর্যন্ত…’
বন্ধুকে কথা শেষ করতে দিলো না হাসীব। বলল, ‘ভুল বুঝিস না বন্ধু। তোর কাজিনকে আমি আমার গাড়ির সহযাত্রীনী করে নিতে চাই।’
‘মানেহ্?’
‘আমাকে একটু সাহস দিয়ে নিয়ে চল বন্ধু, আজই তোর কাজিনকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবো।’
ঈশানও ভেবে দেখলো, ব্যাপারটা মন্দ হয় না। ওর কাজিন নিম্নি সূবর্ণা এখনো অবিবাহিতা। ওর সহকর্মী অনেক উকিল ব্যারিস্টার ওকে পছন্দও করে। কিন্তু নিম্নি একই পেশার কারো সাথে কোনো রকম সম্পর্কে জড়াতে চায় না। ওর বাবা-মায়ের মতে, মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেয়ে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। এখনই মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারলে নাকি মেয়ের জন্য আর ছেলেই পাওয়া যাবে না। বন্ধুকে তাদের সামনে নিয়ে গিয়ে ঈশান তো তাদেরকে ছেলে পাওয়ায় সহযোগিতা করতেই পারে। সুতরাং ওকে নিয়ে চলে আসলো নিম্নিদের বাসায়। দরজায় কলিং বেল বাজানোর আগে ঈশান বলল, ‘ওহ্ হো বন্ধু, আমি তো চাবি গাড়িতেই রেখে চলে এসেছি। তুই নিম্নির সাথে হাই হ্যালো কর, আমি চাবিটা নিয়ে আসি।’
ঈশান চলে গেলো। নিম্নি এখন বাসাতেই আসছে সেই খবর নিয়েই ওরা এসেছে। কয়েক বার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজের ভেতর সাহস সঞ্চার করলো হাসীব। তর্জনী বাড়িয়ে কলিং বেলে টিপ দিয়ে দিলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। কেউ দরজা খুলছে না। কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করার পর আবার আঙ্গুল বাড়ালো হাসীব। আঙ্গুল কলিং বেল পর্যন্ত যাওয়ার আগেই দরজা খুলে গেলো। নিম্নি সূবর্ণা নিজেই দরজা খুলেছে। হাসীবের বাড়ানো আঙ্গুলের দিকে তাকালো সে। হাসীব চট করে হাত নামিয়ে নিলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো।
ভ্রু-কুঁচকে হাসীবের আপাদমস্তক দেখলো নিম্নি। বলল, ‘কি?’
জবাবে কী বলবে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না হাসীব। ওকে আমতা-আমতা করতে দেখে আবারো নিম্নিই বলল, ‘কেস থেকে তো বের করে নিয়ে এসেছি। এখন আবার কী জন্য এসেছেন?’
এবার জবাবে হাসীব বলল, ‘আমি আসলে ম্যাম, আবার ফেঁসে গেছি! আপনি ছাড়া কেউ উদ্ধার করতে পারবে না।’
‘আচ্ছা, তো বলেন দেখি আবার কীসে ফেঁসেছেন?’ বলল নিম্নি, ‘আবার কি নতুন কোনো বউ বের হয়েছে?’
‘নতুন বউ বের হয়নি ম্যাম। তবে চাইছি যে, নতুন কেউ বউ হয়ে আসুক।’
‘আপনার কথাবার্তা ক্লিয়ার না। আরেকটু ক্লিয়ার করে বলেন।’
‘এ্যাকচুয়েলি ম্যাম, আমি আসলে একটা প্রপোজাল নিয়ে এসেছি আপনার কাছে।’
‘কী প্রপোজাল?’
‘আমাকে বিয়ে করবেন?’
কিছুটা বোকা বোকা চেহারায় কয়েক মুহুর্ত হাসীবের দিকে তাকিয়ে থাকলো নিম্নি। সে মোটেও রাগান্বিত হলো না। খারাপ কিছুই বলেনি হাসীব। বিয়ের প্রপোজ করেছে। বিয়ের প্রপোজ কখনোই খারাপ কিছু নয়। নিম্নি সূবর্ণা সুন্দরী উদ্ভিন্নযৌবনা একটা মেয়ে। ওকে দেখে ভালো লাগলে কোনো ছেলে বিয়ের প্রপোজ করতেই পারে। প্রপোজ এক্সেপ্ট করা কিংবা না করা তো নিম্নির সিদ্ধান্ত। 
নিম্নি ভেতরের দিকে একবার তাকালো। ওর বাবা এখন অফিসে। মা কোথায় আছে তা দেখলো। আশেপাশে কোথাও তাকে দেখা গেলো না। সামনে এগিয়ে এসে সে বাহিরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। হাসীবের দিকে তাকালো। বলল, ‘আপনি আমাকে বিয়ে করতে এসেছেন?’
‘যদি আপনি অনুমোদন করেন।’
‘এতবড় সাহস আপনার, আমাকে আপনি বিয়ের প্রপোজ করেন!’
এই পর্যায়ে লিফটের দরজা খুলে গেলো। ঈশান লিফট থেকে বের হয়ে আসলো। নিম্নির প্রশ্নের জবাবে সে বলল, ‘এখানে সাহসের কী দেখলি? তোকে আমার ফ্রেন্ডের ভালো লেগেছে, বিয়ে করতে চেয়েছে। আমার ফ্রেন্ড কি তোর অযোগ্য নাকি?’
দুই বন্ধুকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো নিম্নি। বলল, ‘ওহ্, তাহলে সবকিছুতে তোর ইন্ধন আছে?’
‘ইন্ধন বলতে কিছু না। তোকে ভালো লাগার কথা সে সবার আগে আমাকে জানিয়েছে।’ বলল ঈশান, ‘আমিও ভেবে দেখলাম- মামা-মামী তো তোর জন্য ছেলে খুঁজছেই। সেই ছেলে আমার ফ্রেন্ড হলে সমস্যা কি?’
‘সমস্যা নাই?’
‘আমার তো মনে হয় নাই।’
দরজা খুললো নিম্নি। বলল, ‘আমাকে বিয়ে করার সাধ জেগেছে না তোর ফ্রেন্ডের? ভেতরে নিয়ে আয়, সাধ কীভাবে মিটিয়ে দিতে হয় তা দেখাচ্ছি!’
নিম্নি অপেক্ষা করলো না। ভেতরে চলে গেলো। হাসীব পেছনে ঘুরে, ‘চল বন্ধু, চলে যাই। কাজ হবে না। বেডি হুমকি দিয়ে কথা বলে!’ বলে লিফটের দিকে যেতে লাগলো সে।
ঈশান ওকে থামালো। টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘শালা গর্দভ, সত্যিই যদি হুমকি দিতো তাহলে কি তোকে ভেতরে নিয়ে যেতে বলতো? ভেতরে যেতে বলেছে মানে সে রাজি আছে। সুযোগ মিস করিস না। তাড়াতাড়ি আয়।’
টেনেটুনে হাসীবকে ভেতরে নিয়ে আসলো ঈশান। লিভিং রুমে এসে পাশাপাশি বসলো ওরা। নিম্নিকে কোথাও দেখা গেলো না। নিম্নির পরিবর্তে আসলো ওর মা।
আজ থেকে ঠিক তিন সপ্তাহ পর হাসীব আর নিম্নিকে বাসর ঘরে খুব ঘনিষ্ট আর অন্তরঙ্গ অবস্থায় সেলফি তুলতে দেখা গেলো।