সহযাত্রীনী | থ্রিলার ফিকশন | সপ্তম পর্ব

২৪ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

দরজায় নক হলে সেদিকে তাকালো এসইপি আব্দুল গফুর। এসআই সোহান জানালো, হাসীব আর তার বন্ধু ঈশান এসেছে। হাসীবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই হেড কোয়ার্টার্সে ডেকেছে আব্দুল গফুর। সে বলল, ‘হাসীবকে আসতে বলো, আর ঈশানকে ওয়েটিং রুমে বসাও।’
অনুমতি নিয়ে ভেতরে আসলো হাসীব। অফিসার ওকে কী জিজ্ঞাসা করতে ডেকেছে তা সহজেই অনুমান করতে পারছে সে। নুমা যা জিজ্ঞেস করেছে, এই অফিসারও সেইসবের বাইরে আর কী জিজ্ঞেস করবে? হাসীবকে শুধু সজাগ থাকতে হবে যে- ওর জবাব যেন একইরকম হয়। একটু এদিক ওদিক হলেই ঝামেলায় পড়ে যেতে হবে। 
অফিসারের ইশারা পেয়ে সামনের চেয়ারে বসলো হাসীব। নিজ থেকে কিছুই বলতে গেলো না। আব্দুল গফুর জিজ্ঞেস করলো, ‘তারপর, কেমন চলছে আপনার ইনভেস্টিগেশন?’
‘শুধু আলিয়ার পরিচয় জানা ছাড়া আর বেশি এগুনোর সময় বের করতে পারিনি স্যার।’ বলল হাসীব, ‘মাঝখান দিয়ে আপনাদের ডাক্তারনী নীলিমা একটা ঝামেলায় ফেলতে ফেলতেও বাঁচিয়ে দিয়েছে।’
‘সে আবার আপনাকে কী ঝামেলায় ফেলতে গিয়েছিল?’ বলল আব্দুল গফুর, ‘আপনি কি তার সাথেও সেলফি তুলতে গিয়েছিলেন নাকি?’
‘ইচ্ছে তো করছিল স্যার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইচ্ছেটা ত্যাগ করেছি।’
‘কেন?’
‘বাজে হবিটা থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি।’
‘গুড, অপ্রয়োজনীয় হবি কোনো সুফল বয়ে আনে না।’ বলল আব্দুল গফুর, ‘শুরু থেকেই আপনি দাবি করে আসছেন- আলিয়াকে চিনেন না। কিন্তু আপনি ঠিকঠাক মতো তার অফিসে চলে গিয়েছিলেন। কীভাবে?’
‘মনোহরিণী রাজকন্যা আমাকে আলিয়ার অফিসের নাম বলেছিল স্যার।’
‘মনোহরিণী রাজকন্যা কে?’
‘একটা ফেসবুক প্রোফাইল।’
‘ফেসবুকের একটা প্রোফাইল আপনাকে আলিয়ার তথ্য দেবে কেন?’ জিজ্ঞেস করলো আব্দুল গফুর, ‘আলিয়ার সাথে তার সম্পর্ক কি, আর সে আপনাকে চেনে কীভাবে?’
‘আলিয়ার সাথে তার কী সম্পর্ক তা আমি বলতে পারবো না স্যার।’ বলল হাসীব, ‘কেন তথ্য দিয়েছে সেটাও জানি না। ফেসবুকে আমার একটা পোস্ট দেখে সে আমাকে নক করেছিল।’
‘কী পোস্ট দিয়েছিলেন?’
ফেসবুক ওপেন করে পোস্টটা অফিসারকে দেখালো হাসীব। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে পোস্টের ক্যাপশন পড়লো আব্দুল গফুর। পোস্ট করার তারিখ দেখলো। জামিনে ছাড়া পেয়ে এসে পোস্টটা করেছিল হাসীব। আব্দুল গফুর বুঝতে পারলো, আলিয়ার পরিচয় বের করার উদ্দেশ্যেই সে পোস্ট করেছিল। মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিলো আব্দুল গফুর। বলল, ‘প্রোফাইলটার সাথে আপনার চাট হিস্টোরি দেখান।’
মেসেঞ্জার ওপেন করে মোবাইল ফোন আবার অফিসারের হাতে দিলো হাসীব। প্রত্যেকটা টেক্সট খুব ভালোভাবে পড়লো আব্দুল গফুর। মোবাইল ফোন আবার ফিরিয়ে দিলো। বলল, ‘প্রোফাইলটার লিংক কপি করে আমাকে টেক্সট করেন।’
অফিসারের নম্বর জেনে নিয়ে মনোহরিণী রাজকন্যার প্রোফাইল লিংক হোয়াটএ্যাপে টেক্সট করলো হাসীব। ডেক্সটপ থেকে লিংকে ক্লিক করে প্রোফাইলে ঢুকলো আব্দুল গফুর। দেখতে পেলো প্রোফাইলটা লকড। প্রোফাইল পিকচারের ছোট্ট বৃত্তে দুটি চোখের ছবি দেখতে পেলো আব্দুল গফুর। চোখ দুটো ভালোভাবে লক্ষ্য করলো সে। এমন চোখ কোথাও দেখেছে কি না তা মনে করার চেষ্টা করলো। এই চোখ আর প্রোফাইল- দুটোই ফেইক হতে পারে। 
ডেস্কটপ থেকে চোখ সরিয়ে হাসীবের দিকে তাকালো আব্দুল গফুর। জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনার বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব কতদিনের?’
প্রশ্ন শুনে ভ্রু-কুঁচকালো হাসীব। বলল, ‘স্যরি স্যার, আপনার প্রশ্ন ঠিক বুঝতে পারিনি।’
‘আপনার বন্ধু ঈশানের সাথে আপনার বন্ধুত্ব কতদিনের?’
‘ক্লাস ফাইভ উত্তীর্ণ হয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকে।’ বলল হাসীব, ‘স্কুল কলে ইউনিভার্সিটি- একসাথে পড়ালেখা করেছি। আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন স্যার?’
‘দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আপনাদের।’ বলল আব্দুল গফুর, ‘দীর্ঘদিনের এই পথচলায় কোনো দিন কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল, যার প্রেক্ষিতে আপনার বন্ধু আপনাকে ফাঁসাতে পারে?’
‘স্যার, বন্ধুত্বের মধ্যে তো ঝগড়াঝাটি কথা কাটাকাটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েই থাকে। সেগুলো সাময়িক সময়ের জন্য। ঈশান আমার পেছনের বন্ধু নয়। সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে বিপদ আপদ নিজের উপরে নেয়ার বন্ধু।’
‘তাহলে তো হয়েই গেলো।’ বলল আব্দুল গফুর, ‘বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো সমস্যা নাই। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ, আপনি যেতে পারেন।’
অফিসারের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারলো না হাসীব। অফিসার উল্টো বন্ধুত্বের মধ্যেই ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। অফিসারের চেম্বার থেকে বের হলো সে। ওয়েটিং রুম থেকে ঈশানকে ডেকে নিয়ে পিবিআই হেডকোয়ার্টার থেকে বের হলো। নিজেদের অফিসে যাওয়ার পথে অফিসারের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে বন্ধুর সাথে আলাপ করলো হাসীব। ঈশান জানালো, আব্দুল গফুরের টিমের অন্যান্যরা ওকেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই ধরনের কথাবার্তা জিজ্ঞেস করেছিল।
ওদিকে, হাসীব চেম্বার থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর- টিমের সবাইকে চেম্বারে ডাকলো আব্দুল গফুর। বলল, ‘তোমাদের যার যার যতো সোর্স আছে সবাইকে এ্যাক্টিভেট করো।’
সবাই একসাথে বলল, ‘ইয়েস স্যার!’
‘সোহান আর রেবেকা…’
‘স্যার…’
‘তোমাদের দুজন করে সোর্সকে হাসীব আর ঈশানের পেছনে লাগাও।’ বলল আব্দুল গফুর, ‘ওদের ব্যাকগ্রাউন্ডসহ দুজনের মধ্যে কোনো কমন নারী আছে কি না, সেই নারী আলিয়া কি না- তা বের করো।’
‘ওকে স্যার…’
‘জিহান আর সোনালী…’
‘স্যার…’
‘তোমাদের সোর্সদেরকে ক্রিস্টল আই কোম্পানির সকল স্টাফের পেছনে লাগাও।’
‘ওকে স্যার…’
‘মাসুদ…’
‘স্যার…’
‘আমাদের সন্দেহের তালিকায় থাকা প্রত্যেকের গত ছয় মাসের কললিস্ট বের করো।’
‘ওকে স্যার…’
নির্দেশনা পেয়ে নিজ নিজ কাজে চলে গেলো টিমের প্রত্যেকেই। নিজ চেয়ার থেকে উঠে হোয়াইট বোর্ডের সামনে আসলো আব্দুল গফুর। হোয়াইট বোর্ডে তদন্তের একটা রোডম্যাপ লিখে রেখেছে সে। তালিকায় এক নম্বরে থাকা অপশনটা কেটে দিলো। দ্বিতীয় পোস্টমর্টেমে আলিয়ার প্রেগন্যান্সির বিষয়টা জানতে পেরেই- হাসীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকেছিল আব্দুল গফুর। কিন্তু ডা. নীলিমা আবার রিপোর্টে বলেছে- ভ্রুণের ডিএনএ’র সাথে হাসীবের ডিএনএ ম্যাচ করেনি। প্রসঙ্গটা উঠার পরেও অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিল আব্দুর গফুর। হাসীবও প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেছে। হাসীবের বন্ধু ঈশানের ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করা দরকার। কারো সাথে আলিয়ার সম্পর্কের কারণেই অকালে জীবনটা দিতে হয়েছে ওকে। (অষ্টম পর্বে চলমান)।