সহযাত্রীনী | থ্রিলার ফিকশন | একাদশ পর্ব

২৪ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

ক্লায়েন্ট কাজিনের বন্ধু হওয়ায় তাকে বাসাতেই ডেকে পাঠালো নিম্নি সূবর্ণা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে আসলো ঈশান। খুবই সাধারণ পোশাক পরে আছে নিম্নি সূবর্ণা। ওড়নাটা মাফলারের মতো করে গলায় রেখে, খুবই পরিপাটি করে বুকের উপর ঝুলিয়ে রেখেছে সে। চুল মাথার পেছনে কাঁটা দিয়ে আটকিয়ে রেখেছে। সে লিভিং রুমে এসে পায়ের উপর পা তুলে সিঙ্গেল সোফায় বসলো। বলল, ‘বলুন হাসীব সাহেব।’
জবাবে হাসীব বলল, ‘আপনার কাছে আসলেই একটা প্রশান্তির অনুভূতি বুলিয়ে যায় ম্যাম!’
বেকুব হয়ে বন্ধুর দিকে তাকালো ঈশান- এই শালা বলে কি! ওদিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘কেন?’
‘আপনার এই সুন্দর মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগে!’
সাথে সাথেই কিছু না বলে ঈশানের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘তোর ফ্রেন্ড কি আমার সাথে ফ্লার্ট করার জন্য এসেছে? দেবো নাকি নারী কেলেঙ্কারির একটা মামলায় ফাঁসিয়ে?’
‘আর ফাঁসায়েন না ম্যাম, এমনিতেই গলা পর্যন্ত ফেসে আছি!’ বলল হাসীব, ‘মনে যা আসে তা আসলে আটিকে রাখতে পারি না। নিজের অজান্তেই বের হয়ে যায়।’
‘সেই জন্যই তো ফেঁসেছেন জায়গামতো।’ নিম্নি সূবর্ণা, ‘কাজের কথায় আসি।’
কাজের কথাতেই চলে আসলো হাসীব। কয়েক দিনের তদন্ত রিপোর্ট বিস্তারিত জানালো সে। খুবই মনযোগ সহকারে শুনলো নিম্নি সূবর্ণা। হাসীবের দেয়া তথ্যগুলো মনে মনে যাচাই করতে থাকলো। ওদের বাসার কাজের মহিলা চা দিয়ে গেলো। হাসীব আর ঈশানকে চা খেতে বলে- ভেতরে চলে গেলো নিম্নি সূবর্ণা। ওদের চা খাওয়া শেষ হলে ফিরে আসলো। আগের জায়গায় একইভাবে বসলো। বলল, ‘ইয়াসিন যাহেরের পিস্তল চুরির ব্যাপারে আব্দুল গফুরের কাছে কোনো তথ্য নাই। জিডির কপিও নাকি এখনও তার হাতে পৌছায়নি। আপনি কি ইয়াসিন যাহেরের বাড়িতে যেতে চাইছেন?’
‘হ্যাঁ ম্যাম, যেতে চাইছি।’
‘কী পাওয়ার আশা করছেন?’
‘পিস্তল চুরির পেছনে তার বাড়ির কারো হাত আছে কি না তা জানার চেষ্টা করবো।’
‘আমার এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে আপনি যেতে পারবেন।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘আব্দুল গফুর এই ব্যাপারে সহযোগিতাও করবে।’
‘কিন্তু আমরা দুজনের একজনও যেতে পারবো না।’ বলল ঈশান, ‘আব্দুল গফুর আর ইয়াসিন যাহের দুজনেই আমাদেরকে চিনে। অন্য কাউকে পাঠাতে হবে।’
‘আমি নিজে সময় বের করতে পারবো না।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘অন্য কেউ তাহলে কে যাবে?’
‘আমাদের আরেক বন্ধু আছে- গিয়াসউদ্দিন।’ বলল ঈশান, ‘ওকে আমরা তোর এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পাঠাতে পারি।’
‘আব্দুল গফুরের সাথে কথা বলে আমি ব্যবস্থা করছি।’ হাসীবের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘আপনার যে মনোহরিণী রাজকন্যা…’
‘মনোহরিণী রাজকন্যা তো আমার নয় ম্যাম!’
ওর কথা শুনে ঈশানের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। ঈশান হাসতে লাগলো। বলল, ‘আরেহ্ শালা কথা তো শেষ করতে দিবি নাকি?’
‘ওহ্ তাই তো!’ বলল হাসীব, ‘প্লিজ ম্যাম, বলেন।’
‘মেয়েটার সম্পর্কে তিনটা পয়েন্ট নিয়ে চিন্তা করেন।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘ওর কন্ঠ আগে কোথায় শুনেছেন- এক। দুই- আলিয়া অনেক গোপন কথা মেয়েটাকে বলতো। সুতরাং ওর সাথে নিশ্চয় মেয়েটার ঘনিষ্ট কোনো সম্পর্ক ছিল। তিন- মেয়েটার হাতে যে রিঙটা দেখেছেন সেটা অন্য কোন মেয়ের হাতে দেখেছেন?’
‘পয়েন্টগুলো আমার মাথাতেও এসেছে ম্যাম, আপনিও পয়েন্টগুলো ধরেছেন, সুতরাং এখন চিন্তা করতেই হচ্ছে।’
‘করেন। আর ইয়াসিন যাহেরের বাড়িতে গিয়ে কী কী বিষয় জানতে হবে, তা আপনার সেই ফ্রেন্ডকে শিখিয়ে দেন।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘আমার কাছে আগে নিয়ে আসবেন। আমি কিছু পয়েন্ট বলে দিবো। এবার আপনি যান। গিয়ে ধীরে সুস্থে চিন্তাভাবনা করেন।’
‘এখনই চলে যাবো ম্যাম?’ বলল হাসীব, ‘আরেকটু থাকি?’
নিম্নি সূবর্ণা আর কোনো কথা বলল না। দাঁড়িয়ে ঈশানের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘তোর এই ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভাগ এখান থেকে।’ সে নিজে ভেতরে চলে গেলো।
হাসীবকে টেনেটুনে নিম্নি সূবর্ণার বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসলো ঈশান। গাড়িতে বসে বলল, ‘তোকে আমি আগেই বলছিলাম, নিজের দিক থেকে ঠিক থাকিস। শেষ পর্যন্ত আমার কাজিনের সাথেও ফ্লার্ট করছিস?’
‘ফ্লার্ট নয় রে ভাই, তোর কাজিনরে আমার সত্যিই খুব ভাল্লাগছে!’ বলল হাসীব, ‘যাকে ভাল্লাগছে, সে তোর কাজিন হয়ে গেছে। কী করবো আমি এখন- ওর সামনে গেলেই বুকের ভেতর কীসের একটা অনুভূতি কাজ করে!’
‘তোর এই অনুভূতি জেনে নিম্নি যদি কেস ছেড়ে দেয়, তখন কী করবি?’
‘কারেক্ট কথা বলেছিস তো!’ বলল হাসীব, ‘এমন ফেঁসে যাওয়া গেছি রে ভাই, অনুভূতিটাও ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারছি না! যাহ্, আই স্যয়্যার- কেস শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কিচ্ছু বলবো না!’
গাড়ি চালাতে লাগলো ঈশান। দুই বন্ধু একসাথে থাকলে হাসীবের গাড়ি সব সময় ঈশানই চালায়। ওরা গিয়াসউদ্দিনের বাসায় আসলো। সবকিছু বুঝিয়ে শিখিয়ে ওকে একদিন নিম্নি সূবর্ণার কাছে নিয়ে গেলো। নিম্নি সূবর্ণা আরেক দফা ট্রেনিং দিলো ওকে। এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পিবিআই এএসপি আব্দুল গফুরের সাথে ইয়াসিন যাহেরের বাড়িতে পাঠালো নিম্নি সূবর্ণা। প্রত্যেক কাজের লোক থেকে শুরু করে ইয়াসিন যাহেরের বউ পর্যন্ত সবার সাথে কথা বলল গিয়াসউদ্দিন। পিস্তল চুরির সাথে কাউকেই জড়িত মনে হলো না ওর। 
শেষে নিজের কাছে ফ্লোর টেনে নিলো আব্দুল গফুর। ইয়াসিন যাহেরের বউ মুনমুনকে বলল, ‘জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ম্যাম, প্রয়োজন হলে আমরা আবার আপনাকে বিরক্ত করতে আসবো।’
‘অবশ্যই আসবেন অফিসার।’ বলল মুনমুন, ‘যেকোনো ধরনের সহযোগিতা পাবেন আপনি।’
ডিফেন্স লইয়ার ব্যারিস্টার নিম্নি সূবর্ণার এ্যাসিস্ট্যান্টের দিকে তাকালো আব্দুল গফুর। বলল, ‘এবার যাওয়া যাক।’
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পয়েন্ট যা যা প্রয়োজন- তা মস্তিষ্কে নোট করে নিয়েছে আব্দুল গফুর। গিয়াসউদ্দিন নোট করেছে নিজের মতো। ফিরে এসে সে তার বন্ধুদেরকে সবই জানালো। সব জেনে ঈশান আর হাসীব বুঝতে পারলো- ইয়াসিন যাহেরের বাড়ির ভেতরের কেউ পিস্তল চুরির সাথে জড়িত নয়। ইয়াসিন যাহের দেশের বাহিরে অবস্থান কালে, ইমার্জেন্সি দুইটা ফাইল সই করাতে মুনমুনের কাছে গিয়েছিল দুইজন। একদিন গিয়েছিল এমডি তাহের আজিজ। অন্য আরেকদিন গিয়েছিল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসার আলিয়া রায়হানার অনুপস্থিতিতে, তার দায়িত্বে থাকা মিথিলা।
ইয়াসিন যাহেরের বেডরুমে যাওয়ার অনুমোদন ওদের দুজনের মধ্যে কারো নাই। ওদের দুজনের মধ্যে কোনো একজনের পক্ষে তাহলে কীভাবে পিস্তল চুরি করা সম্ভব? ধরে নিতেই হচ্ছে, নিশ্চিতভাবে মিথ্যে কথা বলছে ইয়াসিন যাহের। সে সত্যিই দেশের বাহিরে গিয়েছিল নাকি দেশেই ছিল তা জানা দরকার। আলিয়াকে খুন করার কন্টাক্ট সে কোনো প্রফেশনাল কিলারকে দিয়েছিল কি না, সেটা আগে বের করে আনতে হবে। কোনো প্রফেশনাল কিলারকে কীভাবে খুঁজে বের করবে? ঢুকে পড়তে হবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে।
এই পর্যায়ে এসে গিয়াসউদ্দিন বলল, ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে তোদের যোগাযোগ না থাকতে পারে, আমার আছে।’
‘মানে কি?’ বলল হাসীব, ‘তুই আন্ডারওয়ার্ল্ড কন্ট্রোল করা শুরু করলি কবে থেকে?’
‘ওরেহ্ মুর্খ, আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড কন্ট্রোল করতে যাবো কেন?’ বলল গিয়াসউদ্দিন, ‘একজনের সাথে আমার জানাশোনা আছে- একজন লেডি গ্যাংস্টার আসমিনা। আমাদের এ্যাপার্টমেন্টের পাশের বস্তিতে থাকে।’
এবার কথা টেনে নিলো ঈশান। বলল, ‘গ্যাংস্টার বস্তিতে কেন থাকবে, তার তো অট্টালিকায় থাকার কথা।’
নিজের দুই গালে হাত রাখলো গিয়াসউদ্দিন। বলল, ‘সেই কথা আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম রে ভাই, জানিস কী করেছে?’
‘কী করেছে?’
‘আমার দুই কানের গোড়ায় দুইটা…’
গিয়াসউদ্দিন কথা শেষ করতে পারলো না। ওর কথা বুঝতে পেরে ঈশান আর হাসীব অট্টহাসি শুরু করলো। হাসীব বলল, ‘সে কেন তোর কানের গোড়ায় দুইটা দিবে, তুই কি ওর ভাতার নাকি?’
‘সে তো সেটাই মনে করে!’
একে অপরের দিকে তাকালো ঈশান আর হাসীব। ঈশান বলল, ‘মানে কি?’
‘আসমিনাকে তখনও আমি চিনতাম না।’ বলল গিয়াসউদ্দিন, ‘না জেনেই একদিন ওর একটা উপকার করেছিলাম। সে নাকি এতটায় উপকৃত হয়েছে- তখন থেকে নিজেকে আমার স্বঘোষিত গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছে!’
‘কী উপকার করেছিলি বন্ধু?’
‘সেটা নিয়ে গবেষণা করবি নাকি ওর সাথে কথা বলতে যাবি?’ বলল গিয়াসউদ্দিন, ‘আমার বিশ্বাস বন্ধু- আসমিনা আমাদেরকে হেল্প করবে।’
‘চল যাই।’
গিয়াসউদ্দিনের গ্যাংস্টার গার্লফ্রেন্ড আসমিনার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার জন্য বের হলো ওরা। গাড়িতে বসে বসে আসমিনার সম্পর্কে আরো অনেক ধারণা দিলো গিয়াসউদ্দিন। ওদের এ্যাপার্টমেন্টের পাশের বস্তিতে পৌঁছালো ওরা। বস্তির প্রবেশ পথের পাশে এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করলো ঈশান। একজনকে গাড়ির দিকে নজর রাখতে বলল গিয়াসউদ্দিন। দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে বস্তির এক গলি থেকে আরবক গলি, আরেক গলি থেকে অন্য গলি দিয়ে এসে অবশেষে গার্লফ্রেন্ডের ডেরার সামনে দাঁড়ালো। ডেরাটা অবশ্য টিন দিয়ে তৈরি নয়। এক কক্ষ বিশিষ্ট একেবারে পাকা একটা ফ্ল্যাট। 
আসমিনার ফ্ল্যাটের সামনে অল্পবয়সী একটা মেয়েকে দেখা গেলো। গিয়াসউদ্দিন ওকে বলল, ‘তোমার বুবু জান আছে নাকি?’
‘রইছে। খাড়ান খবর দিতাছি।’ বলল মেয়েটা। দরজা সামান্য খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে গিয়ে মেয়েটা বলল, ‘বুবু জান, দুলাভাই আইছে।’
ভেতর থেকে মেয়েটার কথা শুনে, দুই বন্ধুর দিকে একবার একবার করে তাকালো গিয়াসউদ্দিন। ওরা মুখে হাত চেপে হাসছে।
শোনা গেলো আসমিনার কন্ঠ, ‘হে অহন আইবো কোন হান থিকা, ঠিক দেখছোস?’
‘আমি ঠিকই দেখছি, বিশ্বাস না হইলে যাইয়া দেহেন।’
কয়েক মিনিট পর ডেরার দরজা খুলে গেলো। আসমিনাকে দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলো ঈশান আর হাসীব। ওদের চেয়ে মেয়েটা অবশ্যই সিনিয়র। অসাধারণ আর লোভনীয় দেহসৌষ্ঠব। স্কার্ট আর টপস পরে আছে। ওড়না মাফলারের মতো করে গলায় পেঁচিয়ে রেখেছে। গিয়াসউদ্দিনের দুজন ছেলে দেখে ওড়না টেনে নিচে নামালো আসমিনা। বলল, ‘আরেহ্ আমার পুঁটি মাছ, না ডাকলে তো তুই আমার কাছে আসোসই না! আইজ চইলা আইসোস যে? হেরা?’
জবাবে গিয়াসউদ্দিন বলল, ‘ওরা আমার বন্ধু।’
‘বন্ধুগেরে সাথে লইয়া আইছোস কীলিগা, গার্লফেন দেহানোর লিগা?’
‘দেখানোর জন্য তো অবশ্যই।’ হাসীবকে দেখালো গিয়াসউদ্দিন। বলল, ‘আমার এই ফ্রেন্ডের একটা হেল্পের জন্য নিয়ে এসেছি তোমার কাছে।’
‘তর বন্ধুর আমার হেলেপ লাগবো?’ বলল আসমিনা, ‘আয় আয়, বন্ধুগেরে লইয়া ভেতরে আয়।’
ভেতরের আসবাবপত্র সব বিলাসবহুল। গিয়াসউদ্দিন একটা সিঙ্গেল সোফায় বসলো। ঈশান আর হাসীব বসলো পাশাপাশি। আসমিনা এসে বসলো বিছানায়। হাসীবের দিকে তাকালো। বলল, ‘আপনেরা আমার চাইতে ছোডই হইবেন, তুমি কইরা কইতাম। কিছু মনে করন যাইবো না।’
‘তুমি করে কেন?’ বলল হাসীব, ‘আমাদের ফ্রেন্ডকে তুই বলছেন। তাহলে আমাদেরকে কেন নয়?’
‘তুমাগের ফ্রেন্ড আমার স্পিশাল, ভালোবাইসা হেরে আমি তুই কইরা কই।’ বলল আসমিনা, ‘আমার কাছে কী হেলেপ লাগবো?’
আলিয়া ঘটনার বিবরণ আবার একবার বলতে হলো হাসীবকে। তদন্ত করতে গিয়ে ওরা বুঝতে পেরেছে- কোনো প্রফেশনাল কিলারকে দিয়ে খুনটা করা হয়েছে। বিবরণ বলা শেষে হাসীব বলল, ‘সেই কিলারকে খুঁজে বের করতে আমরা আপনার সহযোগিতা চাইতে এসেছি।’
‘পারুম, আমি হেলেপ করতে পারুম।’ বলল আসমিনা, ‘তয় আমারে ইকটু সময় দিওন লাগবো। তুমার কেসের আর কুনো তারিক কি পড়ছে?’
‘আমার লইয়ার এখনো কিছু জানায়নি আমাকে। দেরীই হবে হয়তো।’ বলল হাসীব, ‘কেমন সময় লাগতে পারে, আসমিনা আপু?’
‘কম করে হইলেও এক সপ্তা তো লাগবোই।’ বলল আসমিনা, ‘আমি আমার পোলাপান লাগামু, তুমারে কিছু টেকা পয়সা খরচ করন লাগবো।’
‘টাকা পয়সার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না আসমিনা আপু।’ বলল ঈশান, ‘তুমি শুধু কিলারের খবর এনে দাও।’
‘দিমু। তয় একডা কথা দিওন লাগবো।’ বলল আসমিনা, ‘খবর যে আমি আইনা দিছি, হেই কথা কাক পক্ষিতেও যেন টের না পায়।’
‘কী যে বলো আসমিনা আপু!’ বলল হাসীব, ‘তোমাকে তো আমরা চিনিই না। তাহলে, এইসব কথা অন্য কেউ কীভাবে জানবে?’
‘আরেহ্ বাহ্, তুমি তো দেখতাছি আমগো লাইনের মোত কইরা কথা কইতাছো!’ বলল আসমিনা, ‘আমার লগে কাম করবা নাকি?’
দুই বন্ধুর দিকে একবার করে তাকালো হাসীব। ওর পরিবর্তে গিয়াসউদ্দিন বলল, ‘তোমার কাজ তুমি নির্বিঘ্নে করো, আমাদের শুধু ঐ কিলারের খোঁজ পেলেই হবে। তুমি কাজ শুরু করে দাও, টাকা তোমার এ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। অনুমতি দিলে আজ আমরা যেতে পারি?’
‘অহনি যাইবা মানে, বন্ধুগেরে লইয়া আইছো- খাওয়া দাওয়া না কইরা যাইতে পারবা না!’
ওদেরকে খাওয়ায়ে তারপরেই ছাড়লো আসমিনা। (দ্বাদশ পর্বে চলমান)