সহযাত্রীনী | থ্রিলার ফিকশন | নবম পর্ব

২৪ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

সিইও এবং দপ্তর বিহীন মন্ত্রী মহাশয়ের নাতি ইয়াসিন যাহেরের এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলো ঈশানকে।
কীভাবে কোন উপায়ে ইয়াসিন যাহেরের এ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়, দুইদিন আগে সেটা নিয়েই আলাপ করছিল দুই বন্ধু। ওরা দুই বন্ধুই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। দুজন শেয়ারে একটা সফটওয়্যার ফার্মও খুলেছে। এই বিষয়টাকেই এ্যাপয়েন্ট পেতে কাজে লাগাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো হাসীব। সে বলল, ‘তরুণ একজন বিজনেসম্যান। প্রযুক্তির দিকে নিশ্চয় আগ্রহ থাকবে।’
জবাবে ঈশান বলল, ‘থাকতে পারে।’
‘তার বিজনেস গ্রুপে প্রযুক্তি পণ্যের বিজনেসও আছে।’ বলল হাসীব, ‘আমাদের ওটিটি এ্যাপসটা তো প্রায় কমপ্লিট আছে তাই না?’
‘আছে, কিন্তু একটু ফিনিশিং টাচ দরকার।’ বলল ঈশান, ‘তোর ঝামেলা নিয়ে তো আমরা ব্যস্ত। এদিকে তো আমরা সময়ই দিতে পারছি না।’
‘সময় মতো ফিনিশিং টাচ দেবো আমরা। এ্যাপ লউঞ্চ করতে আমরা একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো।’ বলল হাসীব, ‘অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবে ইয়াসিন যাহের।’
‘রাজি হবে?’
‘আমরা রাজি করাতে যাবো বলেই এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিবো।’ বলল হাসীব, ‘তখনই আলিয়ার বিষয়ে কথাও বলবো?’
‘এক কাজে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে, আরেক কাজ করতে গেলে ব্যাটা যদি ক্ষেপে যায়?’ বলল ঈশান, ‘ক্ষেপে গিয়ে যদি বডিগার্ডকে গুলি করার হুকুম দেয়, তখন কী করবি?’
‘গুলি করার প্রয়োজন হলে, বড় বড় লোকেরা সরাসরি তা করে না বন্ধু- গোপনে করে।’ বলল হাসীব, ‘এ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগ কর।’
যোগাযোগ করে অবশেষে আগামীকাল সন্ধ্যার পর এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছে ঈশান। দেশের বাহিরে ছিল ইয়াসিন যাহের। দেশে ফিরলে তার পিএস তাকে জানায়- একটা সফটওয়্যার ফার্মের দুজন প্রতিনিধি, তাদের তৈরি একটা এ্যাপ নিয়ে ইয়াসিন যাহেরের সাথে কথা বলতে চায়। হাসীবের অনুমান ঠিক ছিল। প্রযুক্তির প্রতি বিশেষ একটা আগ্রহ আছে ইয়াসিন যাহেরের। সে প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে অনুমতি দিয়েছে তার পিএসকে।
সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্রিস্টল আই গ্রুপের কর্পোরেট অফিসের কনফারেন্স রুমে। পিএস রুমলী আর দুজন সিকিউরিটি গার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছিল ইয়াসিন যাহের। একেবারে সঠিক সময় মতো উপস্থিত হলো হাসীব আর ঈশান। রুমলি ওদেরকে কনফারেন্স রুমে নিয়ে আসলো। নিজ বসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। একে অপরকে দেখলো ওরা। সবাই সবার সম বয়সী।
পরিচিত শেষ করে নিয়ে, নিজেদের ওটিটি এ্যাপ সম্পর্কে ব্রিফ করলো হাসীব। সে জানালো, ওদের প্রত্যেকটা কন্টেন্ট ইউজারদের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকবে। শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে সবাই কন্টেন্ট দেখতে পারবে। অবশ্য ইউজারদেরকে নিজ নিজ প্রোফাইল তৈরি করে নিতে হবে। কোনো রকম সাবস্ক্রিপশন ফি বহন করতে হবে না। পর্যায়ক্রমে এ্যাপ আপগ্রেডের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা যুক্ত করা হবে।
এ্যাপটা লউঞ্চ করার দিন একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হবে। সেই অনুষ্ঠানে হাসীব ঈশানের ফার্ম ইয়াসিন যাহেরকে প্রধান অতিথি হিসেবে পেতে চায়। ইয়াসিন যাহের খুবই আনন্দিত হয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হতে ইচ্ছে প্রকাশ করলো। বলল, ‘ডেট টাইম আর ভেন্যু ঠিক করে আমাকে জানাবেন। এমন একটা ইভেন্টে থাকতে পারলে ভালো লাগবে আমার।’
‘আপনার সম্মতি পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত স্যার!’ বলল ঈশান, ‘আপনি যদি স্যার অনুমতি দেন, তাহলে আমার ফ্রেন্ডের একটা সমস্যার কথা জানাতাম আপনাকে?’
দুই বন্ধুকে আরেকবার আলাদা আলাদা করে দেখলো ইয়াসিন যাহের। বলল, ‘কী ধরনের সমস্যা?’
‘সমস্যাটা হলো স্যার, আমার বন্ধুর মাথার উপরে একটা মেয়ের হত্যার অভিযোগ ঝুলে আছে।’ বলল ঈশান, ‘অথচ মেয়েটাকে সে আগে কোনো দিন দেখেইনি। পুলিশ মেয়েটাকে ওর বউ বানিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা করে দিয়েছে। মেয়েটা স্যার আপনার অফিসেরই একজন অফিসার।’
‘আলিয়া রায়হানা!’ বলল ইয়াসিন যাহের। হাসীবের দিকে তাকালো, ‘আপনিই তাহলে সেই ভদ্রলোক? তাহের আজিজ আমাকে ঘটনা বলেছে। শুনেছি, পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্তকারী কোনো অফিসার এখনো আমার সাথে কথা বলতে আসেনি।’
‘আমি কথা বলতে এসেছি স্যার।’ বলল হাসীব, ‘নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আমি পার্সোনালি ইনভেস্টিগেট করছি। আলিয়ার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল স্যার?’
জবাব দেয়ার আগে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পিএস রুমলীর দিকে একবার তাকালো ইয়াসিন যাহের। হাসীবের দিকে ফিরলো। বলল, ‘শুধু আলিয়া নয়, সব পার্সোনেলের সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। বোর্ড মিটিংয়ের দিন আমি এই অফিসে আসি, সেই দিনই সবার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। নিজের কাজে খুবই ডিসেন্ট একটা মেয়ে ছিল আলিয়া।’
‘শুরু থেকেই কি সে এ্যাডমিন পোস্টে জব করে আসছিল স্যার?’
‘না। অন্য পোস্টে ছিল। কাজের প্রতি তার ডেডিকেশন আর ডিটারমিনেশন দেখে তাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে।’
‘মিথিলা নামে আপনার কোনো স্টাফকে চেনেন স্যার আপনি?’
‘অবশ্যই।’
‘স্যার, শুনেছি আলিয়াকে আপনার অফিসে জবের জন্য মিথিলা নাকি রিকমেন্ড করেছিল?’
‘করতে পারে, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো এইচআরএম ডিপার্টমেন্ট দেখে।’
কনফারেন্স রুমের দরজায় নক হলো। পিএস রুমলী বের হয়ে গেলো। কয়েক মুহুর্ত পর ফিরে আসলো। ইয়াসিন যাহেরের সামনে কোনো একটা ডকুমেন্টস রাখলো। ডকুমেন্টসের উপর চোখ বুলালো ইয়াসিন যাহের। একে অপরের দিকে তাকালো হাসীব আর ঈশান। ওদের দিকে তাকিয়ে ইয়াসিন যাহের বলল, ‘আমার একটা পিস্তল হারিয়ে গেছে। লাইসেন্সড। এটা সেটার জিডি’র কপি। দেশের বাহিরে ছিলাম। এটা আজই আমার হাতে এসে পৌছালো।’
‘পিস্তলটা কি স্যার ইউএস নাইনএমএম এমনাইন-পিয়েট্রা বেরেটা-সিক্স ফাইভ ফোর নাইন জিরো মডেলের?’
‘হ্যাঁ, আপনি কীভাবে জানলেন?’
‘এই পিস্তল দিয়েই আপনার এমপ্লয়িকে গুলি করা হয়েছে।’ বলল হাসীব, ‘কিন্তু আপনার পিস্তলের সিরিয়াল নম্বর নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।’
‘কী বলছেন, আমাকেও তো ফাঁসানোর একটা অপচেষ্টা মনে হচ্ছে!’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘পিবিআই তদন্ত করছে বলে আমি এদিকটা নিয়ে চিন্তা করিনি।’
‘পিস্তল আপনি সাধারণত কোথায় রাখেন স্যার?’
‘আমি দেশে থাকলে পিস্তলটা সব সময় আমার গাড়িতেই থাকে।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘দেশের বাহিরে যখন থাকি, তখন সেটা আমার বেডরুমে থাকে।’
‘আপনি দেশে থাকতেই পিস্তলটা চুরি হয়েছে নাকি দেশের বাহিরে যাওয়ার পর?’
‘দেশে থাকতে চুরি হয়নি, আমি নিজ হাতে পিস্তল আমার বেডরুমের লকারে রেখে গেছি।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘অত্যন্ত গোপন একটা লকার- কোনো চোরের সেটা জানার কথা নয়।’
‘ম্যাডাম ছাড়া অন্য কারো কি আপনার বেডরুমে যাওয়ার অনুমতি আছে স্যার?’
‘হ্যাঁ, বাসায় মেইড যারা আছে তারা তো বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার বেডরুমে আসা-যাওয়া করেই।’
‘তাদের মধ্যে কারো চুরি করার সম্ভাবনা আছে বলে কি মনে করেন?’
‘না, তাদের কারো পক্ষে আমার পিস্তল চুরি করা সম্ভব নয়।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘তারা তো কেউ জানেই না আমি পিস্তল কোথায় রাখি।’
তাদের সাথে কথা বলতে পারলে অনুমান করা সহজ হতো হাসীবের। ইয়াসিন যাহেরের ঘরের অবস্থান এবং পরিবেশ দেখতে পারলে- সবচেয়ে বেশি ভালো হতো। সেটা তো হাসীবের পক্ষে সম্ভব নয়। বেডরুম দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়াটাও অশোভন দেখায়। সেইসব সুবিধা ক্ষমতাবলে আব্দুল গফুর নিয়ে নিবে। সে নিলেও তা হাসীবের পক্ষেই যাবে বলে ওর ধারণা। অন্তত প্রমাণ হবে হাসীব পিস্তল চুরির সাথে জড়িত নয়। অথবা পিস্তল চুরির ঘটনা ইয়াসিন যাহেরের সাজানো ঘটনাও হতে পারে। ওকে ফাঁসানোর জন্য পিস্তল চুরি করে কেউ সিরিয়াল নম্বর নষ্ট করে দিবে কেন? সরাসরি তার বেডরুম থেকে পিস্তল চুরি করা কি সহজ কোনো কাজ নাকি? দেশে তার অনুপস্থিতিতে পিস্তলটা চুরি হয়েছে- সবকিছুর পেছনে ইয়াসিন যাহেরের বউয়ের কোনো ভূমিকা নেই তো? এমনও তো হতে পারে- আলিয়া আর ইয়াসিন যাহেরের মধ্যে গোপন কোনো সম্পর্ক ছিল? গোপন সেই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে- ওর বউই হয়তো সরিয়ে দিয়েছে আলিয়াকে? তাহলে আলিয়ার গর্ভে ভ্রূণটা দিলো কে? কারো না কারো সাথে তো আলিয়ার গোপন কোনো সম্পর্ক ছিলই। ইয়াসিন যাহেরের সাথে সেই সম্পর্ক তৈরির সুযোগ আসলে, আলিয়া কেন সেই সুযোগ হাতছাড়া করবে কেন? প্রচুর ধন সম্পত্তিওয়ালাদের বেডরুম একটা থাকে না- বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য বেডরুম থাকে। ইয়াসিন যাহেরের সেইসব বেডরুমের খবর বের করাও তো চাট্টিখানি কথা নয়।
সেইসব নিয়ে এখানে চিন্তাভাবনা করা যাবে না। অন্যভাবে প্ল্যান সাজাতে হবে। আপাতত ইয়াসিন যাহেরের সর্বশেষ কথার ধারাবাহিকতায়, হাসীব জিজ্ঞেস করলো, ‘অফিসের কোনো এমপ্লয়ি কি স্যার কোনো প্রয়োজনে আপনার বাসায় যায়?’
‘অনেক সময় অনেকেরই যাওয়ার প্রয়োজন হয়।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘আমার অনুপস্থিতিতে বাসায় কারো যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’
‘ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে সিএও’র দায়িত্ব কে পালন করেন স্যার?’ বলল হাসীব, ‘আপনার দাদা আমাদের মন্ত্রী মহোদয় নাকি আপনার বাবা?’’
‘তাদের কেউই না, তারা দুজনেই পলিটিক্স নিয়ে ব্যস্ত।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর একজন ডিরেক্টর হিসেবে ইমার্জেন্সি কোনো ইস্যুতে সেই দায়িত্ব পালন করেন আপনাদের ম্যাডাম।’
অর্থাৎ ইয়াসিন যাহেরের বউ। ইয়াসিন যাহের এবার বিদেশ গেলে কোনো ইমার্জেন্সি ইস্যু তৈরি হয়েছিল কি না- তা জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ নাই। সঠিক জবাব পাওয়া যাবে না। ইস্যু তৈরি হলেও ইয়াসিন যাহের তা স্বীকারই করবে না। অন্যভাবে প্ল্যান করে সেইসব তথ্য বের করে নিয়ে আসতে হবে। সেই প্ল্যান করার দিকেই এখন বেশি ফোকাস করা দরকার। হাসীব বলল, ‘আমরা অনুষ্ঠানের ডেট টাইম আর ভেন্যু ঠিক করে আপনাকে জানাবো স্যার। আজ যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা উঠতে চাই।’
‘হ্যাঁ প্লিজ।’ বলল ইয়াসিন যাহের, ‘যখন যে পরিস্থিতিই হোক, কথা যখন দিয়েছি- আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে যাবো।’
অনুমতি পেয়ে বন্ধুকে সাথে নিয়ে কনফারেন্স রুম থেকে বের হলো হাসীব। লিফটে উঠে জি বাটন চাপলো। লিফট নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। ঈশান বলল, ‘কথা শেষ না করেই চলে আসলি মনে হয়?’
‘আর কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলও না।’ বলল হাসীব, ‘যেটুকু তথ্য পেয়েছি তা থেকেই অন্য প্ল্যান করতে হবে।’
‘অন্য কী প্ল্যান করবি?’
‘পিস্তল চোরকে বের করতে হবে।’ বলল হাসীব, ‘পিস্তল চোর হতে পারে ইয়াসিন যাহেরের বউ, কিংবা হতে পারে তার বাড়ির কোনো মেইড, কিংবা হতে পারে তার অফিসের কোনো এমপ্লয়ি।’
‘আবার পিস্তল চুরির ঘটনা সাজানোও হতে পারে।’ বলল ঈশান, ‘ঘটনা যেটাই হোক- কোনো প্রফেশনালকে দিয়ে আলিয়াকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
‘আমারো সেটাই ধারণা।’ বলল হাসীব, ‘তা না হলে অতো অল্প সময়ের মধ্যে কাউকে মেরে, পালিয়া যাওয়া সাধারণ কারো পক্ষে সম্ভব নয়।’
‘ইয়াসিন যাহেরের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারলে, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।’
‘সেটা আমাদেরকে করতে হবে না- আব্দুল গফুর করবে।’ বলল হাসীব, ‘আমরা পিস্তল চোর ধরার প্ল্যান করি। চল।’
গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে লিফট থেমে গেছে। দরজা খুলে গেলো। রাস্তার বিপরীত পাশে ওরা গাড়ি পার্ক করে রেখে এসেছিল ওরা। লিফট থেকে বের হয়ে ওরা সরাসরি গাড়িতে এসে বসলো। ঈশান গাড়ি স্টার্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রচন্ড গরম হওয়ায় জানালার গ্লাস নামিয়ে দিলো হাসীব। ওর জানালার ঠিক পাশে একটা স্কুটি এসে দাঁড়ালো। স্কুটিতে বোরখা পড়া এক রমনী বসে আছে। আপাদমস্তক উদ্ভট কাপড়চোপড়ে আবৃত সে। ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে বলল, ‘হ্যালো, বয়েস…’
হাসীব ঈশান দুজনেই রমনীর দিকে তাকালো। হাসীব জানতে চাইলো, ‘কে আপনি?’
‘মনোহরিণী রাজকন্যা।’
‘আরেহ্ আপনি!’ বলল হাসীব, ‘কয়েক দিন ধরে আপনাকে মেসেঞ্জারে পাচ্ছি না। আপনাকে খুব দরকার ছিল!’
‘আমার প্রোফাইল ডিএ্যাক্টিভেটেড। আমার লিংক পিবিআইকে দেয়া তোমদের উচিৎ হয়নি। তারা আমার প্রোফাইল হ্যাক করার চেষ্টা করছে।’ বলল মনোহরিণী রাজকন্যা, ‘নারীকে তো পুরুষের প্রয়োজন হবেই। আগামীকাল রাত পৌনে এগারোটায়- রেইনবো রেস্ট এ্যাণ্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব- সাক্ষাৎ হবে তোমদের সাথে। পিবিআইয়ের লোকেরা তোমাদের পেছনে রয়েছে। দাঁড়াতে পারছি না। বাই। ক্লাবে ঢোকার পাসকোড- ম্যাডাম ফুলির বাড়ি কোথায়?’
যেমন হঠাৎ এসেছিল তেমনই হঠাৎ চলে গেলো রমনী। প্রোফাইল ডিএক্টিভেটেড থাকায় ওরা যোগাযোগ করতে পারেনি। তাহলে আজ ওরা ইয়াসিন যাহেরের সাথে কথা বলতে এসেছিল তা এই মেয়ে জানলো কী করে? নিশ্চয় সে হাসীব আর ঈশানকে নিয়মিত ফলো করে। অথবা ফলো করার জন্য লোক সেট করেছে। কিন্তু কেন সে ওদেরকে ফলো করবে? হাসীব ফেসবুকে পোস্ট না করলে সে কীভাবে যোগাযোগ করতো? ফেসবুকে হাসীবের পোস্ট না দেখলেও হয়তো সে যোগাযোগ করতো। এই মেয়ে নিশ্চয় কিছু না কিছু জানে।
মেয়েটা চলে যাওয়ার পর, ঈশান বলল, ‘কন্ঠটা কিন্তু আমার খুব পরিচিত লাগছিল বন্ধু, মনে হয় কোথাও যেন শুনেছি।’
‘আমারো।’ বলল হাসীব, ‘আমি তোর চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছি। আমার মনে হয়েছে, খুব কাছে থেকে ওর সাথে আমি কথা বলেছি!’
‘গুগলে সার্চ কর।’ বলল ঈশান, ‘রেইনবো রেষ্ট এ্যাণ্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবটা কোথায় দেখ।’
গুগল সার্চ করে হাসীব জানতে পারলো, ক্লাবটা মূলত মদ খাওয়ার একটা বার। দিনের বেলা ওখানে স্বাভাবিক রেষ্টরন্টের কাজ চলে। রাত হলে চলে রেষ্ট এ্যাণ্ড রিক্রিয়েশন। ওখানে রাত পৌনে এগারোটায় সাক্ষাৎ করতে বলে গেলো মনোহরিণী রাজকন্যা। কিন্তু ওদের পেছনে আব্দুল গফুর লোক লাগিয়ে রেখেছে- সেই লোকদেরকে ওরা পিছু ছাড়াবে কী করে? ছাড়ানোর উপায় একটা তো বের করতেই হবে। তা না হলে, পিছু নিয়ে ঐ বারে গিয়ে ঝামেলা করতে পারে আব্দুল গফুর। (দশম পর্বে চলমান)।