সহযাত্রীনী | থ্রিলার ফিকশন | চতুর্থ পর্ব

২৪ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

জেলা জজ আদালত। সামনের বেঞ্চে বসে থাকা জজের বাম দিকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে হাসীব। ওর বিপরীত দিকে সাক্ষীর কাঠগড়া ফাঁকা। ওর ডিফেন্স লইয়ার ব্যারিস্টার নিম্নি সূবর্ণা আদালতে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকতে বলেছে ওকে। কাজিনের কাছে হাসীবের কথা শুনে ওর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিল নিম্নি সূবর্ণা। 
নিম্নি সূবর্ণার কাছে কোনো কথা গোপন করেনি হাসীব। বিস্তারিত শোনার পর হাসীবকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল নিম্নি সূবর্ণা। সব প্রশ্নের ঠিকঠিক জবাব দিয়েছিল হাসীব। আজ আদালতে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ওর জীবনে নতুন একটা অভিজ্ঞতা। কথা শেষ করে নিম্নি সূবর্ণা চলে যাওয়ার সময়, ওকে আশ্চর্যান্বিত করে দিয়ে- নিজে থেকেই একটা সেলফি তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল।
হাতুড়িটা হাতে নিয়ে পরপর তিনবার ঘা মারলেন জজ। বললেন, ‘অর্ডার… অর্ডার… অর্ডার… প্রসিকিউশন, আদালতের কার্যক্রম শুরু করুন।’
পাবলিক প্রসিকিউটর কিছুটা সিনিয়র ভদ্রলোক। পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে বয়স হতে পারে তাঁর। তিনি নিজ চেয়ার থেকে উঠে কিছুটা সামনে এগিয়ে আসলেন। নিজের বয়ান শুরু করলেন। একহাতে হাসীবকে দেখিয়ে বললেন, ‘মহামান্য আদালত, এই ভদ্রলোক খুবই চাতুরতার সাথে প্ল্যান করে একজন নারীকে হত্যা করেছেন। সেই নারীর বয়স আনুমানিক পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। পোস্টমর্টেম এবং ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মেয়েটার বুকে একই জায়গায় পরপর চারটি গুলি করা হয়েছে। ভিকটিম স্পটেই মৃত্যু বরণ করেন। এফআইআরএ ভিক্টিমের পরিচয় অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে…’
এই পর্যায়ে এসে পাবলিক প্রসিকিউটরকে বাধা দিলেন জজ। জিজ্ঞেস করলেন, ‘আসামী যাকে হত্যা করেছেন তাঁর পরিচয় অজ্ঞাত হবে কেন? সাসপেক্টকে কি ক্রাইম সিন থেকে গ্রেফতার করা হয়নি?’
‘তাঁকে ক্রাইম সিন থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে মহামান্য আদালত।’ বললেন পাবলিক প্রসিকিউটর, ‘সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার-ইন-চার্জ তাঁকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করলেও, তিনি ভিক্টিমের নাম পরিচয় বলেননি। অথচ, সাসপেক্টের মোবাইল ফোনে ভিক্টিমের সাথে তাঁর অন্তরঙ্গভাবে তোলা ছবি পাওয়া গেছে। তা থেকে অনুমান করা যায়, ভিক্টিম এই সাসপেক্টের স্ত্রী…’
ব্যারিস্টার নিম্নি সূবর্ণার অবজেকশনে পাবলিক প্রসিকিউটর থেমে গেলেন। মৃত সেই মেয়েটাকে হাসীবের স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করতে শুনে, নিজের ডিফেন্স লইয়ারের দিকে তাকালো হাসীব। হাতের ইশারায় ওকে শান্ত থাকতে ইঙ্গিত করলো নিম্নি সূবর্ণা। নিজের চেয়ার থেকে উঠলো সে। বলল, ‘অবজেকশন মহামান্য আদালত…’
‘অবজেকশন ওভার রুলড।’
নিম্নি সূবর্ণার অবজেকশন নাকচ করে দিলেন জজ। বললেন, ‘প্রসিকিউশনের বক্তব্য শেষ হলে তুমি তোমার বয়ান করবে নিন্মি। বসো।’
‘ধন্যবাদ মহামান্য আদালত…’
নিজের চেয়ারে বসলো নিম্নি সূবর্ণা। পাবলিক প্রসিকিউটরের দিকে তাকালেন জজ। নিজের বক্তব্য চলমান রাখলেন পাবলিক প্রসিকিউটর, ‘সাসপেক্টের দাবি, মেয়েটিকে তিনি আগে কখনো দেখেননি। কিন্তু দুজনের অন্তরঙ্গভাবে তোলা ছবি দেখে অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে- তাঁরা দুজন স্বামী-স্ত্রী।’
হাসীবের মোবাইল ফোন থেকে নেয়া তিনটা ছবি প্রিন্ট আউট করা হয়েছে। নিজ ডেস্কে রাখা ছবিগুলো নিয়ে আসলেন পাবলিক প্রসিকিউটর। জজের বেঞ্চের সামনে বসে থাকা বেঞ্চ সহকারীর হাতে দিলেন। বেঞ্চ সহকারী ছবিগুলো জজের হাতে দিলো। পর্যায়ক্রমে তিনটা ছবিই দেখলেন জজ।
‘ছবিগুলো সরাসরি প্রিন্ট আউট করা হয়েছে মহামান্য আদালত।’ বললেন পাবলিক প্রসিকিউটর, ‘কোনো ধরনের এডিটিং টাচ করা হয়নি।’
এভিডেন্স প্যাকেটের ভেতরে রাখা পিস্তলটা নিয়ে আসলেন পাবলিক প্রসিকিউটর। বললেন, ‘এই পিস্তল দিয়ে ভিক্টিমকে পরপর চারটি গুলি করা হয়েছে মহামান্য আদালত, ব্যালেস্টিক রিপোর্ট অনুযায়ী বুলেটগুলো এই পিস্তলেরই। মহামান্য আদালতের অনুমতি পেলে, আমি সাসপেক্টকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাই।’
‘ডিফেন্স কাউন্সিলের বক্তব্য শোনার পর প্রশ্ন করবেন। আপনি বসুন।’ বললেন জজ, ‘নিম্নি, তুমি তো হাইকোর্টের একজন লইয়ার। জেলা আদালতে তোমাকে দেখে আমি সত্যিই আশ্চর্যান্বিত!’
নিম্নি সূবর্ণা দাঁড়ালো। সামনের দিকে এগিয়ে আসলো। বলল, ‘সাসপেক্ট আমার কাজিনের অন্যতম ঘনিষ্ট বন্ধু মহামান্য আদালত। কেসটা সম্পর্কে কাজিনের কাছে শুনে, আমি নিজে এসে সাসপেক্টের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। বিস্তারিত শুনেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, সাসপেক্ট সম্পূর্ণভাবে পরিস্থিতির স্বীকার। সেই জন্যই কেসটা লড়তে আমি নিজেই চলে এসেছি।’
‘তোমার সাথে পূর্ব পরিচয় থেকে আমি জানি, বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকলে তুমি সেই কেস হাতে নাও না।’ বললেন জজ, ‘তুমি আসাতে ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। তুমি তোমার বক্তব্য পেশ করতে পারো।’
‘আমার ক্লায়েন্ট জনাব কারীমুদ্দিন হাসীব একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি সেদিন ব্যক্তিগত কাজে নিজের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘ফেরার পথে ভিক্টিম তাঁর কাছে লিফট চান। হাইওয়েতে একটা মেয়ে বিপদে পড়েছে দেখে, আমার ক্লায়েন্ট মেয়েটাকে লিফট দেন। কথা বলতে বলতে আসার পথে আমার ক্লায়েন্ট গাড়ি থামিয়ে, প্রাকৃতিক কার্য সম্পন্ন করতে যান। সাড়ে তিন থেকে চার মিনিট পর ফিরে এসে তিনি মেয়েটার ডেডবডি আবিষ্কার করেন। তিনি তাঁর সহযাত্রীনীর নাম পরিচয় কিছুই জেনে নেয়ার সুযোগ পাননি। মেয়েটি আমার ক্লায়েন্টের স্ত্রী হওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
এই পর্যায়ে জজ জিজ্ঞেস প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে এই ছবিগুলোর ব্যাপারে তুমি কী বলবে?’
‘ছবিগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন মহামান্য আদালত, ওগুলো সেলফি।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘পরিচিত অপরিচিতদের সাথে আমার ক্লায়েন্টের সেলফি তোলার একটা হবি আছে। সেই হবি থেকেই তিনি তাঁর সহযাত্রীনীর সাথে এই সেলফিগুলো তুলেছিলেন?’
‘অপরিচিত একজন নারী তোমার ক্লায়েন্টের সাথে এমন অন্তরঙ্গভাবে সেলফি কেন তুলবে?’
‘এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মহামান্য আদালত। মেয়েটা আসলে খুশি হয়ে এমনভাবে সেলফিটা তুলেছেন।’
‘খুশি হয়ে ব্যাপারটা কী রকম?’
দুই হাতে হাসীবের দিকে ইঙ্গিত করলো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘আমার ক্লায়েন্টকে দেখেই তো বুঝতে পারছেন মহামান্য আদালত, তিনি একজন সুদর্শন যুবক। এমন সুদর্শন যুবক যদি কোনো মেয়েকে সুন্দরী বলে সম্বোধন করে, তাহলে সেই মেয়ে খুশি হয়ে যেতে বাধ্য। সেই খুশির ফলাফল হলো এই সেলফি। ক্লায়েন্টের মোবাইল ফোন আমিও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি মহামান্য আদালত। অসংখ্য সেলফি আছে তাঁর মোবাইল ফোনে। স্বাভাবিকভাবেই অনেক মেয়েদের সাথেও আছে। এখন সবগুলো মেয়েকে যদি আমরা আমার ক্লায়েন্টের বউ মনে করি, তাহলে তিনি তো সার্বজনীন হাজবেন্ড হয়ে যাবেন।’
আদালতে হাসির একটা রোল পড়ে গেলো। হাসি থামাতে হাতুড়ির ঘা মারলেন জজ। বললেন, ‘অর্ডার… অর্ডার… সাইলেন্ট ইন দ্যা কোর্ট।’
‘এমনকি মহামান্য আদালত…’ ফিরে গিয়ে এ্যাসিস্ট্যান্টের কাছ থেকে নিজের মোবাইল ফোন নিয়ে আসলো নিম্নি সূবর্ণা। ফটো এ্যালবাম থেকে একটা সেলফি ওপেন করলো। জজের দিকে ডিসপ্লে ধরলো। বলল, ‘... ক্লায়েন্টের সাথে আমার নিজেরও একটা সেলফি আছে।’
নিজের চেয়ার থেকে উঠে আসলেন পাবলিক প্রসিকিউটর। বললেন, ‘আপনার ক্লায়েন্ট কি আপনাকেও সুন্দরী বলেছিলেন?’
আদালতে আবারো হাসির রোল উঠলো। হাতুড়ির ঘা মেরে সবার হাসি বন্ধ করলেন জজ। হাসিমুখে পাবলিক প্রসিকিউটরের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘একেবারে কারেক্ট একটা কথা বলেছেন মাননীয় প্রসিকিউটর মহাশয়। বিপদের মধ্যে থেকেও ক্লায়েন্ট আমাকে সুন্দরী বলে সম্বোধন করেছিলেন। সেই খুশিতেই তো আমি তাঁর সাথে সেলফিটা তুলে ফেলেছি!’
বেকুব হয়ে যাওয়ার মতো একটা দৃষ্টিতে নিম্নির দিকে তাকিয়ে আছে হাসীব। সে কখন এই ব্যারিস্টারকে সুন্দরী বলেছে? কথাবার্তা শেষ করে চলে যাওয়ার আগে, সে নিজেই তো ক্যামেরা অন করে সেলফি তুললো। তারপর চলে গেলো। বুঝতে পেরেছে হাসীব, আদালতে এসে একটা প্যাঁচ মারবে বলেই সেলফিটা তুলেছে সে। ওরেহ্ সুন্দরী রে! কী কৌশলটায় না করেছে!
‘আজ বাসায় গিয়ে ভাবিকে মিষ্টি করে একবার সুন্দরী বলবেন, দেখবেন ভাবি খুব খুশি হবে!’ বলল নিম্নি সূবর্ণা। জজের দিকে তাকালো। বলল, ‘মহামান্য আদালত, আপনার অনুমতি পেলে আমি সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার-ইন-চার্জকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাই।’
‘অনুমতি প্রদান করা হলো।’
অফিসার-ইন-চার্জ নুমা আদালতে উপস্থিত ছিল। জজের নির্দেশনা পেয়ে সে এসে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ালো। মাথা থেকে ক্যাপ খুললো। জজের দিকে তাকিয়ে সম্মান সূচক মাথা নোয়ালো। ডিফেন্স লইয়ারের দিকে তাকালো। 
নিম্নি সূবর্ণা জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কি আমার ক্লায়েন্টকে সরাসরি গুলি করতে দেখেছেন?’
‘এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন?’ পাল্টা প্রশ্ন করলো নুমা, ‘পুলিশ কি নিজে চোখে অপরাধীকে গুলি করতে দেখে?’
‘অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে আপনি আমার ক্লায়েন্টকে অপরাধী বলতে পারেন না।’ বলল নিম্নি, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন নয়, হ্যাঁ অথবা না বলে আমার প্রশ্নের জবাব দিন।’
নুমা বলল, ‘না।’
‘সরাসরি গুলি চালাতে দেখেননি। আপনি কি খবর পেয়ে ক্রাইম সিনে গিয়েছিলেন, নাকি নিজে থেকেই গিয়েছিলেন?’
‘খবর পেয়েও না, নিজে থেকেও না।’ বলল নুমা, ‘আমি রুটিন টহলে বের হয়েছিলাম। হাইওয়ের পাশে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে- তিনি কোনো সমস্যায় পড়েছেন কি না তা জানতে দাঁড়িয়েছিলাম।’
‘তারপর আপনি যা যা দেখলেন তা মহামান্য আদালতকে সংক্ষেপে বলুন প্লিজ।’
জজের দিকে তাকালো নুমা। সে ক্রাইম সিনে যাওয়ার পর থেকে, হাসীবকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসে লকআপে ঢুকানো পর্যন্ত- সবকিছু জানালো। ওর বর্ণনা শেষ হলে নিম্নি সূবর্ণা বলল, ‘মার্ডার ওয়েপনে আমার ক্লায়েন্টের ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া গেছে?’
‘ফরেনসিক আর ব্যালেস্টিক রিপোর্টের একটা করে কপি তো আপনাকে সরবরাহ করা হয়েছে।’
‘হ্যাঁ অথবা না।’
‘না।’
জজের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘পয়েন্ট টু বি নোটেড মহামান্য আদালত, মার্ডার ওয়েপনে আমার ক্লায়েন্টের ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি।’ আবার নুমার দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘মার্ডার ওয়েপন ইউএস নাইনএমএম এমনাইন-পিয়েট্রা বেরেটা-সিক্স ফাইভ ফোর নাইন জিরো মডেলের একটা পিস্তল। পিস্তলটার মালিকানা কিংবা কার নামে লাইসেন্স- তা নিশ্চিত করা হয়েছে?’
‘না।’
‘কেন করা হয়নি?’
‘পিস্তলটার সিরিয়াল নম্বর নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সেটা বৈধ নাকি অবৈধ তা যাচাই করে, মালিকানা নিশ্চিত করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’ বলল নুমা, ‘সেই জন্য সময় নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন।’
জজের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘অফিসার-ইন-চার্জ নুমা একেবারে কারেক্ট কথা বলেছেন মহামান্য আদালত। সময় নিয়ে কেসটার আরো অধিকতর তদন্ত করা প্রয়োজন। মার্ডার ওয়েপনে আমার ক্লায়েন্টের ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি। এইআইআর এ ভিক্টিমের পরিচয় অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমার ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে কোনো রকম আই উইটনেস নেই। সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার ক্লায়েন্টের জামিনের আবেদন করছি।’
এতক্ষণ পর আবারও নিজের চেয়ার থেকে উঠে আসলেন পাবলিক প্রসিকিউটর। বললেন, ‘অবজেকশন মহামান্য আদালত…’
‘সাসটেইন।’
‘ধন্যবাদ মহামান্য আদালত।’ বললেন পাবলিক প্রসিকিউটর, ‘জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে, সাসপেক্টকে রিমান্ডে পাঠিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার নির্দেশনা প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি।’
দুই পক্ষের শুনানি শুনে সাথে সাথেই কোনো সিদ্ধান্ত দিলেন না জজ। কিছু লেখালেখি করলেন। লেখালেখি শেষ করে বললেন, ‘একান্ন হাজার টাকার মুচলেকায় ব্যারিস্টার নিম্নি সূবর্ণার জিম্মাতে জনাব কারীমুদ্দিন হাসীবের জামিন মঞ্জুর করা হলো। তাঁর এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ক্রেডিট কার্ড তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জমা রাখতে হবে। মার্ডার ওয়েপনের মালিকানা, অজ্ঞাত পরিচয়ের মেয়েটির পরিচয় নিশ্চিত এবং হত্যাকাণ্ডের কারণ ও মূল অপরাধীকে সনাক্ত করতে, আদালত এই কেসের তদন্তভার পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তর করার নির্দেশনা দিচ্ছে। তদন্ত কালীন সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে জনাব কারীমুদ্দিন হাসীব বাধ্য থাকবেন। পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত আদালত মুলতবি করা হলো।’
নিজ বেঞ্চ থেকে জজ উঠে চলে গেলেন। নিম্নি সূবর্ণা আর পাবলিক প্রসিকিউটর নিজ নিজ কাগজপত্র আর দলিল দস্তাবেজ সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে। আসামীর কাঠগড়া থেকে বের হয়ে আসলো হাসীব। জামিন হওয়ায় ওকে কেউ বাধা দিলো না। ওর দিকে একবার তাকিয়ে আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো অফিসার-ইন-চার্জ নুমা। ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো হাসীব। বলল, ‘ম্যাম…’
নুমা দাঁড়ালো। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে হাসীবের দিকে তাকালো। হাসীব বলল, ‘এখন তো আমরা আর অপরিচিত নেই।’
‘হ্যাঁ। তো?’
‘আসুন না একটা সেলফি হয়ে যাক।’
‘গেট লস্ট!’ বলে আদালত থেকে বের হয়ে গেলো নুমা।
হাসতে হাসতে হাসীবের কাছে আসলো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘হাসীব সাহেব, আপনার এই হবিটা ত্যাগ করা উচিৎ। দেখেছেন তো, কতবড় বিপদে পড়েছেন? অভিযোগ কিন্তু এখনো আপনার মাথার উপরে রয়েই গেছে। নির্দোষ প্রমাণিত হোননি এখনো।’
‘নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এই কেসে আমি নিজেই আপনার এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবো।’
‘কী করতে চাইছেন আপনি?’
‘আমি আমার মতো করে তদন্ত করতে চাই।’
‘তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়া হয়েছে, তারা হাইলি ট্রেইনড।’ বলল নিম্নি সূবর্ণা, ‘কাজটা তাঁদেরকেই করতে দিন।’
‘পিবিআই তাদের মতো তদন্ত করুক ম্যাম।’ বলল হাসীব, ‘আপনি একজন ব্যস্ত লইয়ার। আমার কেসে আলাদাভাবে চিন্তা ভাবনা করার সময় হয়তো বের করতে পারবেন না। আমি সময় মতো সব তথ্য সরবরাহ করবো। আমার অলিখিত বউয়ের পরিচয় জানতে চাই আমি।’
‘ঠিক আছে, যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের সাপোর্ট প্রয়োজন হলে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাবেন।’ হাসীবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঈশানের দিকে তাকালো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘তোর বন্ধুকে বাসায় নিয়ে যা। বেচারার বউটা তো মরেই গেলো, বাসায় নিয়ে গিয়ে বিশ্রাম করতে বল।’
‘ম্যাম আপনিও…’
স্বশব্দে হেসে উঠলো নিম্নি সূবর্ণা। বলল, ‘ইটস জাস্ট ফান। লেটস গো।’
হাসীবের গাড়িটা এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি। গাড়িটা ফরেনসিক টিমের হাতে এখনো বন্দি আছে। কখন সেটা হাসীব ফেরৎ পাবে তা এখনো জানানো হয়নি। আদালত থেকে বের হয়ে এসে নিম্নি সূবর্ণা নিজের গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিলো। হাসীব চেপে বসলো ঈশানের বাইকের পেছনে। (পঞ্চম পর্বে চলমান)।