চতুর্থ পরিচ্ছেদ

১১ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

অন্য আর দশটা প্রেম কাহিনির মতোই, আয়িশা আর মুমিতের প্রেমের গল্পটাও গতানুগতিক এবং খুবই সাধারণ। কোনো ছেলে পছন্দ করে তা বুঝতে পারলে, মেয়েরা যা করে- ছেলেটাকে একেবারেই পাত্তা দিতে চায় না। বিশাল কিছু একটা হয়ে গেছে ধরে নিয়ে, ভাব নিয়ে চলে। আয়িশাও তো একটা মেয়ে- ওর মধ্যে তেমন কোনো বৈশিষ্ট্য থাকা কি আশ্চর্যের কোনো বিষয়?
আয়িশার সাথে মুমিতের মুমিতের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল একটা দৈব্য দূর্ঘটনায়- ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে। সেই ওয়াশরুম ছিল প্রত্যন্ত এক গ্রামের একটা বাড়িতে। কলেজের বান্ধবীর মল্লিকার সাথে বেড়াতে গিয়েছিল আয়িশা- বান্ধবীর বড় ভাইয়ের বাচ্চার সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠানে। মল্লিকাদের এলাকায় নাকি সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান, বিয়ের মতো জাক জমক পূর্ণ অনুষ্ঠান করে উৎযাপন করা হয়। কথাটা শুনেই সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছিল আয়িশা। বাবা-মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে নিয়েছিল। মল্লিকাকে খুব ভালো ভাবে চিনেন আয়িশার বাবা-মা। ওর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে তাঁরা একবাক্যে অনুমতি দিয়ে দিলেন। 
বান্ধবীর গ্রামের বাড়ি পৌঁছে সত্যিই চমৎকৃত হয়ে গেলো আয়িশা। সন্ধ্যা হলেই পুরো বাড়ি আলোকসজ্জায় ঝলমলিয়ে উঠলো। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা সাউন্ড সিস্টেমের সাথে উদ্দাম নৃত্যে মেতে উঠলো। পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতে এলাহি কাণ্ডকারখানা দেখে, আয়িশা আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলো। 
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, মল্লিকার সাথে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় চুন দিয়ে, আল্পনা আঁকার কাজে লেগে পড়লো আয়িশা। সুন্নতে খৎনার মূল অনুষ্ঠান আগামীকাল। আজ বাড়িটাকে আরও কিছুটা রাঙ্গিয়ে তোলার চেষ্টা করে যেতে থাকলো ওরা। আয়িশা নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে, বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা বান্ধবী, তোর পিচ্চি ভাতিজাকে মুসলমান বানাতে, এতো টাকা-পয়সা খরচের মানেটা কি বল তো?’
‘আমিও জানি না।’ আল্পনা আঁকতে আঁকতে বান্ধবীর প্রশ্নের জবাবে বলল মল্লিকা, ‘জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি, আমাদের এলাকায় এই অনুষ্ঠান করা হয়। কোনো অতিকথন প্রচলিত থাকলে থাকতে পারে। আমারও জানা নাই।’
বান্ধবীর জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারলো না আয়িশা। বান্ধবীর বাপকে ধরতে হবে। তিনি নিশ্চয় কিছু জেনে থাকবেন। পরে কোনো এক সময় ধরলেও চলবে। আপাতত ওর একবার ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার। অনেকক্ষণ ধরেই প্রকৃতির চাপে অতিষ্ট হয়ে আছে সে। বাড়ির এক কোনে গোসলখানা, পাশাপাশি টয়লেট আছে। গ্রামের বাড়ির টয়লেট, গোসলখানা হলেও- শহরের বাড়ির টয়লেটের মতোই অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা আছে। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে টয়লেটে এসে ঢুকে পড়লো আয়িশা। বাড়িতে আপাতত কোনো পুরুষ লোক নাই। সবাই বাড়ির বাহিরে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। মল্লিকাও সামনেই আছে। সুতরাং কোনো রকম চিন্তাভাবনা না করে, টয়লেটের দরজা ভেতর থেকে না লাগিয়েই কাজ শুরু করে দিলো আয়িশা। কাজ প্রায় শেষের দিকে, ঠিক সেই সময় ওর মনে হলো- টয়লেটের দরজা কেউ খুলছে। দরজা সামান্য ফাঁকা হতেই আয়িশা প্রায় চিৎকার দিয়ে বলল, ‘এ্যাই, কোন অসভ্য রে, টয়লেটের দরজা খুলছে!’
জবাবে আয়িশা অপরিচিত একটা পুরুষ কন্ঠে শুনতে পেলো, ‘আউউচ! কী আনসেন্সিবল রে বাবা, দরজাটা ভেতর থেকে আটকিয়ে নেবে না!’
আয়িশা ভেবেছিল, ওর বান্ধবী মল্লিকা এসে শয়তানি করে দরজা খুলছে। কিন্তু এই অপরিচিত কন্ঠের পুরুষ লোকটা আবার কে? ঠিক করে এই সময়েই ওকে কোথায় থেকে আসা লাগলো? অবশিষ্ট কাজ সেরে কাপড় চোপর ঠিক করে নিয়ে বের হলো আয়িশা। সে বের হতেই টয়লেটের দিকে দ্রুত বেগে ছুটে গেলো, সিনেমার হিরোদের মতো দেখতে সুদর্শন এক যুবক। আয়িশার পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়ার সময়, যুবকের বাতাস এসে যেন আয়িশাকে এলোমেলো করে দিলো। আয়িশার মতো সুন্দরী একটা মেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে কোনো কেয়ারই করলো না ছেলেটা!
মল্লিকাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলো না আয়িশা। আল্পনা আঁকতে আঁকতে সব রেখে কোথাও যেন চলে গেছে। কিছুটা দূরে সরে এসে দাঁড়ালো আয়িশা। কয়েক মিনিট পর ছেলেটা টয়লেট থেকে বের হলো। ওকে যেতে হলে আয়িশাকে পাশ কেটে যেতে হবে। চেহারায় একটা মারমুখী ভাব ফুটিয়ে তুললো আয়িশা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো ছেলেটার দিকে। এবারও সে আয়িশাকে একেবারে তোয়াক্কায় করলো না! ওকে পাশ কেটে চলেই গেলো। না, চলে যায়নি সে। পেছনে পা চালিয়ে আয়িশার সামনা-সামনি আসলো। বলল, ‘কোনো সমস্যা?’
আয়িশা শুধু, ‘অসভ্য পুরুষ লোক!’ বলে, লাটিমের মতো বণ করে ঘুরে চলেই যাচ্ছি। ওদিকে ছেলেটা, ‘এই যে, হ্যালো হ্যালো হ্যালো…’ বলতে বলতে এসে আয়িশার সামনে দাঁড়িয়ে, ওর গতিরোধ করলো। বলল, ‘তুমিই তাহলে সেই আনসেন্সিবল ওমেন?’
‘ওমেন!’ আয়িশা যেন আকাশ থেকে পড়লো। বলল, ‘এক্সকিউজ মি, আমাকে কোন এ্যাঙ্গেল থেকে ওমেন ওমেন লাগে?’
‘ওকে ওকে, ওমেন না। ইউ আর আ ভীয়িলি ফিমেল!’ বলল ছেলেটা, ‘টয়লেটে ঢুকলে যে দরজা ভেতর থেকে আটকিয়ে নিতে হয়, সেই সেন্সটাও কি তোমার মধ্যে নাই?’
ভুলটা আয়িশারই। মনে মনে তা স্বীকার করে নিতেই হলো আয়িশাকে। কিন্তু মেয়েরা তো অতো সহজে ভুল স্বীকার করে না। চট করে প্রসঙ্গে পরিবর্তন করলো সে। বলল, ‘কে আপনি?’
‘আমি মুমিত। তুমি?’ 
নিজের নাম এই ছেলেকে জানানোর কোনো ইচ্ছেই নাই আয়িশার। অন্য কিছু বলতে যাচ্ছিলো সে। বাড়ির ভেতরে আসলো মল্লিকার ভাই। সাথে মুমিতের সমবয়সী আরেক যুবক- তাকেও চিনে না আয়িশা। ওদের সাথে মল্লিকাকেও দেখা গেলো। ওরা আসার কারণেই হয়তো মল্লিকা বাহিরে গিয়েছিল। ওর কোলে পিচ্চি ভাতিজা। এই পিচ্চিকেই আগামীকাল সুন্নতে খৎনার মাধ্যমে মুসলমান বানানো হবে।
মুমিতের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো আয়িশা। বান্ধবীর ভাতিজার গাল টিপে আদর করে দিলো। 
সাথের যুবক আর মুমিতকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো মল্লিকার ভাই। আয়িশা জানতে চাইলো, ‘কে রে এই মাল দুইটা?’
‘একটা আমার বিয়াই, মানে ভাইয়ার শালা- কারিব।’ বলল মল্লিকা, ‘আরেকটা কারিবের ফ্রেন্ড। আজই প্রথম দেখা হলো। নাম জানি না।’
‘আমি জানি!’
‘তুই কী জানিস?’
‘তোর বিয়াইয়ের ফ্রেন্ডের নাম।’
‘তুই কীভাবে ওর নাম জানিস, তোরা কি পূর্ব পরিচিত?’
‘কয়েক মিনিট আগে থেকে পূর্ব পরিচিত।’
‘মানে কি?’
ওয়াশরুম ঘটনার বর্ণনা দিলো আয়িশা। সব শুনে অনর্থক হাসিতে গলে পড়তে লাগলো মল্লিকা। ওর হাসির সাথে যুক্ত হলো আয়িশা। হাসি থামিয়ে মল্লিকা বলল, ‘তোর কোনটাকে পছন্দ হইছে আমাকে বল। সেটার সাথেই তোকে সেটআপ করে দিবো।’
‘এ্যাই ধ্যাৎ, কী পছন্দ অপছন্দ… আল্পনা আঁকার কাজ শেষ করি চল।’
আবারও আল্পনা আঁকার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো দুই বান্ধবী। এক সময় আয়িশা লক্ষ্য করলো- দুই তলার কোনের দিকের একটা ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে মুমিত, আর কারিব। চা খাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে গল্পালাপ করছে ওরা। কী গল্প করছে স্বাভাবিকভাবেই তা আঙ্গিনা থেকে শুনতে পাচ্ছে না আয়িশা। ওরা গল্পালাপ করছে। নিজেদের মধ্যে অনর্থক হাসাহাসি করছে। গল্পালাপের ফাঁকে ফোঁকরে মুমিত বারবার তাকাচ্ছে আয়িশার দিকে- আয়িশা তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। কাজের সময় মেয়েদের কাপড় চোপর এমনিতেই ঠিকঠাকমতো থাকে না। মুমিতের তাকানো লক্ষ্য করে, ওড়নায় নিজেকে পরিপাটি করে ঢেকে নিলো আয়িশা। বান্ধবীকে বলল, ‘তোর বিয়াই আর তার বন্ধু বারবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। ওড়না ঠিকঠাক করে পর।’
কৌশলে মল্লিকাও লক্ষ্য করলো ওদেরকে। ঠিকই বলেছে আয়িশা। মল্লিকা দাঁড়ালো। প্রথমে নিজের ওড়না ঠিকঠাক করে নিলো। বিয়াইয়ের উদ্দেশ্যে প্রায় ধমক দিয়ে বলল, ‘এই বজ্জাৎ বেটাচ্ছেলেরা, আমরা দুইটা মেয়ে এখানে রোদে পুড়ে আল্পনা আঁকছি আর…’
মল্লিকাকে কথা শেষ করতে দিলো না কারিব। বলল, ‘হেল্প লাগবে, আসবো? একসাথে রোদে পুড়তে পারতাম আর কি!’
‘কোনো দরকার নাই তোমার রোদে পোড়ার।’ বলল মল্লিকা, ‘ঘরে গিয়ে রেস্ট করো, যাও।’
বিয়াইনের সাথে কথা বলছে কারিব। মুমিত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়িশার দিকে। ওর সাথে মুমিতের প্রথম সাক্ষাতের ঘটনা কারিব ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছে। সে আবার বলল, ‘তোমার বান্ধবীর হেল্প লাগবে নাকি জিজ্ঞেস করো, আমার ফ্রেন্ড কিন্তু আল্পনা আঁকতে খুব ভালো হেল্প করতে পারে।’
আয়িশার দিকে তাকালো মল্লিকা। আল্পনা আঁকছে আর মিটমিট করে হাসছে আয়িশা। ওকে দেখে নিয়ে, কোমরে দুই হাত রেখে মারমুখী ভঙ্গিতে দাঁড়ালো মল্লিকা। বলল, ‘তুমি একটা বজ্জাৎ, তোমার ফ্রেন্ড আরও বড় বজ্জাৎ। তোমাদেরকে আমি ঘরে গিয়ে রেস্ট করতে বলেছি!’
‘আরেহ্ যাচ্ছি যাচ্ছি, অতো রাগ দেখানোর কী আছে, আশ্চর্য ব্যাপার তো!’
মুমিতকে টেনে নিয়ে ঘরের ভেতর গেলো কারিব। বারান্দা থেকে ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু ঘরের জানালা তো আছে। ঘরে এসে বিছানায় জানালার পাশেই বসলো ওরা। জানালার পর্দা এমনভাবে টেনে রাখলো যাতে, খুব সহজেই ওদেরকে দেখা যায়, কিন্তু ওরা ঘরের ভেতরে দেখতে না পায়।
দিন গড়িয়ে বিকেল হলো। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো। আগামীকালের মুসলমানীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাড়িতে অতিথি সমাগম হয়েছে। নিকট কিংবা দূর- সব ধরনের আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। তারা সবাই চলেও এসেছে। অতিথি সমাগমে বাড়িটা একেবারে গমগম করছে। বোনের বাড়ির সকল আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা পূর্ব পরিচিত- বন্ধুকে সাথে নিয়ে তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলো কারিব। যারা পূর্ব পরিচিত নয়, তাদের সাথে পরিচিত হলো, বন্ধুকে পরিচয় করালো সে। পর্যায়ক্রমিকভাবে, ওরা দুই বান্ধবী মল্লিকা আয়িশার কাছে আসলো। 
বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয় পরিজনেরা গোলাকৃতি হয়ে বসে গল্প করছে, আনন্দ করছে, আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ির বাহিরে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা উদ্দাম তালে নাচানাচি করছে। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে আছে। এখানেই পাওয়া গেলো মল্লিকা আয়িশাকে। নৃত্যরত ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে, চেয়ার দিয়ে তৈরি সার্কেলে বসে আছে ওরা। অন্য আর কেউ নাই সেখানে। দুই বন্ধু এসে- আয়িশার পাশের চেয়ারে বসলো মুমিত, মল্লিকার পাশের চেয়ারে বসলো কারিব। বলল, ‘এই বিয়াইন, চলো নাচি।’
‘ইইইশ! আসছে আমার নৃত্যশিল্পী!’ বলল মল্লিকা, ‘তোমার নাচের যে কতো দম- তা তো তোমার বড় ভাইয়ের বিয়েতেই দেখা হয়ে গেছে আমার।’
‘সবাই এদিকে তাকাও।’ বলল মুমিত। সে মোবাইল ফোন বের করে সেলফি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাইকে ওর দিকে তাকাতে আহ্বান করলো, ‘একটা সেলফি হয়ে যাক।’
‘কী হচ্ছে কি এসব, আজব তো!’ বলে ওড়নায় নিজের মুখমণ্ডল আড়াল করলো আয়িশা।
‘তুলুক না, মুখ ঢাকছিস কেন?’ বলল মল্লিকা, ‘অনুষ্ঠানে বেড়াতে এসে সবাই একসাথে দুই একটা সেলফি তুললে সমস্যা কি?’
বান্ধবীর কথায় ওড়নার আড়াল থেকে নিজের মুখচ্ছবি বের করলো আয়িশা। মুমিতের ক্যামেরার দিকে তাকালো। ছবি তোলার ভঙ্গিমায় বসলো। একটা সেলফি তোলার কথা বললেও, একের পর এক পটাপট সেলফি তুলেই যাচ্ছে মুমিত। ওদিকে কারিব ফিসফিস করে মল্লিকাকে বলল, ‘বিয়াইন, একটা জরুরী কথা বলার আছে। একটু সাইডে আসবে?’
মল্লিকার সাথে কারিবের জরুরী কোনো কথা নাই। অনেক বছর আগে থেকে ওরা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। কথা যা ছিল তা সম্পর্কের শুরুর দিকে ওরা সেরে নিয়েছে। কারিব নিশ্চয় তার বন্ধুকে নিয়ে কোনো কথা বলতে চায়। মল্লিকাও ফিসফিস করে বলল, ‘তুমি যাও আমি আসছি।’
পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করলো কারিব। কাউকে কল করলো। কথা বলতে বলতে দাঁড়ালো। ইশারায় সবাইকে বসতে বলে, আড়ালে কোথাও চলে গেলো। 
‘এই তোরা কিছুক্ষণ কথা বল।’ বান্ধবীর উদ্দেশ্যে বলল মল্লিকা, ‘আমি ভেতর থেকে আসছি। যাবো আর আসবো।’
মুমিতের কাছে একা রেখে বান্ধবী চলে যাওয়াতে, কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো আয়িশা। ওকে একা পেয়ে মুমিত বলল, ‘জিজ্ঞেস করেছি সেই কখন। নামটা কিন্তু এখনও বলোনি।’
জবাবে আয়িশা বলল, ‘আপনাকে আমি আমার নাম বলবো কেন?’
‘ডাকার জন্য। এখানে যতক্ষণ আছি ততক্ষণ ডাকার জন্য নামটা তো জানা দরকার, তাই না?’
‘এই বাড়িতে আসা অতিথিদের মধ্যে কতো কতো সুন্দরী মেয়ে- ঠিক করে আমাকেই কেন আপনার ডাকা লাগবে?’
‘এখানে আসার পর প্রথমেই পরিচয় হয়েছে তোমার সাথে।’ বলল মুমিত, ‘সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে তো শুধু থাকলেই হবে না। কারো না কারো মধ্যে নজর কারার মতো কিছু থাকতে হবে।’
জবাবে কিছু না বলে বাঁকা চোখে মুমিতের দিকে তাকালো আয়িশা। দেখা সাক্ষাতের এখনও চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়নি, অথচ আয়িশার মধ্যে নজর কারার মতো কী এমন পেয়েছে এই ছেলে? আয়িশার সাথে সে ফ্লার্ট করছে না তো? খুব বেশি হলে সাত দিনের জন্য বান্ধবীর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে আয়িশা। তারপরেই চলে যাবে নিজের স্থায়ী ঠিকানায়। এই ছেলে হয়তো কাল কিংবা পরশুদিন চলে যাবে। সে কোথায় থাকে, কী করে- সেইসবের কিছুই জানে না আয়িশা। পুনরায় আবার কখনো তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। আয়িশা নাকি এই এই ছেলের নজর কেরেছে! কয়েক ঘন্টা, কিংবা দুই এক দিনের টাইম পাসের জন্যই হয়তো- এই ছেলে ফ্লার্ট করছে আয়িশার সাথে। কোনো ভাবেই এর ফ্লার্টিংয়ের ফাঁদে পা দিতে পারবে না আয়িশা।
‘কী রে আয়িশা, ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন- প্রেম হয়ে গেছে?’ বলল মল্লিকা। কখন সে ফিরে এসেছে, আয়িশা লক্ষ্যই করেনি। 
ওদিকে স্বশব্দে হেসে উঠলো মুমিত। মারমুখী ভঙ্গিতে বান্ধবীর দিকে তাকালো আয়িশা। মল্লিকা কিছুই বুঝতে পারলো না। আয়িশা বলল, ‘দিলি তো আমার সর্বনাশটা করে!’
‘আমি আবার তোর সর্বনাশ কীভাবে করলাম?’ বলল মল্লিকা। বসলো বান্ধবীর পাশে। আবার বলল, ‘তোর কোন সর্বনাশ করার ক্ষমতা আমি রাখি?’
‘ফিরে এসে আমার নাম ধরে কথা বলার কী দরকার ছিল তোর?’
এবার আবারও মুমিতের হাসি শুনতে পেলো মল্লিকা। চেহারায় বিরক্তি ফুটিয়ে ফুটিয়ে মুমিতের দিকে তাকালো আয়িশা। বিষয়টা এবার পরিষ্কার বুঝে নিলো মল্লিকা। বলল, ‘এখনও যে তোদের মধ্যে নামটায় জানাজানি হয়নি, সেটা আমি কীভাবে বুঝবো?’
মল্লিকাকে আড়ালে ডেকে নিয়েছিল কারিব। বন্ধুর ভালোলাগার বিষয় নিয়ে কথা বলতে। আয়িশাকে নাকি প্রথম দেখাতে ভালো লেগে গেছে মুমিতের। কিন্তু আয়িশার অন্য কোনো ভালোলাগা আছে কি না, তা জানতে বন্ধুকে আড়ালে পাঠিয়েছে তার বিয়াইনের সাথে। মল্লিকার জানামতে, আয়িশার বিশেষভাবে ভালো লাগার কেউ নাই। কারো সাথে আয়িশার রিলেশনের কথাও জানে না মল্লিকা। আয়িশার সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে মল্লিকার সহযোগিতা চেয়েছে মুমিত। যদি ভালো লাগে তাহলে আয়িশাকে নিজেই জয় করে নিতে মুমিতের। মল্লিকা কোনো রকম সহযোগিতা করতে পারবে না। ভালো লাগার নারীকে নিজে জয় করে নেয়ার মধ্যে যে আনন্দ, অন্য কেউ সেটআপ করে দিলে সেই আনন্দ পাবে না মুমিত। মল্লিকা খুব বেশি হলে, আয়িশার মোবাইল ফোন নম্বরটা শুধু দিতে পারে।