পঞ্চম পরিচ্ছেদ

১১ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

শেষ দিনের পরীক্ষা শেষে বের হলো আয়িশা। দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার আজ শেষ দিন ছিল। হল থেকে বের হয়ে ক্লাসমেট বান্ধবী ও বন্ধুদের সাথে- কার কেমন পরীক্ষা হলো তা নিয়ে আলোচনা করলো। সব বন্ধু, বান্ধবীরা নিজ নিজ পরীক্ষা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। সবাই অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছে। আলাপ শেষে সবাই যে যার মতো নিজ নিজ আবাসস্থলে ফিরলো।
আপাতত একটা সপ্তাহ পড়ার টেবিলের ধারেকাছেও যাবে না আয়িশা। পরীক্ষার আগে চোখ থেকে ঘুম সরতে চাইতো না। শেষ পরীক্ষা দিয়ে এসে আয়িশা ভাবলো- আজ শান্তি মতো ঘুমাবে। কিন্তু আজ ওর চোখ থেকে ঘুম উধাও। অন্ধকার ঘরে বিছানায় শুয়ে মোবাইল ফোনে ফেসবুক স্ক্রলিং করছে, আর ঘুমের জন্য অপেক্ষা করছে আয়িশা। রাত প্রায় পৌনে এগারোটা বাজে। আয়িশার মোবাইল ফোনে কল আসলো। কল আসার সাথে সাথেই উপর থেকে বারটা নেমে আসলো। সেখানে লেখা ভেসে উঠলো- কল ফ্রম মুমিত।
আয়িশার মোবাইল ফোনে নম্বর সেইভ করা আছে তা মুমিত জানে না। মুমিতের কাছে নম্বর আছে আয়িশা তা জানে। মল্লিকা বলেছে। আয়িশার অনুমতি নিয়েই ওর নম্বর মুমিতকে দিয়েছে মল্লিকা। সেই সুযোগে মুমিতের নম্বরটা নিয়ে নিজের ফোনে সেইভ করে রেখেছে আয়িশা। ওর প্রতি যে আগ্রহটা দেখেছে, তাতে আরও অনেক আগেই মুমিতের কল আশা করেছিল সে। কিন্তু মুমিত কল করেনি। নম্বর পাওয়ার পরেও কল করতে মুমিত কেন দেরি করেছে, তা আয়িশা জানে না। সে প্রথমবার মুমিতের কল রিসিভ করলো না। কয়েক মুহুর্ত পর দ্বিতীয় বার কল আসলো। এইবার কল কেটে যাওয়ার একেবারে আগের মুহুর্তে সে কল রিসিভ করলো। কলটা যেন কোনো আননোন নম্বর থেকে এসেছে- তেমন একটা ভাব নিলো সে। বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম…’
‘তোমার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।’ সালামের জবাবে বলল মুমিত, ‘শেষ দিনের এক্সাম ভালো হয়েছে তো? কথায় আছে না, শেষ ভালো যার সব ভালো তার!’
অর্থাৎ, যোগাযোগ না করলেও আয়িশার সব খবরই রাখে মুমিত। কোনো রকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গেলো না আয়িশা। মুমিতকেই না চেনার ভান করলো। বলল, ‘আমার এতো বড় শুভাকাঙ্ক্ষী আবার কোথায় থেকে আসলো, মাঝরাতে ফোন করে এক্সামের ভালো মন্দের খবর নিচ্ছে! কে আপনি?’
‘অন্য দশটা মেয়ের মতোই তুমিও গতানুগতিক।’
‘কীভাবে?’
‘এই যে, আমাকে না চেনার ভান করছো!’
মুমিত যাতে বুঝতে না পারে, তেমনভাবে মুখ টিপে নিঃশব্দে হাসলো আয়িশা। বলল, ‘কোন রাজ্যের রাজার রাজপুত্তুর আপনি যে, আপনাকে আমার চিনতেই হবে?’
‘কোনো রাজ্যের রাজার রাজপুত্তুর না।’ বলল মুমিত, ‘মুদি দোকানদার বাপের একমাত্র ছেলে- মুমিত।’
‘ওহ্ আপনি! এ্যাই, আপনি আমার নম্বর পেলেন কী করে?’
‘ভালো লাগার কারো অনেক কিছু পাওয়া সম্ভব!’ বলল মুমিত, ‘আর এইটা তো মোবাইল ফোন নম্বর- ম্যানেজ করা কঠিন কিছু?’
‘আমাকে ভালো লাগে আপনার- কেন?’
‘সেটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবো?’ 
‘ভালো লাগার কাউকে ইনডিউসড করতে ছেলেরা নিজেকে, নিজের বাবাকে, পরিবারের অন্যান্যদেরকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়েে উপস্থাপন করতে চায়।’ বলল আয়িশা, ‘আপনি আপনার বাবাকে মুদি দোকানদার হিসেবে উপস্থাপন করছেন?’
‘আমার বাবা যা, তা-ই তো বলবো!’ বলল মুমিত, ‘যারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে চায়, তাদের মধ্যে ভালোলাগা থাকে না। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে অসৎ।’
‘আপনার কী মনে হয়, একজন মুদি দোকানদারের ছেলের প্রেমে পড়বে একটা মেয়ে?’
‘ভালোলাগাকে জয় করতে আমি চেষ্টা করে যাবো।’ বলল মুমিত, ‘পারলে তো পারলাম। না পারলে- ধরে নেবো, আকাশের উপর থেকে কোনো রকম সিগন্যাল ছিল না!’
‘নিজেকে আপনার উপস্থাপনের স্টাইলটা আমার ভালো লেগেছে।’ বলল আয়িশা, ‘আমিও যে, বিশেষ বিশাল কোনো বাপের মেয়ে, তা কিন্তু না।’
‘জানি।’
অন্ধকারের মধ্যে নিজের ভ্রু-কুঁচকালো আয়িশা। কিছুটা আশ্চর্যান্বিত হলো। বলল, ‘মানে কি, কী জানেন?’
‘তোমার বাবা একটা সরকারী অফিসে, অফিস সহায়কের জব করেন, মা একজন গৃহিণী।’ বলল মুমিত, ‘বড়বোনের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর হলো। আপুর দুইটা বাচ্চা আছে। তোমার বাবা-মায়ের কোনো ছেলে সন্তান নাই…’
আয়িশা বাকহত, স্তম্ভিত। মুমিতকে থামালো সে। বলল, ‘হয়েছে হয়েছে হয়েছে! কী সর্বনাশ! আমার সম্পর্কে এতোকিছু… কেন?’
‘আমরা একদিন বাহিরে কোথাও মিট করি?’
‘এক্সকিউজ মি, আমি আপনার সাথে বাহিরে কোথাও মিট করতে যাবো কেন?’
আয়িশার কথায় কোনো রকম কর্ণপাতই করলো না মুমিত। বলল, ‘মৌচাক মার্কেটের পেছনে, আনারকলি মার্কেটের ওখানে- একটা কফি পার্লার আছে।’ কফি পার্লারের নাম জানালো মুমিত। বলল, ‘সেখানে, আগামীকাল বিকাল সাড়ে চারটায় তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করবো। এখন ঘুমাও বাবু, রাত অনেক হয়ে গেছে। শুভরাত্রি।’
‘হ্যালো হ্যালো হ্যালো…’
হ্যালো হ্যালো করেও লাভ হলো না। মুমিত কল কেটেই দিয়েছে। কী অধিকার নিয়ে কথা বলছে সে, যেন আয়িশা ওর হয়েই গেছে। আজব প্রকৃতির ব্যাপার স্যাপার। 
কথায় আছে, গাছে বরই পাকলে ছেলে-ছোঁকরারা ঢিল ছুঁড়বেই। আয়িশার দিকেও যে এতদিন ঢিল আসেনি, তা নয়। বয়স বিবেচনায় বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আয়িশা। ইদানীং হুটহাট করে বিয়ের প্রস্তাবও আসে আয়িশার বাবার কাছে। কিন্তু ওর বাবা ওকে এখনই বিয়ে দিতে ইচ্ছুক নন। মেধাবী ছাত্রী আয়িশা। ওর বাবা চান, অন্তত অনার্স পর্যন্ত পড়ালেখা সম্পন্ন করুক সে। তারপর মেয়ের বিয়ের চিন্তাভাবনা করবেন। 
ছেলে-ছোঁকরাদের ঢিল ছোঁড়ার ধারাবাহিকতায় মুমিতও একটা ঢিল ছুঁড়েছে আয়িশার দিকে। সরাসরি অবশ্য বিয়ের প্রপোজ করেনি সে। আয়িশার বাবাও তো এখনই ওকে বিয়ে দেবেন না- তাহলে?
পরের দিন, কলেজে আর গেলো না আয়িশা। পরীক্ষা শেষ- পরবর্তী বর্ষের ক্লাসে এ্যাটেণ্ড করতে ছেলে-মেয়েরা দুই একটা সপ্তাহ তো দেরি করবেই। কলেজে যাওয়ার পরিবর্তে মায়ের দৈনন্দিন কাজে সহযোগিতা করতে শুরু করলো। কাজের এক ফাঁকে বলল, ‘আম্মু, কিছু টাকা দিতে পারবা?’
‘কী করবি টাকা নিয়া?’
‘কিছু জিনিসপত্র কেনা লাগতো। টাকা যদি দাও, তাহলে বিকালে কিনতে বাইর হবো।’
মেয়েদের অনেক সময় অনেক ছোটখাটো জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়। মেয়ের সেই প্রয়োজনীয়তাটা আয়িশার মা বোঝেন। তিনি বললেন, ‘যখন যাবি, টাকা নিয়া যাস।’
মায়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে, তিনটার পরে বাসা থেকে বের হলো আয়িশা। সামনে দিয়ে একটা রিকশা যাচ্ছিলো। রিকশাওয়ালাকে থামালো সে। দরদাম ঠিক করে নিয়ে রিকশায় উঠে বসলো। রিকশাওয়ালা ওকে মৌচাক মার্কেটের সামনে নিয়ে এসে নামিয়ে দিলো। 
মার্কেটে ঢুকে কিছুক্ষণ এই দোকান সেই দোকান ঘুরলো আয়িশা। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাকাটা শেষ করলো। ততক্ষণে চারটা বেজে গেছে। মার্কেট থেকে বের হলো সে। একপাশে দাঁড়ালো। চিন্তা করছে, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে। মুমিতের বলে দেয়া কফি পার্লারটা চিনে আয়িশা। ওর কথামতো সে কি সেই কফি পার্লারে যাবে, নাকি বাসায় ফিরে যাবে? ভাবতে ভাবতে কী মনে করে, মার্কেটের পাশের গলি দিয়ে, আনারকলি মার্কেটের সামনে আসলো আয়িশা। কফি পার্লারটা আরেকটু সামনে।
সাড়ে চারটা বাজার কয়েক মিনিট আগে, কফি পার্লারটার সামনে আসলো আয়িশা। এদিক ওদিক তাকালো। দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। প্রায় সব টেবিলেই দুই একজন করে বসে আছে। সবাই অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে মুমিতকে খুঁজলো আয়িশা। কোথাও দেখতে পেলো না। সাড়ে চারটা বাজে। এই সময় তো এখানেই থাকার কথা ছিল মুমিতের।
‘পেছন দিকের ঐ খালি টেবিলটাতে বসি, চলো।’
বাম পাশ থেকে মুমিতের কথা শুনে, একেবারে চমকে উঠলো আয়িশা। ভরকে যাওয়া এক ধরনের মুখচ্ছবি নিয়ে মুমিতের দিকে তাকালো আয়িশা। ওর সুন্দর মুখের উপর এমন একটা মুখচ্ছবিতে ওকে আরও সুন্দর লাগলো মুমিতের। আয়িশা বলল, ‘আসতে বলে আপনার নিজেরই খোঁজ খবর নেই কেন?’
‘কে বলেছে খোঁজ খবর নেই?’ বলল মুমিত। আয়িশাকে সাথে নিয়ে এসে খালি টেবিলটাতে সামনা-সামনি বসলো। বলল, ‘এই যে, আমি তোমার সামনে।’
‘সামনে এসেছেন আমি আসার পর।’
‘না, তোমার আগে এসেছি আমি।’ বলল মুমিত, ‘রিকশা থেকে মার্কেটের সামনে যখন নেমেছো, তখন থেকে আমার দৃষ্টি সীমার মধ্যেই ছিলে তুমি!’
‘তারমানে আপনি আমার পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন?’
‘ওভাবে দেখো না। ভালোবেসে প্রিয়জনের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা- এভাবে দেখো।’
‘গতকাল রাতেই বলছিলেন ভালোলাগার কথা। চব্বিশ ঘণ্টা না পেরুতেই ভালোবেসে ফেলেছেন?’ বলল আয়িশা, ‘পুরুষের ভালোলাগা বোধহয় খুব দ্রুত ভালোবাসায় বিবর্তিত হয়, তাই না?’
‘কী খাবে?’
মুমিতের প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা দেখে, মনে মনে হাসলো আয়িশা। পরিচয় হওয়ার পর থেকে মুমিতের একটা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছে সে। চাপে পড়লে, কিংবা কোনো কিছু এড়াতে- তাৎক্ষণিক প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে ফেলে সে। ওর প্রশ্নের জবাবে আয়িশা বলল, ‘কফি খাওয়ারই তো ইনভাইট করেছেন। সুতরাং শুধু কফিই খাবো। অবশ্য, ঘুম নষ্ট হয় বলে কফি আমি তেমন একটা খাই না। কিন্তু আপনি ইনভাইট করেছেন, আপনার কফি খাবো।’
কফি খাওয়া শেষ করে বের হলো ওরা। অনেকটা জোর করেই আয়িশার রিকশায় উঠে পড়লো মুমিত। আসলো আয়িশাদের মহল্লার মোড় পর্যন্ত। এই পর্যন্ত এসে রিকশা থেকে নামলো মুমিত। সামনে আর গেলো না। অপরিচিত একটা ছেলের সাথে মহল্লার লোকজনেরা আয়িশাকে দেখে ফেলতে পারে। আয়িশার তাতে অনেক সমস্যায় পড়ে যেতে হবে। আর কোনো ভাবে যদি, পাশের বাসার সিসিটিভি আন্টির নজর পড়ে- তাহলে তো আরও সর্বনাশ আর কেউ ঠ্যাকাতে পারবে না। 
প্রথম দিন কারো নজরে না পড়েই বাসায় পৌঁছাতে পারলো আয়িশা। এভাবে দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন, দিনের পর দিন- আয়িশাকে পৌঁছে দিতে থাকলো মুমিত। কোনো কোনো দিন বিকেলে, বন্ধু কারিবের বাইক ধার করে আয়িশাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালো সে। ঘুরে বেড়ানো শেষে ওকে আবার ঠিকঠাকমতো পৌঁছে দিয়ে যায়। 
কোনো উপলক্ষ নেই, তবু একদিন শাড়ি পরে সেজেগুজে মুমিতের সাথে বের হলো আয়িশা। আজও বন্ধুর বাইক ধার নিয়েছে মুমিত। পেছনে আয়িশাকে বসিয়ে বাইক চালাতে চালাতে ঢাকা থেকে কতদূরে চলে এসেছে, তা লক্ষ্যই করেনি সে। আয়িশা চাইলে এক জায়গায় সে বাইক থামালো। হাইওয়ের দুই পাশে যতদূর চোখ যায় শুধু ফসলের মাঠ। ফসলের নিজ নিজ জমিতে কাজ করছে অনেক কৃষক। আয়িশা বাইক থেকে নেমে আসলো। পা থেকে জুতা খুলে রাখলো। ঘাসের উপর বসলো। বাইক পার্ক করে রেখে আসলো মুমিত। আয়িশার সামনা-সামনি বসলো। আয়িশা জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা মুমিত, তুমি কী করো?’
ভ্রু-কুঁচকালো মুমিত। বলল, ‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছো যে?’
‘আজ হঠাৎই জিজ্ঞেস করছি, কিন্তু কয়েক দিন ধরেই ভাবছি- জিজ্ঞেস করবো।’ বলল আয়িশা, ‘বলো দেখি, কী করো তুমি?’
‘কী আর করি, খাই ঘুমাই ওয়াশরুমে যাই আর তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই।’
‘কিন্তু তোমাকে আমার পেতে হবে না- একান্ত করে?’ বলল আয়িশা, ‘তুমি যদি এইসব করে বেড়াও, তোমাকে আমি পাবো কী করে? কিছু একটা কাজকর্ম তো করতে হবে, তাই না?’
আয়িশার কথায় ভিন্নতা লক্ষ্য করলো মুমিত। ওকে পাওয়ার জন্য মুমিতকে কিছু একটা করতে বলছে আয়িশা। অথচ এই মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়তে, ওর চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হয়েছে মুমিতকে। কথার মধ্যে যুক্তি আছে। মুমিতকে যদি একান্ত করে আয়িশা পেতে চায়, তাহলে অবশ্যই মুমিতকে কিছু একটা করতে হবে। তাহলেই তো আয়িশাকে পাওয়া হয়ে যাবে মুমিতের। এই কথাটায় আয়িশা কিছুটা ভিন্নভাবে ঘুরিয়ে বলেছে। কিন্তু কিছু একটা শুরু করতে গেলেও তো লাগবে টাকা। আয়িশার প্রশ্নের জবাবে মুমিত বলল, ‘তোমার পরামর্শ কি?’
‘একেবারেই প্রাথমিকভাবে কিছু একটা শুরু করার মতো একটা আইডিয়া আছে আমার কাছে।’
‘বলো দেখি, কী তোমার আইডিয়া?’
‘তুমি তো বাইক চালানোতে এক্সপার্ট!’
‘হ্যাঁ, এই একটা গুণ আমার আছে বলে আমি মনে করি।’
‘প্রাথমিকভাবে তোমার এই গুণটাকেই তুমি কাজে লাগাতে পারো।’
‘কীভাবে?’
‘ভাড়ায় বাইক চালিয়ে। ইদানীং অসংখ্য ছেলে এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে।’ বলল আয়িশা, ‘তোমার দক্ষতা আছে। কিছু একটা শুরু করতে এই দক্ষতাকেই কাজে লাগাতে হবে।’
‘বন্ধু বাইক ধার দিয়েছে তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে।’ বলল মুমিত, ‘ভাড়া খাটতে কি সে আমাকে তার বাইক দেবে?’
‘বন্ধুর বাইকের কথা তোমাকে আমি কখন বলেছি?’
‘তাহলে?’
‘তোমার নিজের বাইকের কথা বলছি আমি।’
‘মাথা খারাপ হয়েছে তোমার?’ বলল মুমিত, ‘মোটামুটি ভালো কনফিগারেশনের একটা বাইক কিনতে কতো টাকা লাগবে, তার কোনো ধারণা আছে তোমার?’
‘কোনো ভাবে টাকাটা যোগাড় করো মুমিত, প্লিইইজ!’ বলল আয়িশা, ‘আর শোনো, আমার জমানো কিছু টাকা আছে। টাকাটা আমি তোমাকে দিবো। তোমার যোগাড় করা টাকার সাথে মিলিয়ে, তুমি ভালো একটা বাইক কিনে ফেলো।’
ভালোবেসে কতটা বিশ্বাস করলে, একটা মেয়ে নিজের জমানো টাকা তার প্রেমিকের হাতে তুলে দিতে পারে? বিবেকহীন অনেক ছেলেই তার প্রেমিকার এই সরল বিশ্বাসের সুযোগ নেয়। নিজের প্রতি আয়িশার সেই বিশ্বাস মুমিত নষ্ট করলো না। ওর টাকা সে নিলো ধার হিসেবে। ওদিকে নিজের বাপকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাঁর কাছ থেকেও টাকা বের করলো মুমিত। বাইক কিনলো। কাজ শুরু করলো। প্রতিদিনের ইনকাম থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু টাকা আয়িশাকে দিলো মুমিত। ওর কাছ থেকে নেয়া টাকা পরিশোধ করে দিলো। 
অনেক যাত্রী নিজেদের প্রয়োজনে মুমিতকে ঢাকার বাহিরেও নিয়ে যায়। তেমনই এক যাত্রীকে নিয়ে গিয়ে ফেরার পথে মুমিতের সাথে দেখা হলো জুওয়াইরিয়ার।