ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

১১ জুন ২০২৪

Naoroz Bipul

মাস্টার্সে ভর্তি নিশ্চিত করে কলেজ থেকে বের হলো আয়িশা। খবরটা মুমিতকে দিতে ইচ্ছে করলো। হ্যান্ডব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বেরও করলো। কিন্তু মুমিত নাকি আজ কোনো এক ফিমেল যাত্রী নিয়ে ঢাকার বাহিরে গেছে। নিশ্চয় সে এখন রাইডিংয়ে আছে। ওকে এই মুহুর্তে বিরক্ত করা উচিৎ হবে না। কল করা থেকে বিরত থাকলো আয়িশা। আপাতত বাসায় চলে যাওয়ারই মনস্থির করলো সে। মুমিত ফিরে এসে ওকে কল করবে। তখন মাস্টার্সে ভর্তির খবরটা মুমিতকে দিলেই চলবে। অনার্স কমপ্লিট হওয়ার পর বিয়ে করতে চেয়েছিল আয়িশা। মুমিতের ইচ্ছেতে ওকে মাস্টার্সে ভর্তি হতে হলো। 
কলেজ থেকে বের হয়ে, গেট থেকে বাম দিকের ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলো আয়িশা। হঠাৎ খুব দ্রুত একটা ঘটনা ঘটলো। ওর পাশে ফুটপাতের নিচে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। গাড়িটাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো হাঁটতে থাকলো আয়িশা। গাড়ি থেকে দুজন লোক নেমে আসলো। আয়িশার কাছে এসে পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে, ওর মুখের উপর কিছু একটা চেপে ধরলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়িশা জ্ঞান হারিয়ে সেই লোকের গায়ে ঢলে পড়লো। লোক দুজন ওকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুললো।
মাথাটা প্রচন্ডভাবে ঝিমঝিম করছে আয়িশার। এতটা ভারি ভারি লাগছে যেন কেউ মাথার উপরে, একটন ওজনের পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। ক্লোরোফর্মের প্রভাব আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। চোখের পাতে টেনে খুলতে চাইছে আয়িশা। ওর সাথে প্রতিযোগিতা করে চোখের পাতা যেন বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। কয়েক বারের চেষ্টায় চোখ খুলতে পারলো। ঝাপসা দেখলো। আস্তে আস্তে ঝাপসা ভাবটা কেটে গেলো। সামনের টি-টেবিলের উপর রাখা কফির একটা মগ দেখতে পেলো সে। ধোঁয়া উঠতে দেখে বুঝতে পারলো, কফিটা বেশ গরম। মগ থেকে উঠা ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে সামনে তাকালো আয়িশা। সামনের সিঙ্গেল সোফায়, পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে অপরূপা সুন্দরী একটা মেয়ে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়িশার দিকে। ওর মনে হলো, মেয়েটা যেন ডানাকাটা একটা পরী। 
আয়িশা তাকাতেই ডানাকাটা পরীটা বলল, ‘হ্যালো আয়িশা, স্বাগতম তোমাকে। কফিটা খেয়ে নাও। মাথা ধরাটা সেরে যাবে।’
মেয়েটা ওর নামও জানে জেনে কিছুটা আশ্চর্য্যই হলো আয়িশা। অথচ সে মেয়েটাকে আগে কখনোই দেখেনি। চেনা তো অনেক পরের কথা। ওর আহবানে কফির মগটা হাতে তুলে নিলো আয়িশা। এমনিতে সে কফি তেমন একটা খায় না। এই মুহুর্তে খেতে ইচ্ছে করছিল। কফির মগে চুমুক দিলো সে। ওর কফি খাওয়া শেষ না পর্যন্ত সামনে বসা মেয়েটা কোনো কথা বলল না। আয়িশা খালি মগটা টি-টেবিলের উপর রাখলো। সময় নিয়ে কফিটা খাওয়াতে কিছুটা ভালো লাগছে আয়িশার। এখন মেয়েটার সাথে কথা বলা যেতে পারে। আয়িশা নিশ্চিত, এই মেয়েটায় ওকে তুলে নিয়ে এসেছে। কিন্ত কারণ কী? একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে কেন তুলে নিয়ে আসবে। কোনো ছেলে যদি আয়িশাকে তুলে নিয়ে আসতো, সেটা না হয় মানা যেতো। অপরূপা সুন্দরী এই মেয়েটা কি লেসবিয়ান নাকি?
মেয়েটার দিকে তাকালো আয়িশা। বলল, ‘আমি জানি না আপনি কে। কিন্তু আমার অনুমান, আপনিই আমাকে তুলে নিয়ে এসেছেন।’
‘ইন্টেজিলেন্ট মেয়ে তুমি। ঠিক অনুমান করেছো।’
‘আমি আপনার কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি যে, আমাকে এভাবে তুলে নিয়ে আসতে হবে?’ বলল আয়িশা, ‘কে আপনি?’
‘আমি জুওয়াইরিয়া।’ বলল মেয়েটা, ‘কথা বলতে বলতেই আমার পরিচয় তুমি জেনে যাবে। তুমি কি মুমিতের গার্লফ্রেন্ড?’
‘আমাদের সম্পর্কটাকে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড শব্দ দুইটা দিয়ে আমি মূল্যায়ন করতে চাই না।’ বলল আয়িশা, ‘আমরা দুইটা দেহ কিন্তু একটা প্রাণ!’
কথাটা শুনে অপলক দৃষ্টিতে কয়েক মুহুর্ত আয়িশার দিকে তাকিয়ে থাকলো জুওয়াইরিয়া। যখন বুঝলো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না, তখন একবার পলক ফেললো। আয়িশাকে দুইটা ছেলেকে দ্বারা তুলে আনিয়েছে জুওয়াইরিয়া। ওরা আয়িশার বসে থাকা সোফার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে দুইটা মেয়ে। তাদের সবার দিকে একবার করে তাকালো জুওয়াইরিয়া। বলল, ‘ও তো বাংলাদেশের মুভির ডায়লগ দেয়!’
আয়িশার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই মেয়ের মধ্যে একজন বলল, ‘মনে হয় বাংলাদেশের মুভি দেখতেই বেশি অভ্যস্ত, ম্যাম।’
আয়িশার দিকে তাকালো জুওয়াইরিয়া। বলল, ‘তোমাদের প্রাণটাকে যে বিচ্ছিন্ন করতে হবে, আয়িশা।’
‘ঠিক বুঝতে পারিনি। আরেকটু ব্যাখ্যা করতে পারো?’
‘পারি। তোমার বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসি আমি।’ বলল জুওয়াইরিয়া, ‘তুমি তো অবশ্যই জানো, বাঙ্গালী নারী প্রয়োজনে সারাদিন না খেয়ে থাকবে, তবু নিজের পুরুষটিকে অন্য কোনো নারীর সাথে শেয়ার করবে না। সুতরাং আমার জায়গা তোমাকে ছেড়ে দিতে হবে।’
‘তুমি একজন বাঙ্গালী নারী। কিন্তু আমি যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসিনি- সেটা কি তোমার মাথায় রাখা উচিৎ না?’
সত্যিই তো তাই! আয়িশা তো অসাধারণ একটা যুক্তি দিয়েছে- কথাটা তো জুওয়াইরিয়ার মাথাতেই আসেনি। বাঙ্গালী নারী হিসেবে জুওয়াইরিয়া যদি মুমিতকে অন্য নারীর সাথে শেয়ার করতে না চায়, তাহলে আয়িশা কেন করবে? ওর প্রশ্নের জবাবে জুওয়াইরিয়া বলল, ‘তাহলে?’
‘আমার জায়গায় বসার অপচেষ্টা করো না।’ বলল আয়িশা, ‘আমাদেরর সম্পর্কটা মুমিত চেয়েছে বলে, ওর চেষ্টাতে গড়ে উঠেছে। আমার ইচ্ছাই ওকে আমি ছাড়বো না। মুমিত যদি চায়, আমি নির্দ্বিধায় ওকে অন্য নারীর হাতে তুলে দিবো। সুতরাং আমাকে ছেড়ে, মুমিতকে রাজি করিয়ে আমার কাছ থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যাও।’
এবার আবারও কী ভেবে আয়িশার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো জুওয়াইরিয়া। কয়েক মুহুর্ত পর বলল, ‘কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিয়ে মুমিত তো আমার সাথে ভাগবে না। আমি ধনাঢ্য বাপের একমাত্র মেয়ে। আমাকে বিয়ে করলে মুমিত আকাশে উঠার সিঁড়ি পেয়ে যেতো- অথচ সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি, আমি আমার দেহটাকেও ওকে অফার করেছি- তারপরেও সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ওর জীবনে নাকি তোমার অনেক বড় কোনো অবদান আছে- তাই সে তোমার সাথে প্রতারণা করতে পারবে না। কী অবদান আছে ওর জীবনে তোমার?’
অনেক লম্বা করে শান্তির একটা নিঃশ্বাস টেনে নিলো আয়িশা। ছেড়ে দিলো একইভাবে। এমনভাবে নিঃশ্বাস টেনে ছেড়ে দিতে দেখে- জুওয়াইরিয়ার ভেতরে জ্বলে যেতে শুরু করলো। উঠে গিয়ে আয়িশার চুল ধরে কিছুক্ষণ আছড়াতে ইচ্ছে করলো ওর। কিন্তু সে শান্ত থাকলো। নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণে রাখলো। 
‘মুমিতের জীবনে আমি কী এমন অবদান রেখেছি, সেটা কিন্তু সত্যিই আমি বলতে পারবো না।’ বলল আয়িশা, ‘তবে, আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি। এখন তো ওকে আমার ছাড়া সম্ভবই না।’
‘কীসের এতো অহংকার তোমার, আয়িশা?’ বলল জুওয়াইরিয়া, ‘মুমিত সামান্য একটা মুদি দোকানদারের ছেলে- ওকে নিয়ে অহংকার করার তো কিছুই নাই। তুমি নিজে একটা অফিসের সামান্য একটা পিওনের মেয়ে- এখানেও তোমার অহংকার করার তো কিছুই নাই…’
‘মানুষের পেশাকে এভাবে অবমূল্যায়ন করো না, জুওয়াইরিয়া।’ জুওয়াইরিয়াকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল আয়িশা, ‘সামান্য একটা মুদি দোকানদারের ছেলের পেছনে কেন পড়ে আছো তুমি? দেশে কি তোমার জন্য ছেলের অভাব পড়ে গেছে? তোমার বাবার তো অনেক টাকা- বিদেশ থেকে ছেলে ইম্পোর্ট করো!’
জবাবে জুওয়াইরিয়া সাথে সাথেই কিছু বলল না। আয়িশার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ছেলের দিকে তাকালো। বলল, ‘এই, তোরা এখান থেকে বের হয়ে যা।’
বিনা বাক্যব্যয়ে ওরা দুজন ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। জুওয়াইরিয়ার ইশারা পেয়ে দুই মেয়ের একজন গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিয়ে আসলো। জুওয়াইরিয়া বলল, ‘তোমরা দুইজন ওর সব কাপড় চোপর ফেলো।’
চট করে দাঁড়িয়ে পড়লো আয়িশা। মেয়ে দুইটা ততক্ষণে ওর দুই পাশে চলে এসেছে। বুকের উপর দুইহাত আড়াআড়ি করে, কাঁধের উপর নিজের ওড়না চেপে ধরলো আয়িশা। জুওয়াইরিয়ার দিকে তাকালো। বলল, ‘কী অসভ্যতা হচ্ছে জুওয়াইরিয়া, কাপড় চোপর খুলে ফেলবে মানেটা কি?’
নিজেকে দেখালো জুওয়াইরিয়া। বলল, ‘আমার এই উদ্ভিন্নযৌবনা দেহসৌষ্ঠব ছেড়ে, মুমিত তোমার প্রতি কেন কেন আকৃষ্ট! তোমার শরীরে কী এমন আছে, যা আমার মধ্যে নাই? আজ সেটাই দেখতে চাই আমি।’ আয়িশার দুই পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল দুই মেয়ে। তীক্ষ্ণ কন্ঠে জুওয়াইরিয়া ওদেরকে বলল, ‘তোমাদেরকে কি আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি?’
ওরা দুইজন আয়িশার ওড়নার দুই প্রান্ত ধরলো। সেই মুহুর্তে জুওয়াইরিয়ার মোবাইল ফোনে কল আসলো। টি-টেবিলের উপর রাখা মোবাইল ফোনের দিকে তাকালো জুওয়াইরিয়া। কল করেছে মুমিত। ডিসপ্লেতে মুমিতের নাম দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো জুওয়াইরিয়ার। ওদিকে মেয়ে দুইটা ততক্ষণে আয়িশার ওড়না খুলে নিয়েছে। একজন ওর কামিজ, আরেকজন ওর সালোয়ার খোলার জন্য জবরদস্তি করছে। হাত তুলে ওদেরকে থামার ইঙ্গিত দিলো জুওয়াইরিয়া। মোবাইল ফোনটা হাতে নিলো। কল রিসিভ করলো। বলল, ‘বলো, বেইবি…’
অপরপ্রান্ত থেকে মুমিত কোনো রকম ভূমিকা করতে গেলো না। সরাসরি জানতে চাইলো, ‘আয়িশা কোথায়?’
‘সে কোথায় সেটা আমি কী করে বলবো?’
‘আয়িশার এক ফ্রেন্ড ফোন করে আমাকে জানিয়েছে, ওর কলেজের সামনে থেকে দুজন লোক ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে।’ বলল মুমিত, ‘এটা অন্য কারো নয়, তোমার কাজ। কোথায় সে?’
ওদিকে আয়িশা বুঝে ফেলেছে, জুওয়াইরিয়ার মোবাইল ফোনে কল করেছে মুমিত। চিৎকার দিলো আয়িশা। বলল, ‘মুমিইইত… মুমিইইত… আমি এখানে… জুওয়াইরিয়া আমাকে কিডন্যাপ…’
আয়িশার বাকি কথা মুমিত আর শুনতে পেলো না। কেউ ওর মুখ চেপে ধরেছে। মুমিত বলল, ‘মিথ্যে কথাটাও বললে, তুমি নাকি জানো না?’
‘রাখো তো তোমার সত্য-মিথ্যে!’ জবাবে বলল জুওয়াইরিয়া, ‘প্রেমে আর যুদ্ধে- জয়ী হওয়ার জন্য যে কোনো কিছু বৈধ।’
‘কেন এসব করছো তুমি, জুওয়াইরিয়া?’
‘তোমাকে আমার লাগবে, মুমিত।’
‘আয়িশাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলেই তুমি ভেবেছো আমাকে পাবে?’
‘আমি যদি তোমাকে না পাই, তাহলে আয়িশাকেও পেতে দিবো না।’
‘কী করবে, আমাকে মেরে ফেলবে?’
‘সেটা আমি কখনো কল্পনাও করি না। আয়িশাকেই মেরে ফেলবো!’
কল কেটে দিলো জুওয়াইরিয়া। মুমিত আবার কল করলো। জুওয়াইরিয়া কল রিসিভ করলো না। মোবাইল ফোনই সুইচ অফ করে দিলো। আয়িশার দিকে তাকালো। আয়িশার বাম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বলল, ‘ম্যাম, পিস্তল নিয়ে আসবো নাকি নাইফ?’
জুওয়াইরিয়া ভ্রু-কুঁচকালো। বলল, ‘কেন?’
‘ওকে নাকি মেরে ফেলবেন বললেন। তাহলে পিস্তল কিংবা নাইফই তো লাগবে।’
‘তোমরা দুজন ওকে নিয়ে গিয়ে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসো।’ বলল জুওয়াইরিয়া, ‘মুমিত সম্ভবত এখানে আবার ফিরে আসছে। এই শালীকে এখন আমার আর দরকার নাই। নিয়ে যাও।’
মুমিত এদিকে বারবার জুওয়াইরিয়ার নম্বরে কল করে, ওর মোবাইল ফোন বন্ধ পেলো। আয়িশাকে কেউ কিডন্যাপ করার কথা শোনার সাথে সাথেই, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু রোমেলকে কল করেছিল। ওর কাছ থেকে আয়িশার মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে ট্র‍্যাক করছিল রোমেল। কিডন্যাপাররা গাড়িতে তোলার পরপরই আয়িশার মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে দিয়েছিল। রোমেল নম্বর ট্রেস করতে পারেনি। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো মুমিত- জুওয়াইরিয়া কিডন্যাপ করে আয়িশাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে? ওর রেস্টহাউজ থেকে মুমিত যখন বের হয়, তার কিছুক্ষণ পরেই কিডন্যাপের খবর পেয়েছে সে। মুমিত ঢাকার দিকে ফিরছে, জুওয়াইরিয়ার লোকেরা আয়িশাকে নিয়ে ওর রেস্টহাউজের দিকে যাচ্ছে। হ্যাঁ, মুমিত নিশ্চিত- সেটাই ঘটেছে। যেখানে সে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখান থেকে আবারও জুওয়াইরিয়ার রেস্টহাউজের দিকে রওয়ানা দিলো। 
পথমধ্যে রোমেলের কল আসলো। আয়িশার মোবাইল ফোন নাকি সুইচ অন হয়েছে। রোমেল ওকে ট্রেস করতে পেরেছে। ঢাকার দিকে আসছে। জুওয়াইরিয়ার উদ্দেশ্য ঠিক কি, তা বুঝতে পারলো না মুমিত। আয়িশাকে নিয়ে সে ঢাকায় ফিরছে কেন? এই মুহুর্তে তা বুঝতেও গেলো না। আয়িশার নিরাপত্তা সবার আগে। রোমেলের পরামর্শে যেখানে ছিল সেখানেই অপেক্ষা করতে থাকলো মুমিত। আয়িশার মোবাইল ফোনের লোকেশ, দূরত্ব- টাইম টু টাইম আপডেট করতে থাকলো রোমেল। মুমিত ভেবেছিল, আয়িশার মোবাইল ফোন অন্য কারো মাধ্যমে ঢাকার দিকে পাঠিয়ে মুমিতকে মিসলীড করছে জুওয়াইরিয়া। কিন্তু না, জুওয়াইরিয়া তা করেনি। হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় রোমেলের দেয়া নির্দেশনা মতো একটা গাড়িকে থামানো হলো। গাড়ির ভেতর দুইজন অপরিচিত মেয়ের মাঝখানে বসে ছিল আয়িশা। মুমিতকে দেখেই ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো সে। ওর বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে বাচ্চা মেয়েদের মতো কেঁদে উঠলো। মুমিত সিদ্ধান্ত নিলো, এবার বিয়ের পর্বটা সেরে ফেলবে সে।
ওদের পরিবারের সকল সদস্যে ঐক্যমত্যে আসলো। মুমিত আর আয়িশার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেললো। বিয়ের আগে দুই পরিবার থেকে ওদের দুজনকে খুব বেশি দেখা সাক্ষাৎ  র করতে নিষেধ করা হলো। মুমিত নিজেই আয়িশার সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দিলো। আয়িশাকে একেবারে বাসর ঘরে পাওয়ার অপেক্ষা করতে থাকলো। একদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরতে, দিবাগত রাত বারোটা পেরিয়ে গেলো মুমিতের। বাসার সামনে এসে বাইক থামালো। হেলমেট খুললো। ঠিক সেই মুহুর্তে ওর সামনে অন্ধকার নেমে আসলো। ওর মাথায় কেউ কোনো ধরনের ব্যাগ, কিংবা কোনো কিছুর প্যাকেট পরিয়ে দিলো।